ফ্যাক্ট চেক: ঝিলমের জল ছেড়ে পাকিস্তানে ‘বন্যা’ সৃষ্টি ভারতের? না, ভিডিওটি পহেলগাঁও হামলার আগের 

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি পহেলগাঁও হামলার আগে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার থাকোট বাজারে প্রবল বৃষ্টির জেরে সৃষ্টি বন্যা পরিস্থিতির সময় তোলা হয়েছিল। এর সঙ্গে গত ২৬ এপ্রিল ভারতের তরফে উরি বাঁধের জল ছাড়া এবং তার ফলে ঝিলম নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক নেই।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: ঝিলমের জল ছেড়ে পাকিস্তানে ‘বন্যা’ সৃষ্টি ভারতের? না, ভিডিওটি পহেলগাঁও হামলার আগের 

পহেলগাঁও হামলার পর ফের একবার তলানিতে ঠেকেছে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক। সন্ত্রাসবাদে মদত দেওয়ার অভিযোগে শাহবাজ শরীফের দেশের সঙ্গে সিন্ধু জল চুক্তি স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মোদি সরকার। পাশাপাশি গত শনিবার কোনও রকম আগাম নোটিশ ছাড়াই উরি বাঁধের জল ছেড়ে দিয়েছে ভারত। এর ফলে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাজধানী মুজাফফরাবাদে অবস্থিত ঝিলম নদীর জলস্তর আকস্মিক বৃদ্ধি পাওয়ার অভিযোগ তুলেছে একাধিক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম। 

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশে ভাইরাল হয়েছে। যেখানে কোনও একটি বাজারে হুহু করে জল ঢুকতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি, সেখানে উপস্থিত কয়েকজন নিজেদের সামগ্রী যাতে জলে ভেসে না যায় সেই চেষ্টা করছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সম্প্রতি পহেলগাঁও হামলার পর ভারত অপ্রত্যাশিতভাবে ঝিলম নদীতে জল ছেড়ে দেওয়ায় পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ঝিঁলম নদীর জল হঠাৎ ছেড়ে দেওয়াতে পাকিস্তানের অবস্থা, এক জেহাদি বান্দা পোস্ট করেছে (ভারত পানি ছেড়ে দিছে তাই পাকিস্তানের অবস্থা ) এই জেহাদিদের সাথে এবারের যু*দ্ধ ভাতে মা*রা, জলে মা*রা,এবারের যুদ্ধে ভারত সরকার পুরো দেশকে ৭২ হুরের দর্শন করিয়ে দেবে।” (বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি পহেলগাঁও হামলার আগে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার থাকোট বাজারে প্রবল বৃষ্টির জেরে সৃষ্টি বন্যা পরিস্থিতির সময় তোলা হয়েছিল। এর সঙ্গে গত ২৬ এপ্রিল ভারতের তরফে উরি বাঁধের জল ছাড়া এবং তার ফলে ঝিলম নদীর জলস্তর বৃদ্ধির কোনও সম্পর্ক নেই।

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৭ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের আবহাওয়া সংক্রান্ত খবর প্রদানকারী সংস্থা Weather Monitor-এর অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেলে ই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্ট অনুযায়ী, ভিডিওটি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বটগ্রাম জেলার তহসিল আল্লাইতে অবস্থিত থাকোট বাজারে তোলা হয়েছিল। ওইদিন থাকোট বাজারে হঠাৎই প্রবল বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এই বন্যার করাণে দোকানপাট ও যানবাহনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। অপর একটি এক্স হ্যান্ডেলেও এই একই তথ্য-সহ একই ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে।

Advertisement

উপরে উক্ত Weather Monitor-এর পোস্ট থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ভাইরাল ভিডিওটি পহেলগাঁও হামলার আগের। কারণ পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলা হয়েছিল গত ২২ এপ্রিল এবং এই হামলার পরে উরি বাঁধের জল ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল গত ২৬ এপ্রিল। তবে এরপর সম্প্রতি পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বন্যা পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চ করলে একাধিক পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

এইসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল আকস্মিক বজ্রবিদ্যুৎ-সহ ভারী বৃষ্টির কারণে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের চিত্রাল, দির, সোয়াত, শাংলা, কোহিস্তান, মানসেহরা, অ্যাবোটাবাদ, বটগ্রাম, বুনের, কুররাম, বাজাউর এবং মোহমান্দ-সহ একাধিক এলাকায় ব্যপক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আর এই বন্যার জলে খাইবার জেলায় একটি গাড়ি ভেসে যায়। একই সঙ্গে বজ্রপাতের কারণে একজন এফসি কর্মী নিহত হয়। অন্যদিকে বটগ্রাম জেলায় পাহাড় থেকে নেমে আসা বন্যার জলে বেশ কয়েকটি বাইকও ভেসে যায়।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, পহেলগাঁও হামলার আগে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়াতে হওয়ার বন্যার ভিডিও বিভ্রান্তিকর দাবি-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পহেলগাঁও হামলার পর ভারত ঝিলাম নদীতে জল ছেড়ে দেওয়ায় পাকিস্তানে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিওটি পহেলগাঁও হামলার আগে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার থাকোট বাজারে প্রবল বৃষ্টির জেরে সৃষ্টি বন্যা পরিস্থিতির সময় তোলা হয়েছিল।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement