
অহিন্দিভাষী রাজ্যগুলিতে প্রায়শই নানাভাবে হিন্দিভাষা চাপিয়ে দেওয়ার দাবি তুলতে দেখা যায় আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলোকে। এ বারে এমন একটি পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে, নরেন্দ্র মোদী সরকার পশ্চিমবঙ্গে হিন্দি চাপিয়ে দিলেও নিজের রাজ্য গুজরাতের ক্ষেত্রে তা করছে না।
কীভাবে? জাতীয় বাংলা সম্মেলন নামে একটি সংগঠনের ফেসবুক পেজ থেকে সম্প্রতি একটি গ্রাফিক কার্ড শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে কলকাতা ও গুজরাত এয়ারপোর্টে থাকা উড়ান যাত্রী ক্যাফের দুটি ছবি পোস্ট করা হয়েছে। সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা এই ক্যাফেগুলিতে বিমানবন্দরের বাকি ক্যাফের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম দামে চা-কফি-স্ন্যাক্স পাওয়া যায়।
ছবি দুটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, কলকাতা এয়ারপোর্টে বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি হিন্দিতেও উড়ান যাত্রী ক্যাফে কথাটি লেখা হলেও গুজরাটের ক্ষেত্রে তা শুধুমাত্র গুজরাটি ও ইংরেজিতে লেখা হয়েছে। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পশ্চিমবঙ্গের ওপর হিন্দি চাপিয়ে দিলেও গুজরাটের ক্ষেত্রে তা করছেন না।
গ্রাফিক কার্ডে লেখা রয়েছে, "গুজরাঠের বিমানবন্দরে উডান যাত্রী ক্যাফে গুজরাঠিতে কিন্তু কলকাতা বিমানবন্দরে হিন্দিতে। একই সরকার দুই ধরণের নিয়ম !!!!!!!!!!! নরেন্দ্র মোদী সরকার নিজেদের রাজ্যে কিন্তু হিন্দি চাপাচ্ছে না। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে চাপাচ্ছে।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যে। কলকাতার মতোই গুজরাট বিমানবন্দেরও এই ক্যাফেতে হিন্দিতে লেখা রয়েছে যে অংশ এই ছবিতে কেটে দিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল দাবি সম্পর্কে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা একাধিক নিউজ রিপোর্ট থেকে জানতে পারি যে গত ডিসেম্বর মাসেই কলকাতা বিমানবন্দরে উড়ান যাত্রী ক্যাফে পথচলা শুরু করেছে। এই ক্যাফের সামনে হিন্দিতে বড় করে, এবং ইংরেজি ও বাংলায় ছোট করে নাম লেখা রয়েছে।
এরপর গুজরাটের রাজধানী আহমেদাবাদ বিমানবন্দরে এই ক্যাফে খোলা সম্পর্কে কিওয়ার্ড সার্চ করে টাইমস নাও-সহ একাধিক প্রতিবেদন নজরে আসে। আহমেদাবাদ এয়ারপোর্টে এই ক্যাফে সম্প্রতি মার্চ মাসেই খোলা হয়েছে। সেই প্রতিবেদনে ওই ক্যাফের ছবিও প্রকাশ করা হয়েছিল। যেখানে স্পষ্ট দেখা যায় যে সবার উপর বড় হরফে হিন্দিতে, এবং সামান্য ছোট হরফে গুজরাটি ও ইংরেজিতে উড়ান যাত্রী ক্যাফে লেখা হয়েছে।
এরপর আমরা ঠিক ওই ছবিটি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি যা ভাইরাল গ্রাফিক কার্ডে রয়েছে। রিভার্স সার্চের মাধ্যমে ওই একই ছবি আহমেদাবাদ এয়ারপোর্টের ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজের একটি পোস্টে পাওয়া যায়। যেখানে স্পষ্টভাবে ওই একই ছবি দেখা যাচ্ছে। সেই ছবিতে উড়ান যাত্রী ক্যাফের উপরে হিন্দিতে লেখা নামও পরিষ্কার রয়েছে।
নীচের আহমেদাবাদ এয়ারপোর্টের সেই পোস্ট দেওয়া রইল।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে। হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার দাবিতে যেভাবে বলা হচ্ছে যে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের উড়ান যাত্রী ক্যাফেতে হিন্দিতে নাম লেখা হয়নি কিন্তু কলকাতায় লেখা হয়েছে, তা সঠিক নয়।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কলকাতা বিমানবন্দরে উড়ান যাত্রী ক্যাফের নাম হিন্দিতে লেখা হলেও গুজরাতে শুধু ইংরেজি ও গুজরাতিতে লেখা হয়েছে।
গুজরাত বিমানবন্দরে উড়ান যাত্রী ক্যাফের নাম হিন্দিতে সবার উপরে লেখা। কিন্তু ভাইরাল ছবিটি কেটে-ছেঁটে বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।