ফ্যাক্ট চেক: ছত্তিশগড়ে আদানিকে জমি হস্তান্তরের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ?

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি জঙ্গলের জমি আদানি গোষ্ঠীকে দিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত বিক্ষোভের নয়। বরং এটি গত ১৬ ডিসেম্বর ছত্তিশগড়ের কাঙ্কের জেলার বাদেতেভদা গ্রামে এক বৃদ্ধের সৎকারকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের দৃশ্য।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: ছত্তিশগড়ে আদানিকে জমি হস্তান্তরের বিরুদ্ধে আদিবাসীদের বিক্ষোভে পুলিশের লাঠিচার্জ?

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একাধিক ছবি এবং ক্লিপের সমন্বয়ে তৈরি একটি ভিডিও। যেখানে কোনও একটি গ্রামে বহুসংখ্যক পুলিশ কর্মীদের সাধারণ মানুষকে ধাওয়া করে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, গ্রামবাসীরা একাধিক বাড়ি বাড়িতে আগুন দিতে এবং ভঙচুর চালাচ্ছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ছত্তিশগড়ের খয়রাগড়ে জঙ্গলের জমি আদানি গোষ্ঠীকে দিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় দরিদ্র আদিবাসীদের নির্মমভাবে মারধর করছে বিজেপি সরকারের পুলিশ।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “এই ভিডিওটি ছত্তিশগড়ের খয়রাগড়ের, যেখানে দরিদ্র আদিবাসীরা বন উজাড়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছিল! পুলিশ তাদের এতটাই মারধর করেছে যে তাদের বনভূমি তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে আদানিদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে.... এটাই হচ্ছে ডবল ইঞ্জিন সরকার(বি/জেপির) কর্মকাণ্ড! সাধারণ জনগণদের মেরে আডানি/আম্বানিদের বড়লোক করাই হচ্ছে এই বি*জেপি সরকারের মূল উদ্দেশ্য.!!” (সব বানান অপরিবর্তিত) 


আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি জঙ্গলের জমি আদানি গোষ্ঠীকে দিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত বিক্ষোভের নয়। বরং এটি গত ১৬ ডিসেম্বর ছত্তিশগড়ের কাঙ্কের জেলার বাদেতেভদা গ্রামে এক বৃদ্ধের সৎকারকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের দৃশ্য।

সত্য উন্মোচন

ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। তখন চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর পাবলিক অ্যাপে ভাইরাল ভিডিও-র প্রথম ক্লিপ, যেখানে পুলিশ কর্মীরা এক ব্যক্তিকে ধাওয়া করে মারধর করছেন সেটি পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি গত ১৮ ডিসেম্বর অন্তগড় ব্লকের আমাবেদা এলাকার বাদেতেভদা গ্রামে ধর্মান্তরিত বাবার মৃতদেহ দাফনের পর কবর থেকে তোলা সংক্রান্ত বিক্ষোভে পুলিশের মারধরের দৃশ্য। 

এরপর ভাইরাল ভিডিও-র অন্যান্য ক্লিপ ও ছবিগুলি নিয়ে অনুসন্ধান চালালে, দৈনিক জাগরণের হিন্দি সংবাদপত্র নইদুনিয়া, ভিস্তারা নিউজ, এনডিটিভি, ইটিভি ভারত এবং অমর উজলা-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এইসব ক্লিপের স্ক্রিনশট এবং ছবি-সহ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সম্প্রতি নিজের আদিবাসী ধর্ম ত্যাগ করে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করেন ছত্তিশগড়ের কাঙ্কের জেলার বাদেতেভদা গ্রামে সরপঞ্চ রাজমান সালাম। এর কিছুদিন পর অর্থাৎ গত ১৬ ডিসেম্বর তাঁর বাবা চামরা রাম সালামের মৃত্যু হলে তিনি খ্রিস্টান ধর্মের রীতি অনুযায়ী নিজের বাবার দেহ কবর দেন। 

Advertisement

এই ঘটনার পরেই গ্রামের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষরা সরপঞ্চ রাজমান সালামের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন শুরু করে। আদিবাসীদের অভিযোগ, সরপঞ্চ নিজে খ্রিস্টান ধর্ম গ্রহণ করে ছিলেন ঠিকই। কিন্তু তাঁরা বাবা চামরা রাম সালামে তা গ্রহণ করেননি। বরং তিনি আদিবাসী সম্প্রদায়ের ধর্মতেই ছিলেন। আর এই কারণেই আদিবাসীরা সরপঞ্চের বাবার দেহ কবর থেকে তুলে নিজেদের আদিবাসী রীতি অনুযায়ী সৎকারের দাবি জানান। বিক্ষোভের এক পর্যায়ে আদিবাসীদের বিরুদ্ধে গ্রামের তিনটি গীর্জায় এবং একাধিক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। অন্যদিকে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গিয়ে গ্রামবাসীদের আক্রমণের শিকার হয় পুলিশ। তখন পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ করে।

বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে আমরা আজতকের স্থানীয় সাংবাদিক সুমি রাজাপ্পানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনিও ভিডিও ক্লিপটি দেখে সেটিকে কাঙ্কেরের বাদেতেভদা গ্রামের জাতিগত হিংসার ঘটনা হিসাবে নিশ্চিত করেন। পাশপাশি তিনি আরও জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গ্রামবাসীদের অনুরোধে সরকার ও প্রশাসনের তরফে বিষয়টির উপরে হস্তক্ষেপ করা হয়। এবং মৃতদেহটি কবর থেকে তুলে বাদেতেভদা গ্রাম থেকে অন্যত্রে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরেই বর্তমানে পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, আমাদের অনুসন্ধানে আদানিকে জঙ্গলের জমি হস্তান্তরের জেরে কোনও বিক্ষোভের তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। 

ফলে সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে, কাঙ্কেরের একটি বিবাদের ঘটনার ভিডিওকে আদানিকে জঙ্গলের জমি হস্তান্তরের ঘটনা দাবি করে বিভ্রান্তিকর করা হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ছত্তিশগড়ের খয়রাগড়ে জঙ্গলের জমি আদানি গোষ্ঠীকে দিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ করায় দরিদ্র আদিবাসীদের নির্মমভাবে মারধর করছে বিজেপি সরকারের পুলিশ।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিওটি জঙ্গলের জমি আদানি গোষ্ঠীকে দিয়ে দেওয়া সংক্রান্ত বিক্ষোভের নয়। বরং এটি গত ১৬ ডিসেম্বর ছত্তিশগড়ের কাঙ্কের জেলার বাদেতেভদা গ্রামে এক বৃদ্ধের সৎকারকে কেন্দ্র করে দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষের দৃশ্য।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement