
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের কেন্দ্র করে একটি বড় সংঘর্ষ ও হাতাহাতির ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কোনও একটি সড়কের উপর অবস্থানরত কিছু মানুষ রয়েছেন এবং তাঁরা অপর কোনও পক্ষকে লক্ষ্য করে কিল-ঘুষি মারছেন।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে এটি ওড়িশার কটক শহরের ঘটনা। যেখানে নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন। তখন নাকি পুলিশের সামনেই বিজেপির কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষোভকারীদের উপর হামলা চালিয়ে দেয়।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "শান্ত স্নিগ্ধ ওড়িশা আজ তিলে তিলে শেষ হচ্ছে! ঘন ঘন নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলছিলো ওড়িশার কটকে, হঠাৎ পুলিশের সামনেই বিজেপির গুন্ডা বাহিনীর হামলা সেই বিক্ষোভে! এই বাংলার অতি বিপ্লবী গুলো কই? দেখে নে, এটাই তফাৎ বাংলার সাথে তোদের ডবল ইঞ্জিন সরকারের! এখানে খুব সহজেই সরকারের বিরুদ্ধাচারণ করা যায়, মুখ্যমন্ত্রীর নামে গালি গালাজ করা যায়, আমাদের শিক্ষা তোদের ডবল ইঞ্জিন এর মতো না...।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভিডিওটি ২০২৩ সালের যখন বিজেডি (বিজু জনতা দল) ওড়িশায় ক্ষমতায় ছিল। এর সঙ্গে নারী নিরাপত্তা বা কোনও বিক্ষোভকারীদের উপর হামলার কোনও সম্পর্ক নেই।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে সেগুলো খোঁজা হলে দেখা যায়, ২০২৩ সালের ১ মার্চ তেলেঙ্গানার বিআরএস পার্টির নেতা ওয়াই সতীশ রেড্ডি ওই একই ভিডিও নিজের এক্স হ্যান্ডেলে পোস্ট করেছিলেন। এর থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে ওড়িশায় বিজেপি সরকার আসার আগেই একই ঘটনা ঘটেছিল। কারণ ২০২৩ সালের মার্চ মাসে ওড়িশায় ক্ষমতায় ছিল নবীন পট্টনায়েকের বিজেডি সরকার।
Look at how BJYM functions, that is headed by @TejasviSurya 👇
— YSR (@ysathishreddy) March 1, 2023
BJYM members are seen ruthlessly bashing police personnel in Odisha. More than 25+ policemen are seriously injured. Are they frustrated, witnessing the downfall of #Adani? pic.twitter.com/Oqb9eXMYwP
এর পরবর্তী সময়ে আমরা একই ভিডিও পাই ডা. সসমিত পাত্রর এক্স হ্যান্ডেলেও। তিনি বিজেডি-র রাজ্যসভা সাংসদ। ২০২৩ সালের ১ মার্চ তিনি ভিডিওটি পোস্ট করে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতিকে ট্যাগ করে লেখেন, "প্রিয় জেপি নাড্ডাজি, দয়া করে এই ভিডিওটি দেখুন; গতকাল ওড়িশা বিজেপি যুব মোর্চার কর্মীরা পুলিশকে কীভাবে নির্মমভাবে মারধর করেছে। একজন এসিপি সহ ২১ জন পুলিশ কর্মকর্তা আহত, ৫টি পুলিশের গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত, ২ জন পুলিশ কর্মী গুরুতর আহত এবং এসসিবি মেডিকেল কলেজে স্থানান্তরিত।"
Dear @JPNadda Ji, please have a look at this video; how Police were mercilessly beaten yesterday by Odisha BJP Yuva Morcha workers. 21 Police officers including an ACP injured, 5 Police vehicles damaged, 2 Police personnel critical & shifted to SCB Medical College. @PMOIndia pic.twitter.com/XMjTTikeYz
— ଡ଼ଃ ସସ୍ମିତ ପାତ୍ର I Dr. Sasmit Patra (@sasmitpatra) March 1, 2023
এরপর আমরা বিষয়টি নিয়ে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করি এবং ২০২৩ সালের ১ মার্চ প্রকাশিত এনডিটিভি এবং নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেই খবরগুলোতে লেখা হয়, ২৮ ফেব্রুয়ারি বিজেপি যুব মোর্চার সদস্যরা ভুবনেশ্বরে বিধানসভা অভিযান করছিলেন। তাদের দাবি ছিল, স্বাস্থ্যমন্ত্রী নব কিশোর দাসের মৃত্যুর তদন্ত সিবিআই-কে দিয়ে করাতে হবে। সেই সঙ্গে রাজ্যের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন তারা।
তবে বিধানসভায় পৌঁছনোর আগেই পুলিশ তাদের ব্যারিকেড দিয়ে আটকে দেয়। এরপর পুলিশের সঙ্গে যুব মোর্চা কর্মী সমর্থকদের খণ্ডযুদ্ধ শুরু হয়। দফায় দফায় সংঘর্ষের জেরে ভুবনেশ্বরের ডেপুটি কমিশনার প্রতীক সিং-সহ আরও একাধিক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিক আহত হন। সবমিলিয়ে প্রায় ২০ জন পুলিশ আহত হন বলে সংবাদ মাধ্যম সূত্রে বলা হয়। এই ঘটনার পর পুলিশ প্রায় ১০০ বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করে।
২০২৩ সালের ১ জুলাই প্রকাশিত সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর একটি খবরে বলা হয় যে কর্মীদের বেআইনিভাবে আটকের অভিযোগ তুলে বিজেপির যুব মোর্চা রাতভর বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।
সুতরাং সবমিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ২০২৩ সালে ঘটা একটি পৃথক ঘটনাকে বর্তমানে ওড়িশার ঘটনা বলে ভিন্ন দাবি করে বিভ্রান্তিকরভাবে শেয়ার করা হচ্ছে।
বিজেপি শাসিত ওড়িশার কটকে নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলাকালীন বিজেপির কর্মীরা বিক্ষোভকারীদের উপর পুলিশের সামনেই হামলা চালায়।
ভিডিওটি ২০২৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির যখন ওড়িশায় বিজেডি সরকার ছিল। বিজেপি যুব মোর্চা ওড়িশার স্বাস্থ্যমন্ত্রীর মৃত্যুর তদন্ত সিবিআই দ্বারা করার দাবিতে ভুবনেশ্বরে বিধানসভা অভিযান করে। তখন পুলিশের সঙ্গে বিজেপি কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।