ফ্যাক্ট চেক: “একটা ফোনে বাংলার উন্নয়নের টাকা বন্ধ করে দিয়েছি!" এমন কোনও মন্তব্য করেননি সুকান্ত

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে বালুরঘাটের বিদায়ী সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের একটি মন্তব্য। একটি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে, বঙ্গ বিজেপির সভাপাতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করে বাংলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বকেয়া টাকা আটকে দিয়েছেন।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: “একটা ফোনে বাংলার উন্নয়নের টাকা বন্ধ করে দিয়েছি!" এমন কোনও মন্তব্য করেননি সুকান্ত

সুরাজউদ্দিন মণ্ডল: লোকসভা নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে ততই বাড়ছে বঙ্গ রাজনীতির পারদ। ভোটের প্রস্তুতি হিসাবে একের পর এক সভা-সম্মেলন করছে রাজনৈতিক দলগুলি। প্রচারের আঁচ লক্ষ্য করা গেছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেখানে শাসক-বিরোধী উভয় দলকে নিয়েই ভাইরাল হচ্ছে একাধিক পোস্ট।

এই সব পোস্টের মধ্যে সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে বালুরঘাটের বিদায়ী সাংসদ তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের একটি মন্তব্য। সেই পোস্টে দাবি করা হয়েছে, বঙ্গ বিজেপির সভাপাতি সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করে বাংলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বকেয়া টাকা আটকে দিয়েছেন। অর্থাৎ ভাইরাল পোস্টের দাবি অনুযায়ী, বিজেপির রাজ্য সভাপতি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ফোন করে বাংলার উন্নয়নের টাকা আটকে দিতে বলেছেন। এবং তাঁর সেই ফোনের কারণে মোদী সরকার বাংলার প্রাপ্য টাকা আটকে দিয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী সুকান্ত মজুমদারের একটি ছবি ব্যবহার করে তার উপরে কোট করে লিখেছেন, “একটা ফোনে বাংলার উন্নয়নের টাকা বন্ধ করে দিয়েছি।" একই সঙ্গে ওই ফেসবুক ব্যবহারকারী আরও লিখেছেন, “এই বঙ্গদ্রোহীদের বাংলা থেকে তাড়িয়ে দিন।”  ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত। পাশাপাশি এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।  সরাসরি উল্লেখ না করলেও সুকান্ত মজুমদারের ছবি ও কোটের মাধ্যমে এটাই বোঝানো হয়েছে যে, মন্তব্যটি রাজ্য বিজেপি সভাপতির। এবং এই মন্তব্যের কারণে তাঁকে বঙ্গদ্রোহী বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, সুকান্ত মজুমদারের ভাইরাল মন্তব্যটি বিভ্রান্তিকর। তিনি কেন্দ্রের বিজেপি সরকারকে ফোন করে বাংলার উন্নয়নের টাকা আটকে দেওয়া সংক্রান্ত এহেন কোনও মন্তব্য করেননি।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

সুকান্ত মজুমদার বঙ্গ বিজেপির হেভিওয়েট নেতা তথা রাজ্য বিজেপির সভাপতি। তিনি যদি এমন কোনও মন্তব্য করে থাকেন যে, একটা ফোনে বাংলার উন্নয়নের টাকা বন্ধ করে দিয়েছি। তাহলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই প্রথম শ্রেণির সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হত। কিন্তু ইন্ডিয়া টুডের কিওয়ার্ড সার্চে এমন কোনও নির্ভরযোগ্য তথ্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি যা থেকে প্রমাণ হয় যে, সুকান্ত মজুমদার বলেছেন তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করে বাংলার উন্নয়নের টাকা আটকে দিয়েছেন।

Advertisement

তবে কিওয়ার্ড সার্চ করার সময় আমরা সুকান্ত মজুমদারের কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করা সংক্রান্ত দুটি পৃথক মন্তব্য খুঁজে পাই। একটিতে তিনি রাজ্যের রাজনৈতিক নেতাদের বাড়িতে সিবিআই হানা প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। অন্যটিতে কেন্দ্রের কাছে বাংলার প্রাপ্য বকেয়া টাকা নিয়ে মন্তব্য করেছেন। ২০২৩ সালের ৯ অক্টোবর আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইনে সিবিআই হানা সংক্রান্ত মন্তব্য প্রকাশিত হয়। সেখানে রানাঘাটের বিজেপি বিধায়ক পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি প্রসঙ্গে সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, ‘‘যাঁকে প্রয়োজন তাঁকে ডাকবে (সিবিআই)। তল্লাশি বন্ধ করতে আমরাও ফোন করতে পারতাম। কিন্তু আমরা এতে বিশ্বাসী নই।’’ কিন্তু আনন্দবাজারের এই প্রতিবেদনে আমরা বাংলার উন্নয়নের টাকা আটকে দেওয়া সংক্রান্ত সুকান্তর কোনও মন্তব্য খুঁজে পাইনি।

তবে ২০২৩ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর নিউজ ১৮ বাংলার ইউটিউব চ্যানেলে কেন্দ্রের কাছে বাংলার প্রাপ্য বকেয়া টাকা নিয়ে সুকান্ত মজুমদারের করা একটি মন্তব্যের ভিডিয়ো আমরা খুঁজে পাই। সেই ভিডিয়োয় সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রের কাছে বাংলার বকেয়া টাকা প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘চুরি বন্ধ করতে হবে। চুরি বন্ধ করুন। ওঁকে কিছু করতে হবে না। সুকান্ত মজুমদার একটা ফোন করবে, সব টাকা চলে আসবে।” 

উভয় ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকারকে বাংলার বিষয় নিয়ে ফোন করার কথা বলেছেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি। তবে ভালো করে লক্ষ্য করলে বোঝা যায় দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সুকান্ত মজুমদারের করা মন্তব্যটিই বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয়েছে। সুকান্ত মজুমদার কেন্দ্রের কাছে বাংলার বকেয়া টাকা প্রসঙ্গে বলেছিলেন যে, রাজ্যের তৃণমূল সরকার চুরি বন্ধ করলে তিনি নিজে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করে বকেয়া টাকা প্রাদানের জন্য বলবেন। কিন্তু ভাইরাল পোস্টে তাঁর সেই মন্তব্যটি ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এবং লেখা হয়েছে যে, সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করে বাংলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বকেয়া টাকা আটকে দিয়েছেন।

এর থেকেই প্রমাণ হয় যে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এমন কোনও মন্তব্য করেননি যেখানে তিনি বলছেন, আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে একটা ফোন করে বাংলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা আটকে দিয়েছি। বরং তিনি বলেছেন, বাংলার তৃণমূল সরকার চুরি বন্ধ করলে তিনি নিজে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করে বকেয়া টাকা প্রাদানের ব্যবস্থা করবেন। তাঁর সেই মন্তব্যকে কিছু মানুষ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুল ব্যাখ্যা করে ভাইরাল করছেন।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে একটা ফোন করে বাংলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা আটকে দিয়েছি।

ফলাফল

সুকান্ত মজুমদার এমন কোনও মন্তব্য করেননি যেখানে তিনি বলছেন, আমি কেন্দ্রীয় সরকারকে একটা ফোন করে বাংলার উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ টাকা আটকে দিয়েছি। বরং তিনি বলেছেন, বাংলার তৃণমূল সরকার চুরি বন্ধ করলে তিনি নিজে কেন্দ্রীয় সরকারকে ফোন করে বকেয়া টাকা প্রদানের ব্যবস্থা করবেন।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement