
মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য ধর্মীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মহরম মাস চলাকালীন সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে সবুজ রঙের পোশাক, পতাকা ও ফেট্টি বেঁধে বেশ কিছু যুবক বাঁশ দিয়ে ভাঙচুর চালাচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে একে পশ্চিমবঙ্গের ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে এই ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণও করা হয়েছে।
পোস্টের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এই ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের, কাশ্মীর বা অন্য কোনও রাজ্যের নয়। মুজাফফরপুর জেলার সাকরা ব্লকের অন্তর্গত বারিয়ারপুর চকে মহরমের মিছিলে হিন্দুদের সাথে মারধর ও রক্তপাত করা হচ্ছে। সংখ্যালঘু তোষণ করতে গিয়ে মাননীয়া পশ্চিমবঙ্গকে জিহাদী-মুসলিমদের তাণ্ডবের আখড়া করে তুলছেন।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধানে পেয়েছে যে ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গের নয় বরং বিহারের।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
এই পোস্টে ঘটনাটিকে পশ্চিমবঙ্গের বলা হয়েছে, পাশাপাশি একে মুজাফফরপুর জেলার বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মুজফ্ফরপুর নামক কোনও জেলা নেই। বরং বিহারে রয়েছে। যা থেকে অনুমান করা যায় ভিডিওটি বিহারের হতে পারে।
ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে এর সূত্র খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও আদিত্য সিং নামে এক এক্স ব্যবহারকারীর হ্যান্ডেলে পাওয়া যায়। ৬ জুলাই তিনি ভিডিওটি পোস্ট করে লেখেন, "এই ঘটনাটি পশ্চিমবঙ্গ বা কাশ্মীরের নয়। ঘটনাটি মোফদলপুর (মুজফ্ফরপুর) সাকরা ব্লকের। একটু ভালোভাবে লক্ষ্য করুন কীভাবে হিন্দুদের মাথা ফাটানো হচ্ছে।" এরপর ওই ব্যক্তি মুজফ্ফরপুর পুলিশের সরকারি এক্স হ্যান্ডেলকে ট্যাগ করে লেখেন, "দোষীদের তাড়াতাড়ি ধরবেন?"
এরপর দেখা যায় ওই পোস্টের নীচে মুজফ্ফরপুর পুলিশের সরকারি হ্যান্ডেল থেকে জবাব দেওয়া হয়েছে। জবাবে লেখা হয়, "বিষয়টি তদন্তাধীন। ঘটনাটি ০৫.০৭.২০২৫ তারিখে ঘটেছিল। ঘটনাস্থলটি মুজফফরপুরের সিনিয়র পুলিশ সুপার, মুজফফরপুরের গ্রামীণ পুলিশ সুপার এবং পূর্ব-০২ এর সাব-ডিভিশনাল পুলিশ অফিসার পরিদর্শন করেছেন।"
এরপর আরও লেখা হয়, "উভয় পক্ষের কাছ থেকে প্রাপ্ত আবেদনের ভিত্তিতে এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে এবং এখনও পর্যন্ত উভয় পক্ষের ৫ জন সমাজবিরোধী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং শান্তিপূর্ণ। দয়া করে গুজবে কান দেবেন না এবং যারা এমন করছে তাদের সম্পর্কে অবিলম্বে পুলিশকে অবহিত করুন।" ফলে পুলিশের জবাব থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে ঘটনাটি বিহারের মুজফ্ফপুরের-ই।
ওইদিন ঠিক কী ঘটনা ঘটেছিল সেই বিষয়ে জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে ৬ জুলাই প্রকাশিত লাইভ হিন্দুস্তানের একটি রিপোর্ট পাওয়া যায়। রিপোর্ট থেকে জানা যায়, বরিয়ারপুর থানা এলাকার গৌরিহার গঞ্জে মুহরমের জুলুস বের হলে দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বেঁধে যায়। এই ঘটনায় গৌরিহার খালিকনগর পঞ্চায়েত প্রধান সঞ্জয় শাহের ভাই-সহ বেশ কয়েকজন আহত হন।
সঞ্জয় শাহের দাবি অনুযায়ী, মহরমের জুলুস বরিয়ারপুর যাওয়ার সময় সঞ্জয়ের ছেলে কোনওভাবে আহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিবাদ বড় আকার ধারণ করে। সেই সময়ে বিবাদ ঠান্ডা হয়ে গেলেও জুলুস ফেরার সময় পাল্টা তাদের বাড়ি-ঘরে হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ।
তবে এ কথা সত্যি যে পশ্চিমবঙ্গেও মহরমের সময় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই মুহূর্তে নামের একটি পোর্টালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, মালদার ইংলিশবাজার এলাকার লক্ষ্মীপুর বাজার পাড়া বিগত কয়েকদিন যাবৎ গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত। এলাকায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আক্রান্ত হতে হয়েছে এক পুলিশকর্মী-সহ তিনজন পুলিশ ভলান্টিয়ারকে। ভাঙচুর করা হয়েছে বাড়িঘর ও দোকানপাট।
এই বিষয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন যে মহরমের তাজিয়ার মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালদার এক শীর্ষ পুলিশকর্তাও এই অশান্তির কথা আজতক বাংলার কাছে নিশ্চিত করেন।
ফলে সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে বিহারের একটি ঘটনাকে বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের দাবিতে শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে কীভাবে মহরমের মিছিল থেকে হিন্দুদের আক্রমণ করা হচ্ছে।
এই ভিডিওটি বিহারের মুজফ্ফরপুরের, গত ৫ জুলাই ঘটনাটি ঘটে। তবে সম্প্রতি মালদা জেলায় মহরমের মিছিলের সময় অশান্তির ঘটনা ঘটেছে।