ফ্যাক্ট চেক: ওড়িশায় ১৫০ মুসলিম বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা? সত্যিটা জানুন

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, গত ৭ ডিসেম্বর ওড়িশার মালকানগিরি জেলার এমভি-২৬ গ্রামে বাঙালিদের বাড়ি এবং দোকান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। তবে পুলিশের ভাষ্য মতে, এ ক্ষেত্রে কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের শিলান্যাসের সঙ্গেও এর কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকি, তিনটির মধ্যে দুটি ছবিও অসম্পর্কিত। 

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: ওড়িশায় ১৫০ মুসলিম বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে হিন্দুত্ববাদীরা? সত্যিটা জানুন

সম্প্রতি মুর্শিদাবাদের বেলডাঙায় বাবরি মসজিদের শিলান্যাস করেন ভরতপুরের বিধায়ক তথা বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা হুমায়ুন কবীর। আর এই আবহে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিনটি ছবির একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে প্রথম ছবিতে একটি বাড়ির পাঁচিলের ভিতরে অবস্থিত গাড়ি রাখার শেডে আগুন জ্বলতে দেখা যাচ্ছে। দ্বিতীয় ছবিতে কোনও একটি স্থানে কয়েকজন পুলিশ আধিকারিক একে অপরের সঙ্গে কথা বলছেন। এবং তৃতীয় ছবিতে কোনও একটি স্থানে অগ্নিসংযোগের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। 

ছবিগুলি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ তৈরির কাজে অর্থ ও নানা সামগ্রী দান করার কারণে ওড়িশার মালকানগিরিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৫০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিগুলি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভারতের মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদে ইট-বালু-সিমেন্ট এবং অর্থ দান করার জেরে ভারতের ওড়িশার মালকানগিরি গ্রামে হামলা চালিয়ে মুসলিমদের ১৫০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। এসময় পুলিশ নিরব দর্শকের ভুমিকা পালন করেছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

 

এই পোস্টের ক্যাপশনে তথ্যসূত্র হিসেবে বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যম ডেইলি ইনকিলাবের একটি প্রতিবদনের লিঙ্ক যুক্ত করা হয়েছে। তবে সেই প্রতিবেদনের কোথাও বাবরি মসজিদ তৈরির জন্য দান করার কারণে মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৫০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার কোনও প্রসঙ্গই উল্লেখ করা হয়নি। আক্রান্ত পরিবারগুলি মুসলিম, এ কথাও লেখা হয়নি। 

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, গত ৭ ডিসেম্বর ওড়িশার মালকানগিরি জেলার এমভি-২৬ গ্রামে বাঙালিদের বাড়ি এবং দোকান পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ঠিকই। তবে পুলিশের ভাষ্য মতে, এ ক্ষেত্রে কোনও সাম্প্রদায়িক সংঘাতের ঘটনা ঘটেনি। মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদের শিলান্যাসের সঙ্গেও এর কোনও সম্পর্ক নেই। এমনকি, তিনটির মধ্যে দুটি ছবিও অসম্পর্কিত। 

সত্য উন্মোচন

সম্প্রতি ওড়িশার মালকানগিরিতে কোনও ধরনের হিংসাত্মক তথা শতাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে কিনা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে তা জানার চেষ্টা করা হয়। তখন একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ভাইরাল পোস্টে শেয়ার করা প্রথম ছবি-সহ সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর ওড়িশার মালকানগিরি জেলার কোরুকোন্ডা থানার এমভি-২৬ গ্রামের এক আদিবাসী মহিলার খুনের ঘটনা ঘটে। এই খুনের ঘটনায় কয়েকজন বাঙালির যোগ রয়েছে, এমনই অভিযোগ তুলে গ্রামের প্রায় ২৩০টিরও বেশি বাঙালি হিন্দুদের বাড়ি এবং দোকান পুড়িয়ে দেয় আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা।

মূলত জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরেই এই খুন বলে আদিবাসী সমাজের অভিযোগ। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ওড়িশা পুলিশ এখনও পর্যন্ত মোট ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। এলাকায় শান্তি ফেরাতে মোতায়েন করা হয়েছে কেন্দ্রীয় বাহিনী এবং পুলিশ সদস্যদের। অন্যদিকে, সরকারের প্রতিনিধি হিসাবে বরঙ্গপুরের বিজেপি সাংসদ বলভদ্র মাঝি এমভি-২৬ এবং পার্শ্ববর্তী রাখালগুড়া গ্রাম পরিদর্শন করে আদিবাসী ও বাঙালি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন। তবে কোনও প্রতিবেদনেই এই ঘটনার সঙ্গে বাবরি মসজিদে অর্থদান কিংবা হিন্দু-মুসলিম সংক্রান্ত ধর্মীয় বিবাদ, বা কোনও ধরনের 'গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের' কথা উল্লেখ করা হয়নি। বরং আক্রান্তদের বাঙালি হিন্দু হিসাবেই উল্লেখ করা হয়েছে। 

Advertisement

অন্যদিকে, ভাইরাল পোস্টের দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ছবি দুটি নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে জানা যায়, শুধুমাত্র প্রথম ছবিটিই মালকানগিরির ঘটনার। দ্বিতীয়টি গত ৬ ডিসেম্বর গোয়ার একটি নাইটক্লাবে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনার, এবং তৃতীয়টি গত ১৩ নভেম্বর দিল্লি গাড়ি বিস্ফোরণের পর হরিয়ানার ফরিদাবাদে পুলিশের তদন্ত সম্পর্কিত। এগুলোর সঙ্গে ওড়িশার ঘটনার কোনও সম্পর্ক নেই।

পাশাপাশি, বিষয়টি সম্পর্কে সবিস্তারে জানতে কোরুকোন্ডা থানার আইসি হিমাংশু শেখর বারিকের সঙ্গে কথা বলে আজতকের ফ্যাক্ট চেক টিম। হিমাংশু আমাদের জানান যে, "ওই এলাকায় কোনও মুসলিম বসতি নেই। আক্রান্তরা সকলেই বাঙালি হিন্দু এবং অন্যদিক আক্রমণকারীরা সকলেই আদিবাসী হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ।" আজতকের ওড়িশা প্রতিনিধি অজয় নাথের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও আমাদের জানান যে এই ঘটনায় আক্রান্ত ও আক্রমণে অভিযুক্ত, কোনও পক্ষই মুসলিম সম্প্রদায়ের নয়।

উপরিউক্ত তথ্য-প্রমাণ থেকে পরিষ্কার, উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের তরফে ওড়িশার মালকানগিরিতে মুসলিমদের ১৫০টি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার দাবিটি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

মুর্শিদাবাদে বাবরি মসজিদ তৈরির জন্য দান করার কারণে ওড়িশার মালকানগিরিতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ১৫০টি বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা। রইল ঘটনার কিছু ছবি।

ফলাফল

চলতি বছরের ৭ ডিসেম্বর একটি খুনের ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে আদিবাসীরা ওড়িশার মালকানগিরিতে প্রায় ২৩০টিরও বেশি বাড়ি এবং দোকান পুড়িয়ে দেয়। তবে পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে আক্রান্তরা কেউ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ নয়, বরং সকলেই বাঙালি হিন্দু।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement