
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট ছড়িয়ে পড়েছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে যে রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে ভারত স্থায়ী সদস্যতা পদ লাভ করছে। পোস্টের দাবি অনুযায়ী, এই ঘটনার ফলে এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার সূচনা হবে। আমেরিকার আপত্তি উপেক্ষা করেই নাকি এই বিরাট ঘোষণা করা হয়েছে, এমনও দাবি করা হয়েছে ওই পোস্টে।
ভাইরাল পোস্টের একটি পর্যায়ে লেখা হয়েছে, “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিধর দেশের প্রবল বিরোধিতা সত্ত্বেও ভারত এই অসাধ্য সাধন করেছে। যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে ভারতের অন্তর্ভুক্তি আটকে দেওয়ার চেষ্টা করে, তখন জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ এক অভূতপূর্ব পদক্ষেপ গ্রহণ করে। পরিষদের '৩ নং ধারার ৬ নম্বর অনুচ্ছেদ' প্রয়োগের মাধ্যমে, ৮০ শতাংশেরও বেশি সদস্য রাষ্ট্রের সমর্থনে মার্কিন ভেটোকে অগ্রাহ্য করা হয়।”
সেই সঙ্গে এই পোস্টে আরও লেখা হয় যে, “রাশিয়া, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এমনকি চীনের মতো দেশগুলোর সমর্থন ভারতের দাবিকে আরও শক্তিশালী করে তোলে। ১৫৪টিরও বেশি দেশের এই বিপুল সমর্থন আমেরিকাকে আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিচ্ছিন্ন করে দেয় এবং ভারতের বিজয়কে সুনিশ্চিত করে। এই ঐতিহাসিক ঘোষণার পর জাতিসংঘের সভাকক্ষ "ভারত মাতা কি জয়" এবং "জয় হিন্দ" ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে, যা ভারতের কূটনৈতিক দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করে এবং পাকিস্তান, তুরস্কের মতো প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলোকে নীরব করে দেয়।”
আজ তক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি পুরোপুরি ভুয়ো। ভারতের পক্ষ থেকে এই ধরনের দাবি অনেক দিন ধরে করা হলেও এই সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা বা পদক্ষেপ করা হয়নি যার ফলে ভারত স্থায়ী সদস্যতা লাভ করে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
যদি ভারত সত্যিই রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হয়ে যেত, তবে তা কেবল ভারতের জন্য নয় বরং গোটা আন্তর্জাতিক মহলের জন্য হতো বিরাট খবর। নানা সংবাদ মাধ্যমে এই নিয়ে খবর প্রকাশ পেত। কিন্তু ভারতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনও সংবাদ মাধ্যমেই এই সংক্রান্ত কোনও খবর আমাদের নজরে পড়েনি। এর থেকেই আন্দাজ করা যায় যে দাবিটি ভুয়ো।
এরপর রাষ্ট্রসঙ্ঘের ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায় সেখানে আগে যে পাঁচ দেশ স্থায়ী সদস্য হিসেবে ছিল বর্তমানেও তারাই রয়েছে। বর্তমানে, মাত্র পাঁচটি দেশ - চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র - রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য এবং শুধুমাত্র এই স্থায়ী সদস্যদেরই ভেটো ক্ষমতা রয়েছে।
স্থায়ী সদস্য ছাড়াও বর্তমানে দশটি দেশ রাষ্ট্রসঙ্ঘে অস্থায়ী সদস্য হিসেবে রয়েছে। এই দেশগুলো রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ দ্বারা দুই বছরের মেয়াদে নির্বাচিত হয়। বর্তমানে, আলজেরিয়া, ডেনমার্ক, গ্রীস, গায়ানা, পাকিস্তান, পানামা, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, সিয়েরা লিওন, স্লোভেনিয়া এবং সোমালিয়া রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদের ১০টি অস্থায়ী সদস্য।
এ বাদে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এমন একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায় যেখানে পরিষ্কার হয় জো বাইডেন জমানায় আমেরিকা, এবং সাম্প্রতিক সময়ে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং রাশিয়া ভারতকে রাষ্ট্রসঙ্ঘে নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হওয়ার জন্য তাদের সমর্থন জানিয়েছে।
ফলে সব মিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে ভাইরাল দাবিটি ভিত্তিহীন, এবং এর নেপথ্যে কোনও সত্যতা নেই।
ভারত রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী সদস্যপদ পেয়েছে।
এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। রাষ্ট্রসঙ্ঘের নিরাপত্তা পরিষদে চীন, ফ্রান্স, রাশিয়া, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রই বর্তমানে স্থায়ী সদস্য।