
বাংলাদেশের একটি প্রত্যন্ত গ্রামের বাসিন্দা রুহুল আমিন ফকির কখনও স্বপ্নেও ভাবেননি যে সইফ আলি খানের মতো একজন বলিউড তারকাকে আক্রমণের ঘটনায় তাঁর ছেলের নাম জড়াবে। ১৯ জানুয়ারি মুম্বই পুলিশ তাঁর ছেলে মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শাহজাদকে গ্রেফতার করলে তিনি হতবাক হয়ে যান।
রুহুল পেশায় একজন পাটকলের কর্মচারী ছিলেন। তিনি আজতক বাংলাকে জানান, তাঁর ৩০ বছর বয়সী ছেলে মহম্মদ শরিফুল ইসলাম শাহজাদ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে কাজের সন্ধানে ভারতে যায়। ছেলে শরিফুলই পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সদস্য এবং সে নাকি প্রতি মাসে মুম্বই থেকে বাড়িতেও টাকা পাঠাতো বলে জানান রুহুল।
বাংলাদেশে শরিফুলের বাড়ি
রুহুল আমিনের দাবি, ভারতে যাওয়ার আগে শরিফুল বাংলাদেশে বাইক ট্যাক্সি চালাতেন। যে ধরনের পরিষেবা নানা ধরনের অ্যাপে মিলে থাকে। সেই রুহুল আমাদের একটি ছবিও পাঠান। যেখানে তাঁদের টিনের ছাদের জীর্ণকায় বাড়ি দেখা যাচ্ছে। যে ছবিতে তিনি নিজে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেই বাড়ির সামনে। পাশাপাশি তিনি শরিফুলের একাধিক পরিচয়পত্রও আমাদের সঙ্গে ভাগ করে নেন, যা থেকে কার্যত রুহুল আমিনের পরিচয় সম্পর্কে সংশয়হীন হওয়া যায়।
তিনি জানান, শরিফুলের বাড়ি বাংলাদেশের ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার মোল্লারহাট ইউনিয়নের রাজাবাড়িয়া গ্রামে। পুলিশের বক্তব্য অনুযায়ী, শরিফুল ভারতের মেঘালয়-বাংলাদেশ সীমান্তে অবস্থিত ডাউকি নদী পেরিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিল। সেই বাড়ি থেকে এই নদীর দূরত্ব প্রায় ৫০০ কিলোমিটার।
অবৈধভাবে ডাউকি নদী পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেছিল শরিফুল
সোশ্যাল মিডিয়ায় মেঘালয়ের ডাউকি নদীর ছবি দেখেননি, এমন মানুষ কমই রয়েছেন। এই ডাউকি নদী উমঙ্গট নামেও পরিচিত। ডাউকির স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ জলের উপর ভাসমান নৌকাগুলি দেখলে মনে হয় যেন কাচের উপর চলছে। এই নদী দেখতে ভারত তথা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পর্যটকরা ভিড় করেন। এই নদীর একপাশে ভারত, অন্য পাশে বাংলাদেশ।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, শরিফুল ডাউকি নদী দিয়েই ভারতে প্রবেশ করে। এরপর সে মেঘালয় থেকে পশ্চিমবঙ্গে আসে এবং কয়েক সপ্তাহ এই রাজ্যেই ছিল। তারপর কাজের সন্ধানে সে মুম্বই যায়। মুম্বই গিয়ে সে 'স্লিঙ্ক অ্যান্ড বারডট' নামক একটি রেস্তোরাঁয় কাজ শুরু করে।
Shariful's route from Bangladesh to Mumbai. pic.twitter.com/LUr43Tj9lT
— Surajuddin Mondal (@Voiceof_Suraj) January 23, 2025
ডাউকি পার হওয়া কি এতটাই সহজ?
ডাউকি নদীতেই ভারত ও বাংলাদেশের মাঝের সীমান্ত রয়েছে যা খোলা সীমান্ত অর্থাৎ এখানে বর্ডারে কোনও কাঁটাতারের ব্যবহার নেই। নীচের ইউটিউব ভিডিওটি’র ৬ মিনিট ১৮ সেকেন্ডে ডাউকি নদীর তীরে অবস্থিত ভারত ও বাংলাদেশের খোলা সীমান্ত দেখা যাবে। ভিডিওটি দেখলে বোঝা যায় যে বিএসএফ এই এলাকা পাহারা দিলেও কতটা সহজেই সীমান্ত পার করা সম্ভব।
ডাউকি নদীর এই এলাকা অবৈধ অনুপ্রবেশের জন্য একপ্রকার 'স্বর্গোদ্বার' বলা চলে। তবে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিএসএফের তরফে এই সীমান্ত দিয়ে অবৈধ অনুপ্রবেশ বন্ধ করার লক্ষ্যে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়। এবং ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে বিএসএফ-এর তরফে জানানো হয় যে মেঘালয়ে ৪৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত সম্পূর্ণ নিরাপদ। পাশাপাশি মেঘালয় সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের অবৈধ অনুপ্রবেশের দাবিও অস্বীকার করে বিএসএফ।
আগে থেকেই ফৌজাদারি মামলার জালে শরিফুল
শরিফুলের বাবা রুহুল আমাদের কাছে স্বীকার করেন যে বাংলাদেশেও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে কয়েকটি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তবে তিনি দাবি করেন, “আমাদের পরিবার বেগম খালেদা জিয়ার দল বিএনপি-র সমর্থক। এই কারণে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে আমার ছেলেকে এসব মামলায় অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হয়েছে।" পাশাপাশি রুহুল মানতে অস্বীকার করেন যে তাঁর ছেলে সইফ আলি খানকে আক্রমণ করেছে। তাঁর দাবি, "ছেলেকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হচ্ছে।"