
গত বুধবার, অক্ষয়তৃতীয়ার দিন দিঘায় জগন্নাথ ধামের উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। যদিও ওড়িশার বিজেপি সরকার আগেই দিঘার মন্দিরের ‘জগন্নাথ ধাম’ নামকরণ নিয়ে আপত্তি তুলেছিল । আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে এই সংক্রান্ত এবিপি আনন্দের একটি নিউজকার্ড। যেখানে দাবি করা হয়েছে, দিঘার জগন্নাথ মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ওড়িশার এক বিজেপি নেতা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর তরফে শেয়ার করা ভাইরাল কার্ডটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, “দীঘার মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব হুমকি উড়িষ্যার বিজেপি নেতার।” অন্যদিকে পোস্টের ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “বিজেপি বলছে মন্দির গুড়িয়ে দেবে ! ভাল করে দেখুন বাবর , আকবর , চেঙ্গিজ খান , তালিবান ,পাকিস্তান কেউ নয় বিজেপি বলছে প্রভুর মন্দির ভাঙবে ! বাংলার হিন্দু সমাজ বৈষ্ণব সমাজ এর পরেও চুপ করে বসে থাকবে ! সর্ব শক্তি দিয়ে বিজেপির উপর ঝাপিয়ে পরুন! বিজেপি কে আন্ডা বাচ্চা সমেত উৎখাত করুন বাংলা থেকে !”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, এবিপি আনন্দের ভাইরাল নিউজকার্ডটি ভুয়ো ও সম্পাদিত। কেবলমাত্র এবিপি আনন্দ নয়, অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমেও ওড়িশার কোনও বিজেপি নেতার তরফে দিঘার জগন্নাথ মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল পোস্টের সত্যতা জানতে অর্থাৎ এবিপি আনন্দের তরফে ‘দীঘার মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেব হুমকি উড়িষ্যার বিজেপি নেতার’ এই শিরোনামে কোনও নিউজকার্ড কিংবা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল কিনা আমরা সেই তথ্য খোঁজার চেষ্টা করি। কিন্তু এবিপি আনন্দের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ, ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেল, এক্স হ্যান্ডেল, ইউটিউব চ্যানেল কিংবা ওয়েবসাইট কোথাও এই সংক্রান্ত কোনও পোস্ট কিংবা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি, ওড়িশার কোনও বিজেপি নেতা দিঘার জগন্নাথ মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে থাকলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই জাতীয় তথা পশ্চিমবঙ্গের সংবাদমাধ্যমগুলিতে প্রকাশিত হতো। কিন্তু এই সংক্রান্ত কিওয়ার্ড সার্চে এবিপি আনন্দতো নয়ই, এমনকি অন্য কোনও সংবাদমাধ্যমেও এহেন কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
তবে কিওয়ার্ড সার্চের সময় ২০২৫ সালের ২৯ এপ্রিল এবিপি আনন্দের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে আমরা ভাইরাল নিউজকার্ডর সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত "আজ হবে মহাযজ্ঞ, বুধবার দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদঘাটন" শিরোনামের একটি নিউজকার্ড খুঁজে পাই। উভয় নিউজকার্ডেই দিঘার জগন্নাথ ধামের একই ছবি ব্যবহৃত হয়েছে। নিউজকার্ড দুটি পাশাপাশি রেখে পর্যবেক্ষণ করলে আমরা লক্ষ্য করি যে এবিপি আনন্দের ফেসবুক পেজের কার্ডে ‘দিঘা’ বানান লেখা হলেও ভাইরাল নিউজকার্ডটিতে অন্য ‘দীঘা’ লেখা হয়েছে। অন্যদিকে এবিপি আনন্দের প্রতিবেদনে ‘ওড়িশা’ লেখা হলেও ভাইরাল নিউজকার্ডতে ‘উড়িষ্যা’ লেখা হয়েছে। এর থেকেই সন্দেহ তৈরি হয় যে, এবিপি আনন্দের ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ভুয়ো বা সম্পাদিত হলেও হতে পারে। পাশাপাশি সেটি এই নিউজকার্টি থেকে বানানো হলেও হতেও পারে।
এরপর এই সংক্রান্ত পরবর্তী সার্চ করলে চলতি বছরের ৩ মে এবিপি আনন্দে এই সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে ভাইরাল নিউজকার্ডটিকে ভুয়ো হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমরা এবিপি আনন্দ ডিজিটাল বিভাগের প্রধান বিশ্বজিৎ চ্যাটার্জীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও আমাদের জানান, “ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ভুয়ো। এবিপি আনন্দের ফেসবুক পেজ থেকে এমন কোনও পোস্ট করা হয়নি। বরং এবিপি আনন্দের ফেসবুক পোস্ট বিকৃত করে স্ক্রিনশটটি তৈরি করা হয়েছে।”
তবে এখানে উল্লেখ্য, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের অনুরোধে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের অন্যতম প্রধান সেবায়েত রাজেশ দয়িতাপতি দিঘার মন্দিরের বিগ্রহে প্রাণপ্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিলেন। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ নির্মাণে ব্যবহৃত নিমকাঠের উদ্বৃত্ত দিয়ে দিঘার মন্দিরের সেই বিগ্রহ নির্মিত বলে জল্পনা। আর এই তথ্য সামনে আসতেই দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন কর্মসূচিতে পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের কোন সেবায়েতরা (দয়িতাপতি) উপস্থিত ছিলেন এবং কোন কাঠ দিয়ে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের বিগ্রহ তৈরি হয়েছে, সেই সংক্রান্ত তথ্য জানতে অভ্যন্তরীণ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশা সরকার।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় এবিপি আনন্দের একটি ভুয়ো নিউজকার্ড শেয়ার করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এবিপি আনন্দের নিউজকার্ড অনুযায়ী, দিঘার জগন্নাথ মন্দির ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ওড়িশার এক বিজেপি নেতা।
ভাইরাল ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশটটি ভুয়ো ও সম্পাদিত। এবিপি আনন্দের তরফে এই সংক্রান্ত কোনও পোস্ট বা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি।