
সামনেই বিহারের বিধানসভা নির্বাচন। ভোটমুখী বাংলার প্রতিবেশী এই রাজ্যে ইতিমধ্যে প্রচার শুরু করে দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে বহুসংখ্যক যুবক-যুবতীকে একটি ভবন লক্ষ্য করে পাথর ছুড়তে এবং ভবনটি ভাঙচুর করতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে তাদের প্রতিহত করতে জল কামান প্রয়োগ করছে পুলিশ।
ভিডিওটি শেয়ার করে দবি করা হচ্ছে, বিহারে শুরু হয়েছে বিজেপি বিরোধী আন্দোলন এবং রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “বিহারে ছাত্র আন্দোলন শুরু বিহারে মুখ্যমন্ত্রীর দফতর ধংস।” (সব বানান অপরিবর্তিত) পাশাপাশি এই একই দাবিতে আরও পোস্ট দেখা যাবে এখানে, এখানে এবং এখানে।
অন্যদিকে এই একই ভিডিও শেয়ার করে কিছু ফেসবুক ব্যবহারকারী দাবি করেছেন, সেটি গুজরাটে বিজেপি সরকার এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বিরোধী আন্দোলনের দৃশ্য। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “#গুজরাট শান্তিতে নেই মোদির সাম্রাজ্যেও-- বিজেপি বিরোধী ছাএ আন্দোলন, মোদি হটাও দেশ বাঁচাও - গুজরাটে আন্দোলন কারীদের সঙ্গে সংঘর্ষ হামলা ভাংচুর।”
আবার কলকাতা ২৪*৭ নামাক একটি নিউজ পোর্টালের তরফে গত ১৪ সেপ্টেম্বর গুজরাটের ঘটনা দাবি করে বামফ্রন্ট নেতা বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের তরফে শেয়ার করা ভাইরাল ভিডিওটি নিয়ে একটি ফ্যাক্ট চেক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। পোর্টালটিতে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটি গুজরাটের নয় বরং সেটি নেপালের ঘটনা। অর্থাৎ ওই পোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য গুজরাটের ঘটনা দাবি করে নেপালের ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। (প্রতিবেদনটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি বিহার কিংবা গুজরাটের তো নয়ই, এমনকি সেটি নেপালেরও নয়।বরং এটি ২০২৫ সালের ৩০ আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার কেবুমেন রিজেন্সির প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেশটির ছাত্র-যুবকদের বিক্ষোভের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ৩০ আগস্ট ইন্দোনেশিয়া-ভিত্তিক একটি ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। যা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়, ভিডিওটি নেপালের বিক্ষোভের নয়। কারণ নেপালের জেন-জিদের বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের ৪ তারিখের পর। কিন্তু ভিডিওটি তার আগে থেকেই ওই ইউটিবউ চ্যানেলে রয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটি শেয়ার করে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, সেটি কেবুমেন রিজেন্সি ডিপিআরডি ভবনের সামনে বিক্ষোভের দৃশ্য।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২৫ সালের ৩০ অগস্ট ইন্দোনেশিয়া-ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম Pelita-তে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৩০ আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার কেবুমেন রিজেন্সির প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনের পাশাপাশি প্রশাসনিক ভবনটিতে ভাঙচুর চালায় দেশটির ছাত্র-যুবরা। মূলত ২৮ আগস্ট ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় একটি গাড়ির ধাক্কায় আফান কুর্নিয়াওয়ান নামক এক অনলাইন মোটরসাইকেল ট্যাক্সি চালকের মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং দোষী গাড়ি চালকের শাস্তির দাবিতে এই বিক্ষোভ প্রদর্শিত হয়। আরও একাধিক ইন্দোনেশিয়ান ভিত্তিক সংবাদমাধ্যমেও এই একই তথ্য পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে আমরা গুগল ম্যাপে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে অবস্থিত কেবুমেন রিজেন্সির প্রশাসনিক ভবনটি খুঁজে বার করি। এবং গুগল ম্যাপে প্রাপ্ত কেবুমেন রিজেন্সির প্রশাসনিক ভবন এবং তার পাশ্ববর্তী এলাকার ছবির সঙ্গে ভাইরাল ভিডিওর তুলনা করলে দুটির মধ্যে হুবহু মিল পাওয়া যায়। নীচে ভাইরাল ভিডিও এবং গুগল ম্যাপে প্রাপ্ত ছবির তুলনা দেখা যাবে।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ভারত এবং নেপালের সঙ্গে মিথ্যে সম্পর্ক জুড়ে ছড়ানো হচ্ছে ইন্দোনেশিয়ার কেবুমেনে আয়োজিত ছাত্র-যুবদের বিক্ষোভের ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, বিহারে বিজেপি বিরোধী আন্দোলন চলাকালীন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে হামলা চালিয়েছে বিক্ষোভকারী ছাত্ররা।
ভাইরাল ভিডিওটি বিহার কিংবা গুজরাটের তো নয়ই, এমনকি সেটি নেপালেরও সাম্প্রতিক বিক্ষোভেরও নয়। বরং এটি ইন্দোনেশিয়ার কেবুমেন রিজেন্সির প্রশাসনিক ভবনের সামনে দেশটির ছাত্র-যুবকদের বিক্ষোভের দৃশ্য।