
সম্প্রতি একটি ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে একটি বিশালাকার পাথরের খণ্ড দেখা যাচ্ছে। এই পাথরের ছবিটি পোস্ট করে তা মিশরে তৈরি পিরামিডের জন্য আনা পাথর বলে দাবি করা হচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, কেউ কেউ এই ছবিটি শেয়ার করে লিখছেন, "এই পাথরের ব্লকটি প্রায় দুই মিলিয়ন পাথরের মধ্যে একটি যা পাঁচ হাজার বছরেরও বেশি সময় আগে (আনুমানিক) মিশরের গ্রেট পিরামিড তৈরির জন্য কাটা, টেনে আনা এবং ঈর্ষনীয় উচ্চতায় তোলা হয়েছিল। এ কেমন করে সম্ভব? তাহলে সত্যিই কী আমাদের ইতিহাসে কিছু গুরুতর ভুল রয়েছে?"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই পাথরটি ইজিপ্টে পাওয়া যায়নি। সেই সঙ্গে এই পাথরের সঙ্গে ইজিপ্টের পিরামিডের কোনও সম্পর্ক নেই।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
সবার প্রথম রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে আমরা এই পাথরের আসল ও পূর্ণকায় ছবিটি Smithsonian Magazine-এর ওয়েবসাইটে খুঁজে পাই। ২০১৪ সালের ৩ ডিসেম্বর ছবি-সহ একটি ছোট প্রতিবেদন প্রকাশ করে লেখা হয় যে, মানুষ দ্বারা নির্মিত সবথেকে বড় পাথরের খণ্ডটি সবেমাত্র লেবাননে আবিষ্কার করা হয়েছে।
এর থেকে একটা বিষয় আন্দাজ করা যায় যে এই পাথরটি আদৌ পিরামিডের অকুস্থল ইজিপ্টে নয় লেবাননে উদ্ধার করা হয়েছিল। এখানে একটা বিষয় উল্লেখ্য, লেবাবনন ও ইজিপ্ট পৃথক মহাদেশের অন্তর্ভুক্ত। ইজিপ্ট আফ্রিকা মহাদেশে, এবং লেবানন এশিয়ায়। দুটি দেশের মধ্যে ভৌগলিক দূরত্বও অনেকটাই।
Smithsonian Magazine-এর ওয়েবসাইটে এই ছবি প্রকাশ করে লেখা হয়, লেবাননের বালবেক নামের একটি এলাকায় একটি চুনাপাথরের খনিতে পাওয়া এই ব্লকটির মাপ ৬৪ ফুট বাই ১৯.৬ ফুট বাই ১৮ ফুট এবং ওজন আনুমানিক ১,৬৫০ টন।
এই বিষয়ে ২০১৪ সালেই ডিসকভারির একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছিল। যা থেকে জানা যায়, পাথরটির বয়স আনুমানিক ২০০০ বছর। এ ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় উল্লেখযোগ্য, পিরামিড আনুমানিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল খৃষ্টপূর্ব ২৫০০-২৬০০ বছর আগে। অর্থাৎ বর্তমান সময় থেকে প্রায় ৫৫০০ হাজার বছর আগে। যা থেকে আরেকটি বিষয় বোঝা যাচ্ছে যে পিরামিডের যা বয়স তার থেকে আরও কমপক্ষে ২৫০০ বছর পরে পাথরটি তৈরি হয়েছিল। এই পাথরটি আবিষ্কার করা হয়েছিল জার্মান প্রত্নতত্ত্ববিদদের একটি দলের দ্বারা। প্রত্নতত্ত্ববিদদের মতে, সম্ভবত কোনও মন্দিরে ব্যবহার করার জন্য পাথরটি কাটা করা হয়েছিল কিন্তু এটির প্রাকাণ্ড আকারের কারণে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া যায়নি।
এর পাশাপাশি আরও একটি জিনিস লক্ষ্যণীয়, ডিসকভারি এবং Smithsonian Magazine-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত দুটি ছবিতেই ওই সুবিশাল পাথরের গায়ে কিছু অক্ষর খোদাই করা আছে ও কালো ছোপ-ছোপ দাগ রয়েছে। কিন্তু যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে এই ধরনের কোনও দাগ নেই। যা থেকে পরিষ্কার হয় যে এডিটিং-এর মাধ্যমে পাথরের ওই চিহ্নগুলি মুছে দিয়ে তাকে বিভ্রান্তিকর দাবিতে পেশ করা হচ্ছে।
সেই সঙ্গে লেবানন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্য়াপক-গবেষক জেনিন আব্দুল মেসিহ-র এই বিষয়ক একটি গবেষণাপত্র আমরা খুঁজে পাই। যেখানে ওই প্রত্নতাত্ত্বিক অবিষ্কার সম্পর্কে বিশদে আলোচনা করা হয়েছে। কিন্তু এর সঙ্গে পিরামিডের কোনও সম্পর্কের কথা সেখানে বলা হয়নি।
সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে ২০১৪ সালে লেবাননে আবিষ্কৃত একটি বিশালাকার পাথরখণ্ডের ছবিকে মিথ্যে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছে।
ছবিতে যে সুবিশাল পাথরটি দেখা যাচ্ছে তা পাঁচ হাজারের বেশি পুরনো এবং পিরামিড তৈরির জন্য ইজিপ্টে আনা হয়েছিল।
এই বিশাল পাথরখণ্ডের পূর্ণাঙ্গ অংশ ২০১৪ সালে আবিষ্কৃত হয়েছিল লেবাননে। এটি প্রায় ২০০০ বছর আগেকার, এবং পিরামিডের সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।