

আগামী বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। ভোটমুখী বাংলার প্রতিবেশি এই রাজ্যে অন্তিম মুহূর্তের প্রচারে ব্যস্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে বেশকিছু যুবককে প্রকাশ্য রাস্তার উপর একটি কমলা রঙের গাড়িতে হামলা চালাতে এবং গাড়ির সানরুফ খুলে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তিকে বেধড়ক মারধর করতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বিহারে ভোট প্রচারে যাওয়া বিজেপি নেতাদের বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি তাদের গাড়ি ভাঙচুর করছে সে রাজ্যের সাধারণ মানুষ। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বিহারে বিজেপি নেতারদের দেখলে ক্যা** দিচ্ছে বিহারের জনগণ, জেগেছে বিহারের জনগণ।।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিও-র সঙ্গে ভোট প্রচারের যাওয়া বিজেপি নেতাদের মারধরের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি একটি বাইকে ধাক্কা মারা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে গত ২৭ অক্টোবর বিহারের গয়া জেলার গুরারু থানার মথুরাপুর বাজারে কয়েকজন যুবক গাড়িটিতে হামলা চালায় এবং চালককে মারধর করেছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিও ক্লিপটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করার সময় এর ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা একটি দোকানের উপরে 'সর্বোত্তম ক্লাসেস' নামক একটি কোচিং সেন্টারের ব্যানার দেখতে পাওয়া যায়। সেই ব্যানারে প্রাপ্ত মোবাইল নম্বরে যোগাযোগ করলে কোচিং সেন্টারটিক কর্ণধার তথা শিক্ষক আকাশ কুমার আমাদের জানান, “ভিডিওটি বিহারের গয়া জেলার গুরারু থানার মথুরাপুর বাজারের ঘটনা। গত সপ্তহে বাইকে ধাক্কা মারা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে কয়েকজন যুবক ভাইরাল ভিডিও-র গাড়িতে হামলা চালিয়েছিল এবং চালককে মারধর করেছিল।”

উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে দৈনিক ভাষ্কর এবং পাবলিক অ্যাপে এই সংক্রান্ত দুটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদন দুটিতে উল্লেখ করা হয়েছে, গত ২৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার গয়া জেলার গুরারু থানা এলাকায় চার বাইক আরোহী রামজিৎ কুমার নামক এক গাড়ির চালককে মারধরের পাশাপাশি তার থেকে ষাট হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয়। এদিন কোঞ্চ থানার বঙ্কাথপুরের বাসিন্দা রামজিৎ যখন রফিগঞ্জ থেকে মথুরাপুর ফিরছিলেন, তখন অভিযুক্তরা তার গাড়ি আটকে তার উপরে হামলা চালায়। এই ঘটনায় স্থানীয় প্রিন্স কুমার, অরুণ কুমার, ভোলা চন্দ্রবংশী এবং বিনয় চন্দ্রবংশী নামক চার যুবকের বিরুদ্ধে স্থানীয় গুরারু থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়।

তবে এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আমরা গুরারু থানার এসএইচও অখিলেশ কুমার সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “গত ২৭ অক্টোবর ভাইরাল ভিডিও-র গাড়ির চালক একটি বাইকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে আসে বলে অভিযোগ করে কয়েকজন যুবক মথুরাপুর বাজারে গাড়িটিকে আটকায় এবং গাড়ির চালকের উপরে হামলা চালায়। এই বিষয়ে গুরুরা থানায় প্রিন্স কুমার, অরুণ কুমার, ভোলা চন্দ্রবংশী এবং বিনয় চন্দ্রবংশী নামক চার যুবকের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। যে এফআইআরের নম্বর ২৫১/২৫। এই ঘটনার সঙ্গে কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের ভোট প্রচারের সময় মারধরের কোনও সম্পর্ক নেই।” আমরা উপরে উক্ত এবং পুলিশের দেওয়া তথ্যের উপরে ভিত্তি করে গুগল ম্যাপেও ভাইরাল ভিডিও-র ঘটনাস্থলটি খুঁজে বার করি। নীচে গুগল ম্যাপে ঘটনাস্থলটি দেখা যাবে।
পাশাপাশি, ঘটনাটি সম্পর্কে একশো শতাংশ নিশ্চিত হতে এরপর আমরা গুরারু স্থানীয় সাংবাদিক দিলীপ কুমার যাদব এবং মথুরা বাজারের ‘নিউ ফেমাস টেলার্স’-এর মালিক তথা এই ঘটনার প্রত্যাক্ষ্যদর্শী মহম্মদ কামিলের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তারা উভয়ই ঘটনাটিকে বাইকে ধাক্কা মারা সংক্রান্ত বিবাদের দৃশ্য বলেই উল্লেখ করেছেন। এমনকি সাংবাদিক দিলীপ কুমার যাদব আমাদের ভাইরাল ভিডিও-র মূল এবং বর্ধিত একটি সংস্করণ পাঠিয়েছে। যেখানে এই বিবাদের পুরো দৃশ্য ধরা পড়েছে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, বিহারে ভোট প্রচারে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বিজেপি নেতারা দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হচ্ছে অসম্পর্কিত ভিডিও।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিহারে ভোট প্রচারে যাওয়া বিজেপি নেতাদের বেধড়ক মারধরের পাশাপাশি তাদের গাড়ি ভাঙচুর করছে সে রাজ্যের সাধারণ মানুষ।
ভাইরাল ভিডিও-র সঙ্গে ভোট প্রচারের যাওয়া বিজেপি নেতাদের মারধরের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি একটি বাইকে ধাক্কা মারা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে গত ২৭ অক্টোবর বিহারের মথুরাপুর বাজারে কয়েকজন যুবক গাড়িটিতে হামলা চালায় এবং চালককে মারধর করেছিল।