ফ্যাক্ট চেক: বন্যা কবলিতদের জন্য নিজেদের এক মাসের বেতন দান করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, আর জি কর কাণ্ডের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের এক মাসের বেতন রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য দান করেছেন।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: বন্যা কবলিতদের জন্য নিজেদের এক মাসের বেতন দান করেছেন জুনিয়র ডাক্তাররা?

একদিকে অতিবৃষ্টি, অন্যদিকে ডিভিসির ছাড়া জলের কারণে বন্যা কবলিত দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলা। আর এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার সরাসরি ডিভিসিকে দায়ী করেছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি তিনি ডিভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়ে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে দু’টি চিঠিও পাঠিয়েছেন।

আর এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে রাজ্যের বন্যা পরিস্থিত ও আর জি কর কাণ্ডে দোষীদের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনরত ডাক্তারদের নিয়ে একটি বিশেষ পোস্ট। সেখানে দাবি করা হচ্ছে, জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের এক মাসের বেতন রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য দান করেছেন।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল নিজের ওয়ালে লিখেছেন, “যাদের খুব আঁতে লাগছিল জুনিয়ার ডাক্তাররা ধর্নায় বসেছে বলে, তাদের বেতন নেওয়া নিয়ে! সুপ্রিম কোর্ট যেখানে এ বিষয়ে কিছু বলে নি, কয়েকজন খুব কথা বলছিল। তাদেরকে বলছি ওনারা এক মাসের বেতন বন্যা কবলিত এলাকার মানুষের জন্য দিয়ে দিলেন। আপনারা আপনাদের MLA আর MP দের বলুন তো দিতে। এমনিতেই কোটি টাকা যেখান সেখান থেকে বের হয়। বলুন, চুপ থাকবেন না। এই বেলা মুখে কুলুপ এঁটে বসে থাকলে হবে?” (সব বানান অপরিবর্তিত।) 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের এক মাসের বেতন দান করার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও মিথ্যে।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

প্রথমত, ভাইরাল দাবিটি সন্দেহজনক। কারণ রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য জুনিয়র ডাক্তাররা যদি নিজেদের এক মাসের বেতন দান করে থাকেন তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে প্রমাণ হয় যে জুনিয়র ডাক্তাররা রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের নিজেদের এক মাসের বেতন দান করেছেন।

পক্ষান্তরে আমরা আমাদের সার্চে গত ১৯ সেপ্টেম্বর জুনিয়র ডাক্তারদের রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো সংক্রান্ত হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “জুনিয়র ডাক্তাররা বলেন, গোটা পশ্চিমবঙ্গে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। দুর্গত এলাকার সংখ্যা বাড়ছে। ডিভিসি প্রচুর জল ছেড়েছে। এটা অত্যন্ত খারাপ পরিস্থিতি। আমাদের ধরনা প্রতিবাদে অনেক মানুষ সাহায্য করেছেন। এখানে সকলে যা দিয়েছেন আমাদের সেটা জমে রয়েছে। আমরা আবেদন করব আরও মানুষ যদি আমাদের কাছে সাহায্য পাঠান। সেটা এখান থেকে দিয়ে বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণশিবির গড়তে চাই আমরা। বন্যা দুর্গত এলাকায় অভয়া ক্লিনিক গড়তে চাই।”

Advertisement

এরপর এই সংক্রান্ত পরবর্তী সার্চে আমরা গত ২২ সেপ্টেম্বর সংবাদ প্রতিদিনের ওয়েবসাইটে অন্য একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। “বানভাসি পাঁশকুড়ায় ‘অভয়া’ ক্লিনিক, বন্যা পীড়িতদের পাশে কিঞ্জল-অনিকেতরা” শিরোনামের সেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, “চারিদিক জলমগ্ন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ক্রমশই বাড়ছে জ্বর-সর্দি থেকে শুরু করে নানা রকম রোগ! ত্রাণ নিয়েও রয়েছে নানান অভিযোগ। এমন অবস্থায় পাঁশকুড়ার বন্যা কবলিত এলাকাগুলিতে বানভাসিদের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে ছুটে এলেন কলকাতার জুনিয়র ডাক্তাররা। রবিবার সকাল পাঁশকুড়া নাগরিক সমাজের ব্যবস্থাপনায় ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তার ফ্রন্ট-এর পরিচালনায় আর জি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা পাঁশকুড়ার বন্যাপীড়িত তিনটি এলাকায় ‘অভয়া’ ক্লিনিকে রোগী দেখার কাজ শুরু করেন।” 

এরপর আমরা এই একই তথ্য জানতে পারি গত ২২ সেপ্টেম্বর এইসময়ে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকেও। “‘আন্দোলন আমাদের চলছেই’, পাঁশকুড়ায় বন্যা দুর্গতদের পাশে অনিকেত-কিঞ্জলরা” শিরোনামের সেই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, “দু’দিন আগেই প্রতিবাদ মঞ্চে দেখা গিয়েছিল তাঁদের। জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যমত মুখ হয়ে ওঠেন তাঁরা। ডাক্তার হিসেবে নিজেদের কর্তব্যেও অবিচল তাঁরা। রবিবার পাঁশকুড়ায় ‘অভয়া ক্লিনিক’-এ দুর্গতদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার জন্য হাজির ছিলেন চিকিৎসক কিঞ্জল নন্দ ও অনিকেত মাহাতো।”

উপরে উল্লেখিত সব প্রতিবেদনেই আর জি কর হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তারদের বন্যা দুর্গত এলাকায় ত্রাণ বিতরণ এবং ‘অভয়া ক্লিনিক’ খুলে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করার কথা উল্লেখ থাকলেও কোথাও আমরা তাদের এক মাসের বেতন দান সংক্রান্ত তথ্য দেখতে পাইনি। তাই এরপর আমরা বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডাক্তারস ফ্রন্টের (ডব্লিউবিজেডিএফ) সদস্য তথা কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের অন্যতম প্রধান মুখ দেবাশীষ হালদারের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, "আমরা রাজ্যের বন্যা কবলিত এলাকায় কেবলমাত্র ত্রাণ বিতরণ এবং ‘অভয়া ক্লিনিক’ খুলে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করছি। এর বাইরে আমরা আমাদের এক মাসের বেতন দান করেছি বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ মিথ্যে। কিছু মানুষ সোশ্যাল মিডিয়ায় আমাদের নাম ব্যবহার করে এই ভুল তথ্য ছড়াচ্ছেন।”

এর থেকে প্রমাণ হয় যে রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের এক মাসের বেতন দান করার বিষয়টি সঠিক নয়। বরং মিথ্যে প্রচার মাত্র।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

আর জি কর কাণ্ডের আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা তাদের এক মাসের বেতন রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য দান করেছেন।

ফলাফল

রাজ্যের বন্যা কবলিত মানুষদের জন্য জুনিয়র ডাক্তারদের এক মাসের বেতন দান করার দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে ও ভিত্তিহীন।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement