scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: গরুর সঙ্গে 'রসিকতা', মুসলিম যুবককে শিক্ষা দিয়েছে পুলিশ? ভাইরাল ভিডিওর সত্যতা জানুন

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, গরুর সঙ্গে রসিকতা করায় একটি মুসলিম ছেলেকে পুলিশ এমনভাবে মেরেছে যে সে ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না।

Advertisement

গরু নিয়ে ধর্মীয় ভাবাবেগকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সময়ে ভারতের বিভন্ন প্রান্ত থেকে হিংসা কিংবা প্রতিবাদের খবরও সামনে আসে। এরই মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে গরু সংক্রান্ত একটি ভিডিও। দুটি কোলজে তৈরি সেই ভিডিওর প্রথম কোলজে দেখা যাচ্ছে, একটি ছেলে গাড়ি জানালা থেকে হাসতে হাসতে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা একটি গরুকে উদ্দেশ্যে বলতে শোনা যাচ্ছে, “সামনে ইদ, সাবধান! আসসালামু আলাইকুম।” অন্যদিকে দ্বিতীয় কোলাজে ব্যবহৃত একটি ছবিতে একজন পুলিশ সদস্যের সামনে হাঁটু গেড়ে একটি ছেলেকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ওই একই কোলজে ব্যবহৃত অন্য একটি ভিডিওতে বন্দুকধারী কয়েকজন পুলিশ সদস্যের হাতে ভর দিয়ে একটি ছেলেকে কোনও রকমভাবে হাঁটতে হাঁটতে বারবার ‘গরু আমাদের মা’ বলতে শোনা যাচ্ছে।

যেহেতু ভাইরাল ভিডিওতে ছেলেটিকে গরুকে উদ্দেশ্য করে সালাম দিতে দেখা যাচ্ছে। তাই ভিডিওটি শেয়ার করে ইঙ্গিত করা হচ্ছে, গরুর সঙ্গে মজা বা ঠাট্টা করায় ভিডিওর 'মুসলিম' ছেলেটিকে পুলিশ এমনভাবে মেরেছে যে সে ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে তার প্রথম কোলজের ফ্রেমের উপরে হিন্দিতে লিখেছেন, “ভিডিওটি এতটাই শেয়ার করুন যাকে ছেলেটি ধরা পড়ে।” পাশাপাশি দ্বিতীয় কোলজে ছেলেটি ধরা পড়েছে ইঙ্গিত করে তিনি লিখেছেন, “চিনতে পারছেন কে?” ভিডিওর ক্যাপশনে তিনি লিখেছেন, “এর উদ্দেশ্য দেখুন, আর বাবাজির চিকিৎসা দেখুন।”

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিও প্রথম ক্লিপে গরুকে নিয়ে রসিকতা করার সঙ্গে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত দ্বিতীয় ক্লিপ ও ছবির কোনও সম্পর্ক নেই।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল ভিডিও ও দাবির সত্যতা জানতে প্রথমে সেটির প্রথম ক্লিপ থেকে একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে গুগুলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চলতি বছরের ১২ অক্টোবর একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ক্লিপটি খুঁজে পাওয়া যায়।  সেই ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে অনেকেই দাবি করেছেন, ভিডিওর ছেলেটি মুসলিম নয় বরং হিন্দু এবং তার নাম নকুল। সে ভিডিওটি বানানোর পর নিজের ভুল বুঝতে পেরে পরবর্তীতে নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে ভিডিওটি ডিলিট করে দেয় এবং মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে আরেকটি ভিডিও প্রকাশ করেছিল। 

Advertisement

এরপর পরবর্তী সার্চে চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর অপর একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই একই ক্লিপটি পাওয়া যায়। পাশাপাশি ক্লিপটিতে নকুল নামক একজনের ইনস্টাগ্রাম  হ্যান্ডেলের একটি স্ক্রিনশটও যুক্ত করা হয়েছে। যার ইউজার আইডি “@n___nakul_”। আমরা যখন অ্যাকাউন্ট পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করলে দেখি বর্তমানে নকুলের অ্যাকাউন্টটি  ডিলিট করে ফেলা হয়েছে। তবে তার অ্যাকাউন্ট থেকেই গরুকে নিয়ে মজা করার ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল বলে জোরালো সম্ভাবনা রয়েছে, যদিও বর্তমানে অ্যাকাউন্টটি  ডিলিট করে ফেলায় আমরা সেটা নিশ্চিত করে বলতে পারছি না। তবে আমরা আমাদের সার্চে গরুর সঙ্গে মজা করার জন্য নকুল কিংবা অন্য কোনও ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নিয়েছে কিনা সেই তথ্য খুঁজে পাইনি।

এরপর ভাইরাল ভিডিওর দ্বিতীয় কোলজে ব্যবহৃত পুলিশের সামনে বসে থাকা ছেলেটির ছবি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৩ সালের ১ জুলাই আমরা বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, “গুরগাঁও-ফরিদাবাদ রোডে অবস্থিত একটি হনুমান মন্দিরের কাছে মাংসের টুকরো ছুঁড়ে দেওয়ার জন্য পুলিশ ৯ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। তাদের মধ্যে ওবিরুল ও নাদিম নামে দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।” পাশাপাশি প্রতিবেদনে অভিযুক্ত দুজনের একটি ছবিও রয়েছে। ছবিটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে এটি স্পষ্ট হয় যে, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে পুলিশের সামনে বসে থাকা ছেলেটির ছবি এই ছবি থেকে নেওয়া হয়েছে। 

এরপর ভাইরাল ভিডিওতে যে ছেলেটি বারবার ‘গরু আমাদের মা’ বলছে তার সম্পর্কে জানতে ভিডিওর দ্বিতীয় ক্লিপটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে আমরা সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর নিউজ ১৮ ভাইরালসের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ক্লিপ-সহ একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, গাজিয়াবাদ পুলিশ গরু পাচারের অভিযোগে ইরশাদ ওরফে সোনু নামক এক যুবকে গ্রেপ্তার করতে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশকে দেখেই সে পালানোর চেষ্টা করে এবং পুলিশের ওপর গুলি চালায়। জবাবে পুলিশও একটি গুলি ছোড়ে যা সোনুর পায়ে লাগে। আহত হওয়ার সঙ্গেই সোনু বারবার 'গরু আমাদের মা' বলতে শুরু করে।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে একই ঘটনার সঙ্গে সম্পর্কিত হিসাবে তিনটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে, যার কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, গরুর সঙ্গে রসিকতা করায় একটি মুসলিম ছেলেকে পুলিশ এমনভাবে মেরেছে যে সে ঠিকমতো হাঁটতেও পারছে না।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিওতে গরুকে নিয়ে রসিকতা করা ক্লিপের সঙ্গে পুলিশের ব্যবস্থা নেওয়া সংক্রান্ত দ্বিতীয় ক্লিপ ও ছবির কোনও সম্পর্ক নেই।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement