
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে কয়েকজন পুলিশ কর্মীকে রাস্তার উপর চলন্ত কয়েকটি মালবাহী ট্রাকের কেবিন লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করতে দেখা যাচ্ছে। তবে পুলিশের এই পদক্ষেপ শর্তেও গাড়িগুলিকে না থামিয়ে এগিয়ে চলেছে চালকরা।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, বালি-পাথরের ট্রাক আটকাতে না পেরে পাথর ছুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “#পশ্চিমবঙ্গ -পুলিশ বালি পাথরের ট্রাক আটকাতে না পেরে পাথর ছুটছে ...।” এই একই ভিডিও-সহ অন্য একটি পোস্টের কমেন্ট সেকশনে একজন লিখেছেন, “পুলিশগুলো মমতা ব্যানার্জির অনুমতি নিয়ে এসব করছে মমতা ব্যানার্জি আর কতদিন মানুষ অতাচার সোজ্জো করবে।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের নয় এবং এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তর প্রদেশের সোনভদ্র জেলার রবার্টসগঞ্জ থানার লোধি এলাকার ঘটনা।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্টে ভিডিওটিকে উত্তর প্রদেশের সোনভদ্র জেলার ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
🚨 उत्तर प्रदेश पुलिस किस तरह जान जोखिम में डालकर खनिज ट्रैको के पास जाकर छोटे पत्थर व खिड़की पर डंडे हिलाकर खनिज ट्रैक रोक रही है।
— Adv Deepak Babu (@dbabuadvocate) September 13, 2025
🚨 मुझे अभी कहने लग जाएंगे कि यह तो जिला सोनभद्र पुलिस शूटिंग कर रही है।@myogiadityanath @adgzonevaranasi@dgpup @Uppolice pic.twitter.com/l4im2ll3X3
এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ দ্য ফ্রি প্রেস জার্নালে এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১২ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তর প্রদেশের সোনভদ্র জেলার রবার্টসগঞ্জ থানার লোধি খনি থেকে অবৈধ খনিজ বহনকারী কয়েকটি ট্রাক আটকানোর চেষ্টা করে খনিজ বিভাগের পর্যবেক্ষক যোগেশ শুক্লা-সহ পুলিশের একটি দল। তখন ট্রাক চালকরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, সেখানে উপস্থিত পুলিশ কর্মীরা ট্রাকগুলি লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ে মারে।
অন্যদিকে গত ১৩ সেপ্টেম্বর সোনভদ্র জেলা পুলিশের অফিশিয়াল এক্স হ্যান্ডেল থেকে এই সংক্রান্ত একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে সোনভদ্র পুলিশের তরফে লেখা হয়েছে, “২০২৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর রাত ১১টা ৪০ মিনিটে লোধি ব্যারিয়ার এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছিলেন খনিজ পর্যবেক্ষণকারী যোগেশ শুক্লা। তদন্তের জন্য সেই সময় কিছু ট্রাক চেকিংয়ের জন্য থামানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু চালকরা ট্রাকগুলি থামানোর পরিবর্তে বেপরোয়াভাবে দ্রুত গতিতে খনিজ পর্যবেক্ষণকারীকে হত্যার উদ্দেশ্যে চাপা দেওয়ার চেষ্টা করে। তখন পুলিশ কর্মীরা ট্রাকগুলি থামানোর চেষ্টা করে। তবে পুলিশ কর্মীদের ট্রাকগুলি থামানোর পদ্ধতি ঠিক ছিল না। তাই তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
दि0-12.09.2025 की रात्रि में PS रॉबर्ट्सगंज के लोढ़ी बैरियर पर खनन सर्वेक्षक व पुलिस की चेकिंग के दौरान कुछ ट्रकों द्वारा तेज रफ्तार व लापरवाही पूर्वक चलाते हुए सर्वेक्षक अधिकारी को जाने से मारने की नीयत से गाड़ी चढाने का प्रयास किया गया,के सम्बन्ध में सीओ नगर की बाइट-@Uppolice pic.twitter.com/AV9qrwboh7
— Sonbhadra Police (@sonbhadrapolice) September 13, 2025
টাইমস অব ইন্ডিার একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ঘটনায় রবার্টসগঞ্জ থানার ইনচার্জ গোপালজি গুপ্তকে পুলিশ লাইনে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ভাইরাল ভিডিও-র সাহায্যে শনাক্ত হওয়া তিনজন হেড কনস্টেবলকে অনুপযুক্ত পদ্ধতিতে গাড়িগুলি আটকানোর চেষ্টার অভিযোগে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, পাথর ছুড়ে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ট্রাক আটকানোর চেষ্টা দাবিতে ছড়াল উত্তর প্রদেশের ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বালি-পাথরের ট্রাক আটকাতে না পেরে পাথর ছুড়ছে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ।
ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের নয় এবং এর সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি চলতি বছরের ১২ সেপ্টেম্বর রাতে উত্তর প্রদেশের সোনভদ্র জেলার রবার্টসগঞ্জ থানার লোধি এলাকার ঘটনা।