
গত ৫ অগস্টের পর থেকে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে আদান-প্রদান কমেছে উল্লেখযোগ্যভাবে। এরপর আবার বাংলাদেশের একাধিক শিক্ষাঙ্গনে ভারতের জাতীয় পতাকা অবমাননার প্রতিবাদে সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছে। এই অবস্থায় যমুনা টিভির একটি ফটোকার্ড শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে কলকাতার চিকিৎসকেরা বাংলাদেশি রোগীদের জন্য ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ডিসকাউন্ট অর্থাৎ ছাড় দিচ্ছেন।
এই পোস্টে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম যমুনা টিভির একটি লোগো দেখা যাচ্ছে। সেই ফটোকার্ডে লেখা হয়েছে, "কলকাতার চিকিৎসকদের ঘোষণা বাংলাদেশের জন্য ৪০% ডিসকাউন্ট দেবো আপনারা আসুন নয়তোবা আমাদের হাসপাতাল বন্ধ হয়ে যাবে" (সকল বানান অপরিবর্তিত)
পোস্টটি শেয়ার করে আবার কেউ কেউ লিখেছেন, "চিকিৎসা সেবায় ৪০% ডিসকাউন্ট যা বাংলাদেশের উপর প্রতিশোধ নিতে ভারতীয় ডাক্তারদের ফাঁদ ! ভারতীয় ডাক্তারদের ফাঁদে পা দিবেন না। কারন চিকিৎসার নামে ভারতীয় ডাক্তাররা আপনাকে স্রেফ মেরে ফেলবে। অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্ট করে চিরদিনের জন্য পঙ্গূ করে দিবে। ইচ্ছা করে ভুল চিকিৎসা করে আপনার টাকা পয়সা খসাবে।
বর্তমানে তারা আপনাকে রুগী নয বরং জাতিগত ভাবে ভারতের শত্রু বাংলাদেশী হিসেবে জানছে। সে আপনাকে চিকিৎসা দিলেও সেই সাথে ক্ষতি করে দিবে। যে ভারতীয় ডাক্তার মেডিকেল শপথ উপেক্ষা করে বাংলাদেশের উপর আগ্রাসী ভারতের সমর্থনের জন্য বাংলাদেশের রুগীদের চিকিৎসা দিতে অস্বীকার করে সে ডাক্তার নামের কশাই। তার হাতে রুগীর নিরাপত্তা যেন শিয়ালের কাছে মুরগী রাখা। জয় শ্রী রাম শ্লোগান দিয়ে হিন্দুত্ববাদের জন্য ওরা আপনাকে ৪০ বার খু*ন করতে পারে।।
বাংলাদেশে সহ আশেপাশের অনেক দেশেই ভারতের চেয়েও ভাল ও কম খরচের বিশ্ব মানের চিকিৎসা পাওয়া যায়। তাদের সেবা নিন। কোনভাবেই বাংলাদেশর শত্রু রাষ্ট্র ভারতে চিকিৎসা নিতে যাবেন না।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে উক্ত ফটোকার্ডটি ভুয়ো। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের রোগীদের জন্য কলকাতার কোথাও ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্ট দেওয়ার কথা ঘোষণা করা হয়নি।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
কোনও চিকিৎসক সংগঠন বা হাসপাতাল যদি বাংলাদেশের রোগীদের জন্য এমন কোনও ছাড় ঘোষণা করে থাকতো তবে তা নিশ্চিতভাবে সংবাদ আকারে কোথাও না কোথাও প্রকাশ পাবে। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এমন কোনও খবর আমাদের নজরে আসেনি।
যেহেতু সেই ফটোকার্ডে বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যম যমুনা টিভির একটি লোগো দেখা যাচ্ছিল, তাই আমরা যমুনা টিভির বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পেজে ওই ফটোকার্ড খোঁজার চেষ্টা করি। তখন দেখা যায়, ২০২৪ সালের ৪ ডিসেম্বর হুবহু একই ধরনের একটি থাম্বনেল ব্যবহার করে যমুনা টিভির ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে সেখান তথ্য ছিল অন্য।
সেই থাম্বনেলে লেখা ছিল, "কলকাতার চিকিৎসকদের ঘোষণা। বাংলাদেশের রোগী দেখবেন তারা।" দুটি ছবি একসঙ্গে তুলনা করলেই পরিষ্কার হয়ে যায় যে "বাংলাদেশের রোগী দেখবেন তারা" কথাটি মুছে দিয়ে ৪০% ডিসকাউন্টের বিষয়ে লেখা হয়েছে।
তবে কোন প্রেক্ষাপটে এই ঘোষণা চিকিৎসকরা করেছিলেন তা বলা দরকার। বাংলাদেশের একাধিক জায়গায় ভারতের জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনা সামনে আসার পর জনাকয়েক চিকিৎসক ও কলকাতার মানিকতলার জেএন রায় হাসপাতাল ঘোষণা করেছিল যে তারা কোনও বাংলাদেশি রোগীর চিকিৎসা করবে না। এই ঘোষণা প্রচার হওয়ার পর নানা আশঙ্কা তৈরি হওয়ায় কলকাতার বেশ কিছু চিকিৎসক সাংবাদিক বৈঠক করে জানান, তারা রোগী দেখবেন।
তবে ছাড় বা ডিসকাউন্ট যে কোথাও দেওয়া হয়নি এমনটা নয়। বাংলাদেশি রোগীদের দেখা হবে এবং চিকিৎসা করা হবে এই ঘোষণার পাশাপাশি বেহালা বালানন্দ ব্রম্ভচারি হসপিটাল এণ্ড রিসার্চ সেন্টারের সুপার ডক্টর সুশান্ত সেনগুপ্ত ও ট্রাস্টের সম্পাদক দীপক সরকার ঘোষণা করেছিলেন যে তারা বাংলাদেশ থেকে আসা রোগীদের ১০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেবেন।
তবে যমুনা টিভির লোগো সম্বলিত ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্টের দাবি করে যে ফটোকার্ডটি ভাইরাল হয়েছে, তা যে ভুয়ো সেটা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
কলকাতার চিকিৎসকেরা বাংলাদেশি রোগীদের জন্য চিকিৎসার খরচের উপর ৪০ শতাংশ ডিসকাউন্ট বা ছাড় দিয়েছেন।
এই ফটোকার্ডটি ভুয়ো এবং সম্পাদিত। কলকাতার একটি হাসপাতাল ১০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ঘোষণা করলেও বাকিরা তেমন কিছু করেনি।