
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হিজাব পরিহিতা একজন মুসলিম মহিলা বিচারকের ছবি বেশ ভাইরাল হয়েছ। ছবিতে তাঁকে হাসি মুখে বিচারকের আসনে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছেন নাদিয়া কাহাফ।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরল ছবিটি শেয়ার করে লিখেছেন,“আমেরিকায় সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হলেন প্রথম হিজাবি মহিলা নাদিয়া কাহফ।” পাশাপাশি ছবির উপরে তিনি লিখেছেন, “আলহামদুলিল্লাহ! সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি হলেন হিজাবী মহিলা নাদিয়া কাহফ আমেরিকা।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, নাদিয়া কাহাফ আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়নি। বরং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তিনি আমেরিকার নিউ জার্সি সুপিরিয়র কোর্টের (নিম্ন আদালত) বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ছবি ও দাবির সত্যতা জানতে সেটি নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৩ সালের ২৮ মার্চ একটি এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ছবি-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। ছবিটি শেয়ার করে সেখানে উল্লেখ করা হয়, “নিউ জার্সি সুপিরিয়র কোর্টে নিয়োগের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম হিজাব পরিহিতা বিচারক হলেন আইনজীবী নাদিয়া কাহফ।”
Attorney Nadia Kahf becomes first hijab-wearing judge in the U.S. after Superior Court appointment in New Jersey. pic.twitter.com/299q0z2qpq
— Urooja (@Urooja12) March 28, 2023
এরপর উক্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসবন্ধান চালালে ২০২৩ সালের ২৪ মার্চ মধ্যপ্রাচ্য ভিত্তিক সংবাদমাধ্য মিডল ইস্ট মনিটরে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মার্কিন আইনজীবী নাদিয়া কাহফকে নিউ জার্সির সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে। নিউ জার্সির গভর্নর ফিল মারফি এক বছর আগে নাদিয়াকে সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক হিসেবে মনোনীত করেন। এরপর ২০২৩ সালের ২১ মার্চ কোরান নিয়ে বিচারকের শপথ পাঠ করেন নাদিয়া।
অন্যদিকে তুরস্কের সরকারি সংবাদ সংস্থা আনাদোলু এজেন্সির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাদিয়া কাহফ, একজন সিরিয়ান বংশোদ্ভূত মার্কিন আইনজীবী। তবে নাদিয়া আমেরিকার প্রথম মহিলা মুসলিম বিচারক নয়। তবে তিনিই প্রথম বিচারক যিনি হিজাব পরে বিচারক কার্য পরিচালনা করবেন। তবে কোনও প্রতিবেদনেই নাদিয়া কাহাফকে আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত করার কথা উল্লেখ করা হয়নি।
এরপর আনাদোলু এজেন্সির তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্য ডেইলি মেইলের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে আমরা জানতে পারি, ২০১৫ সালের ৩ ডিসেম্বর হিজাব পরিহিত অবস্থায় কোরান নিয়ে আমেরিকার নিউ ইয়ার্ক সিভিল কোর্টের বিচারক হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন ক্যারোলিন ওয়াকার-ডায়ালো নামক এক মহিলা। অর্থাৎ এর থেকে বোঝাই যায় নাদিয়া কাহাফ পুরো আমেরিকার প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম বিচারক নয়। বরং তিনি আমেরিকার নিউ জার্সি রাজ্যের প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম বিচারক নিযুক্ত হয়েছিলেন। তাঁর আগেও আমেরিকাতে হিজাব পরিহিতা বিচারক নিযুক্ত হয়েছিলেন। অন্যদিকে এই সংক্রান্ত আরও অনুসন্ধানে আমরা জানতে পারি আমেরিকার প্রথম মহিলা বিচারক ছিলেন জাকিয়া মাহাসা। তিনি ১৯৯৭-২০১৮ সাল পর্যন্ত বাল্টিমোর সিটির সার্কিট কোর্টের বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। তবে তিনি হিজাব পরে বিচার কার্য সম্পন্ন করতেন কিনা আমরা সেই সংক্রান্ত তথ্য খুঁজে পাইনি।
এখানে উল্লেখ্য, আমরা আমাদের অনুসন্ধানে জানতে পারি মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে মুসলিম প্রধান বিচারপতি তো নয়ই এমনকি আজ পর্যন্ত কোনও মুসলিম বিচারপতিই নিযুক্ত হয়নি। অন্যদিকে অনুসন্ধানে আরও জানা যায় ভারতের মতোই মার্কিন বিচার বিভাগও তিন ধরণের আদালত নিয়ে গঠিত। শীর্ষে রয়েছে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট, তারপরে প্রতিটি রাজ্যে রয়েছে রাজ্য সুপ্রিম কোর্ট (যা ভারতের হাইকোর্টের সমতুল্য) এবং সকলের নীচে রয়েছে নিম্ন আদালত যা সুপিরিয়র কোর্ট নামে পরিচিত।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, নাদিয়া কাহাফের আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হওয়া সংক্রান্ত দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রথম হিজাব পরিহিতা মুসলিম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়েছেন নাদিয়া কাহাফ।
নাদিয়া কাহাফ আমেরিকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হয়নি। বরং ২০২৩ সালের মার্চ মাসে তিনি আমেরিকার নিউ জার্সি সুপিরিয়র কোর্টের বিচারক হিসাবে নিযুক্ত হয়েছিলেন।