

সম্প্রতি ভারত থেকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের একাধিক দফায় বাংলাদেশে পুশব্যাক করার খবর নানা সংবাদ মাধ্যমের সূত্র ধরে পাওয়া গিয়েছে। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে। এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কোমরে দড়ি বেঁধে বেশ কয়েকজন ব্যক্তিকে একটি বাসে তোলা হচ্ছে। বাসটির গায়ে ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ লেখাও দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে একে বনগাঁ সীমান্তের ঘটনা বলে দাবি করে কটূক্তির ভঙ্গিতে বলা হয়েছে, এরা সকলেই বাংলাদেশি নাগরিক যারা অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ করেছিলেন। তবে এখন তাদেরকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।

এই দাবিতে ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “পশ্চিমবঙ্গ দখল করতে এসেছিলাম, কাজ হয়েছে বাড়ি( বাংলাদেশ ) চলে যাচ্ছি, তবু আমরা কাগজ দেখাবো না! বনগাঁ বর্ডার চিত্র।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি অসত্য। ঘটনাটি বনগাঁ সীমান্তের নয় বরং বাংলাদেশের মোংলা এলাকার এবং এরা সকলেই ভারতীয় মৎসজীবী। বাংলাদেশি নন।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভিডিওতে স্পষ্টভাবেই বাংলাদেশ পুলিশ লেখা একটি গাড়ি দেখা যাচ্ছে। ফলে ভিডিওটি যে ভারতের বদলে বাংলাদেশের হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি সেটা বুঝতে বাকি থাকে না। এই পরবর্তী ধাপে ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তা গুগল লেন্সের মাধ্যমে খোঁজা হলে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম কালের কণ্ঠের একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই খবরে ওই একই ভিডিও থেকে নেওয়া ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল।

সেই খবরে লেখা হয়, বাংলাদেশের অনুপ্রবেশ করার অভিযোগে মোট ৩৪ জন ভারতীয় মৎসজীবীকে গত ১৪ জুলাই আটক করেছিল বাংলাদেশের নৌসেনা। ‘এফবি ঝড়’ ও ‘এফবি মঙ্গল চণ্ডি-৩৮’ নামের দুটি মাছ ধরার ট্রলার-সহ এই ৩৪ জন জেলেকে বঙ্গোপসাগরে ফেয়ারওয়ে বয়া সংলগ্ন গভীর সাগর থেকে আটক করা হয়।
আটক হওয়া জেলেদের কোমরে দড়ি বেঁধে গাড়িতে তোলার পৃথক আরেকটি ভিডিও বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম মাছরাঙা নিউজ-এর ইউটিউব চ্যানেলেও আপলোড করা হয়েছিল। ভিডিওটি দেখলে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং এই ভিডিওটি একই ঘটনার।
এরপর কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে প্রথম আলো, আজকের পত্রিকা ও দ্য স্টেটসম্যানের মতো বেশ কিছু বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট মেলে। খবর অনুযায়ী, বাংলাদেশি নৌসেনা এই জেলেদের আটক করার পর মোংলা থানার কাছে হস্তান্তর করে। মোংলা থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি আনিসুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের জলসীমায় অবৈধ প্রবেশ ও মাছ শিকারের অভিযোগে মোংলা থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।
পাশাপাশি মোংলা উপজেলার বরিষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা মো. জাহিদুল ইসলাম জানান যে উদ্ধার হওয়া দুটি ট্রলারের মাছ নিলাম করে দেওয়া হয়। ভ্যাট-সহ মোট মাছ নিলাম হয় ১৭ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা।
ভারতের সরকারী সংস্থা আকাশবাণী এবং দ্য হিন্দুর মতো সংবাদ মাধ্যমেও এই সংক্রান্ত খবর প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, এই মৎসজীবীরা দক্ষিণ ২৪ পরগণার কাকদ্বীপ থেকে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন যখন জলসীমা পেরিয়ে যাওয়ার অভিযোগে তাদের আটক করা হয়। এই জেলেদের নিরাপদে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য তখন থেকেই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার এবং বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় দূতাবাস সক্রিয় রয়েছে।
সুতরাং, বুঝতে বাকি থাকে না যে বাংলাদেশে আটক হওয়া ভারতীয় জেলেদের অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী বলে শেয়ার কর হচ্ছে যা অসত্য এবং বিভ্রান্তিকর।

ভিডিওটি বনগাঁ সীমান্তের যেখানে অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের দেশে ফেরত পাঠানো হচ্ছে।
ভিডিওটি গত জুলাই মাসের, বাংলাদেশের মোংলা উপজেলার। মাছ ধরতে গিয়ে বাংলাদেশি জলসীমায় ঢুকে পড়ায় ৩৪ জন ভারতীয় মৎসজীবীকে আটক করার দৃশ্য।