scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: ১৯৫৩ সালে নালন্দা স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বক্তিয়ারপুর রাখেন নেহেরু?

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দাবি করা হচ্ছে, ১৯৫৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু বক্তিয়ার খিলজির স্মরণে নালন্দা স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বক্তিয়ারপুর রাখেন।

Advertisement

দীর্ঘদিন যাবৎ বিহারের পাটনা জেলার বক্তিয়ারপুর শহরের নাম পরিবর্তন করার দাবি করে আসছে বিজেপি-সহ একাধিক হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। তাদের অভিযোগ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ধ্বংসকারী বক্তিয়ার খিলজির নামানুসারে এই শহরের নামকরণ করা হয়েছিল। এরই মধ্যে গত বুধবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিহারের রাজগীরে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেছেন। 

আর সেই উদ্বোধনের পর থেকেই ফের একবার সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বক্তিয়ারপুরের নাম। তবে এবার দাবি বক্তিয়ারপুর শহরের বদলে বক্তিয়ারপুর রেল স্টেশনকে নিয়ে। সেখানে বলা হচ্ছে, আগে বক্তিয়ারপুর শহরে অবস্থিত বক্তিয়ারপুর রেল স্টেশনের নাম ছিল নালন্দা। ১৯৫৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু বক্তিয়ার খিলজির স্মরণে নালন্দা স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন বক্তিয়ারপুর।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী নিজের ওয়ালে লিখেছেন, “১৯৫৩ সাল পর্যন্ত বর্তমান বক্তিয়ারপুর রেলওয়ে স্টেশনের নাম ছিল নালন্দা। তবে, স্বাধীন ভারতে নালন্দা ষ্টেশনের নাম পাল্টে হিন্দু ঘাতক বক্তিয়ার খিলজী কে কেন সন্মান দিয়েছিল জহরলাল ও তার বামিস্লামী বামপন্থী সহযোগী রা? প্রশ্ন করার সময় এসেছে !!??” (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।  এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে। 

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল দাবিটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যে। বক্তিয়ারপুর ও নালন্দা বিহারের দুটি ভিন্ন রেল স্টেশন এবং এই দুই স্টেশনের মধ্যে দূরত্ব ৪১ কিমি। কখনও এই দুই স্টেশনের নাম পরিবর্তন করা হয়নি।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল দাবির সত্যতা জানতে প্রথমে আমরা কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খোঁজার চেষ্টা করি যে ১৯৫৩ সালে নালন্দা স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বক্তিয়ারপুর করা হয়েছিল কিনা। কিন্তু আমরা আমাদের সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এর সত্যতা প্রমাণ হয়। তবে আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চের সময় বক্তিয়ারপুর শহরের নাম পরিবর্তনের দাবিতে একাধিক প্রতিবেদন অবশ্যই খুঁজে পাই। কিন্তু সেগুলির কোনটাতেই বক্তিয়ারপুর স্টেশনের আগের নাম নালন্দা ছিল এমন তথ্য পাইনি।

Advertisement

পাশাপাশি আমরা আমাদের কিওয়ার্ড সার্চের সময় জানতে পারি বক্তিয়ারপুর রেল স্টেশনটি পূর্ব মধ্য রেলের দানাপুর ডিভিশনে অবস্থিত। সেই সূত্র ধরে আমরা যখন পূর্ব মধ্য রেলের অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত তথ্য খোঁজার চেষ্টা করি। তখন সেখানে আমরা রেলের দানাপুর ডিভিশনের একটি ম্যাপ খুঁজে পাই এবং সেখানে ম্যাপে নালন্দা স্টেশনও দেখতে পাই। পাশাপাশি, অন্য একটি রুটে আমরা বক্তিয়ারপুর স্টেশনটিও দেখতে পাই। অর্থাৎ পূর্ব মধ্য রেলের দানাপুর ডিভিশনের মধ্যেই বক্তিয়ারপুর ও নালন্দা, এই পৃথক দুই স্টেশন অবস্থিত। এবং কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এই দুই স্টেশনের মধ্যের দূরত্ব ৪১ কিমি।

 

রেলের ওয়েবসাইটে পাশাপাশি এরপর আমরা গুগুল ম্যাপেও এই দুই স্টেশনের অবস্থান খোঁজার চেষ্টা করি। সেখানেও আমরা এই পৃথক দুই স্টেশনকে দেখতে পাই। এবং সেক্ষেত্রেও এই দুইয়ের মধ্যে দূরত্ব ৪১ কিমিই উল্লেখ করা হয়েছে।

এরপর এবিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা পূর্ব মধ্য রেলের সিপিআরও-র সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “১৯৫৩ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জহরলাল নেহেরু নালন্দা স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বক্তিয়ারপুর করেছিলেন বলে যে দাবি করা হচ্ছে সেটি ভিত্তিহীন ও মিথ্যে। বক্তিয়ারপুর ও নালন্দা দুটি পৃথক বিহারে অবস্থিত দুটি স্টেশন। আজ পর্যন্ত এই দুই স্টেশনের নাম পরিবর্তন করা হয়নি।”

 

এর থেকেই প্রমাণ হয় নালন্দা স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে বক্তিয়ারপুর করা হয়েছিল বলে স্যোশাল মিডিয়ায় যে দাবি করা হচ্ছে সেটি মিথ্যে এবং বিভ্রান্তিকর।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

১৯৫৩ সালে জহরলাল নেহেরু বখতিয়ার খিলজির স্মরণে নালন্দা স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে রাখেন বক্তিয়ারপুর।

ফলাফল

বিহারের পৃথক দুটি রেল স্টেশনের নাম হল বক্তিয়ারপুর ও নালন্দা। কখনও এই দুই স্টেশনের নাম পরিবর্তন করা হয়নি।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement