
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে এক ব্যক্তিকে কোনও একটি হাসপাতালের ভিতর থেকে একটি বাচ্চার দেহ কাঁধে করে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি ওই ব্যক্তিকে হাউ হাউ করে কাঁদতে কাঁদতে ‘বেটা বেটা’ বলে চিৎকার করতেও শোনা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় বিজেপি তথা যোগী আদিত্যনাথ শাসিত উত্তর প্রদেশের একটি হাসপাতাল থেকে নিজের ছেলের মৃতদেহ কাঁধে করে বাড়ি নিয়ে গেলেন এক অসহায় বাবা। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “উওর প্রদেশে একটি হসপিটালে মৃত শিশুর জন্য একটি অ্যাম্বুল্যান্স পেলো না শোকাহত পিতা। এই হলো বিজেপির শাসন ব্যবস্থা।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের নয়। বরং এটি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বিহারের সমস্তিপুর সদর হাসপাতালের ঘটনা।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২২ সালের ১৭ এপ্রিল একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিওর একটি বর্ধিত সংস্করাণ-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই ভিডিওতে ওই ব্যক্তি হাসপাতালের ভিতর থেকে বাচ্চার দেহটি কাঁধে করে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে একটি বাইকে বসতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে ভিডিও শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, “স্ট্রেচার বা শববাহী কোনও গাড়ি না পাওয়া সমস্তিপুর সদর হাসপাতাল থেকে একজন বাবা তার মৃত ছেলের দেহ কাঁধে করে নিয়ে যায়।”
अत्यंत शर्मनाक
— News 1 Digital India FB 💯% 💖 (@News1Digitalind) April 17, 2022
बच्चे के शव का बोझ सबसे भारी तब और बढ़ जाता है जब
अस्पताल में स्ट्रेचर और शव वाहन तक न मिले
समस्तीपुर सदर अस्पताल से कंधे पर बेटे का शव उठाकर ले गए पिता, नहीं मिला स्ट्रेचर और शव वाहन pic.twitter.com/tET45fyPqn
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ বিহার নাউ নামক একটি সংবাদ পোর্টালে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল বিহারের সমস্তিপুর সদর হাসপাতালে এক শিশুর মৃত্যু হয়। কিন্তু মৃত্যুর পর ওই শিশুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কোনও অ্যাম্বুল্যান্স বা শপবাহী গাড়ির ব্যবস্থা করে দেয়নি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তখন মৃত শিশুর বাবা কোনও উপায় না পেয়ে সন্তানের দেহ কাঁধে করে নিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে আসেন।”
এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল বিহারের সমস্তিপুর ভিত্তিক সংবাদমাধ্য সমস্তিপুর টাউনের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে মৃত শিশুর বাবার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সমস্তিপুর জেলার মুফাসিল থানা এলাকার সিংহিয়া পোখরেরা গ্রামের একটি বাচ্চা ছেলে স্থানীয় বুধি গণ্ডক নদীতে স্নান করার সময় ডুবে যায়। স্থানীয়দের সহায়তায় ছেলেটির বাবা তাকে উদ্ধার করে সমস্তিপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু হাসপাতালের কর্মরত চিকিৎসক পরীক্ষা করার পর ছেলেটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপর বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে আমরা সমস্তিপুর টাউন নামক ওই সংবাদমাধ্যমের সাংবাদিক অভিনাশ রয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল সমস্তিপুর জেলার মুফাসিল থানার সিংহিয়া পোখরেরা গ্রামের সুধীর রায় নামক এক ব্যক্তির ছেলে প্রিন্স কুমার স্থানীয় বুধি গণ্ডক নদীতে ডুবে যায় এবং সদর হাসপাতেল নিয়ে আসলে ডাক্তাররা তাকে মৃত বলে ঘোষণা করে। ছেলের মৃত্যুর কথা শোনার পর সুধীর রায় প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন এবং অ্যাম্বুল্যান্সের জন্য অপেক্ষা না করেই সন্তানের দেহ বাইকে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিতে শুরু করে। তবে সেখানে উপস্থিত অনেকের কথা মেনে তিনি পরবর্তীতে দেহ ময়নাতদন্তের জন্য রজি হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে দেহ ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। এই ঘটনার সঙ্গে উত্তর প্রদেশের কোনও সম্পর্ক নেই।” এখানে উল্লেখ্য, এই ঘটনার ভিডিওটি চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পুনরায় ভাইরাল হলে দৈনিক অমর উজালা-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, উত্তর প্রদেশের দাবিতে ছড়াল বিহারে সন্তানের দেহ কাঁধে করে নিয়ে যাওয়া বাবার পুরনো ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অ্যাম্বুল্যান্স না মেলায় বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশের একটি হাসপাতাল থেকে নিজের সন্তানের মৃতদেহ কাঁধে করে বাড়ি নিয়ে গেলেন এক অসহায় বাবা।
ভাইরাল ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের নয়। বরং এটি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে বিহারের সমস্তিপুর সদর হাসপাতালের ঘটনা।