
রাজ্যের স্বীকৃতি ফেরানো-সহ একাধিক দাবিতে সম্প্রতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল লাদাখ। ২৪ সেপ্টেম্বর দফায় দফায় চলে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও লাদাখের দৃশ্য দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একটি রাস্তায় সেনাবাহিনীর গাড়ি ও সদস্যদের তাড়া করছে স্থানীয়রা। ভিডিওটি পোস্ট করে সেটিকে লাদাখের ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উদ্দেশে তীর্যক মন্তব্য করা হয়েছে।
ভিডিওটির সঙ্গে থাকা ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “অমিট শাহর জন্য সব চেয়ে সে*ফ জায়গা বাংলা। লাদাখ তো মনিপুরের চেয়েও ভয়ং*কর রুপ ধারণ করছে। বাংলা বিখ্যাত রাজাকার দের জন্য। তাই বাংলাই ঠিক আছে, বাকি জায়গায় গেলেই দৌ*ড় করাবে।” (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত)।
অর্থাৎ ভিডিওটি দেখিয়ে একে লাদাখের অবস্থা বলে দাবি করা হয়েছে।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে লাদাখে সম্প্রতি তৈরি পরিস্থিতির সঙ্গে এই ভিডিও-র কোনও সম্পর্ক নেই। এই ঘটনাটি ইন্দোনেশিয়ার, যা গত অগস্ট মাসে ঘটেছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেস সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও Angin Kurima নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর পেজে পাওয়া যায়। ভিডিওটি তিনি গত ২৭ অগস্ট পোস্ট করেছিলেন। যা থেকে পরিষ্কার যে এর সঙ্গে লাদাখের পরিস্থিতির কোনও সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয়।
ভিডিওটি পোস্ট করে তিনি ক্যাপশনে লেখেন, ‘এটি ২৭ অগস্ট ২০২৫-এ পশ্চিম পাপুয়া, সরোং-এর পরিস্থিতি।’ প্রসঙ্গত, সরোং হলো ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম পাপুয়ায় অবস্থিত একটি শহর। এরপর ওই ব্যক্তি ক্যাপশনে আরও লেখেন, “সরোং শহরে ইন্দোনেশিয়ান জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী (টিএনআই) এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের একে অপরের উপর আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে, কারণ বাসিন্দারা গণতন্ত্রপন্থী কর্মীদের মাকাসারে স্থানান্তরের বিরোধিতা করছেন।”
Nicho Silalahi নামে এক ইন্দোনেশিয়ার সমাজকর্মীও গত ২৭ অগস্ট এই ভিডিওটি শেয়ার করেছিলেন।
Meskipun mereka memegang senjata api, tapi mereka lebih memilih melarikan diri daripada menembaki rakyat sendiri.
— Nicho Silalahi (@Nicho_Silalahi) August 27, 2025
Jiwa prajurit sejati yang berasal dari rakyat tidak akan tega memukul bahkan menembak rakyatnya sendiri yang sedang melakukan Demostrasi, beda dengan Parcok main… https://t.co/vpI031ofIy pic.twitter.com/yFG7YxJ4ke
এই সূত্রগুলিকে কাজে লাগিয়ে কিছু কিওয়ার্ডের সাহায্যে খোঁজা হলে harianterbit.com নামের একটি ওয়েবসাইটে ওই একই ঘটনার ছবি-সহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। ২৭ অগস্ট প্রকাশিত এই খবর অনুযায়ী, চার জেলবন্দিকে সরোং থেকে মাকাস্সার স্থানান্তরিত করার সময় ওই এলাকায় ব্যাপক অশান্তির সৃষ্টি হয়। খবর অনুযায়ী, স্থানীয়রা ওই চার বন্দির স্থানান্তরের বিরুদ্ধে ছিল।
এই বিষয়ে ইন্দোনেশিয়ার সংবাদ সংস্থা Antara-এ ২৮ অগস্ট প্রকাশিত এক খবরে জানা যায়, যে চার জেলবন্দির স্থানান্তরকে কেন্দ্র করে সরোং উত্তপ্ত হয়ে ওঠে তারা সকলেই বিচ্ছিন্নতাবাদী। সরোং-এ তৈরি হওয়া এই পরিস্থিতির জেরে এলিট মোবাইল ব্রিগেডের ১০০ জন সদস্যকে ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়।
ফলে সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে ইন্দোনেশিয়ার একটি সম্পূর্ণ পৃথক এবং অসম্পর্কিত ঘটনার ভিডিওকে বর্তমানে লাদাখের পরিস্থিতি দাবি করে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে।
এই ভিডিওটি লাদাখের যেখানে স্থানীয়রা সেনাবাহিনীকে তাড়া করছে।
ভিডিওটি ইন্দোনেশিয়ার সরোং শহরের। গত ২৭ অগস্ট চার বিচ্ছিন্নতাবাদী জেলবন্দী নেতার স্থানান্তর কেন্দ্র করে এই খণ্ডযুদ্ধ বাঁধে।