
এক ব্যক্তিকে একটি পোস্টে বেঁধে রেখে ঘিরে ধরে কয়েকজনের মারধর করার ভিডিও সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হতে শুরু করেছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, শুধুমাত্র বিজেপিকে সমর্থন করার কারণে ওই ব্যক্তিকে তৃণমূলের 'গুন্ডা'রা নির্মমভাবে মেরেছে।
ভিডিওতে ওই ব্যক্তিকে হাতজোড় করে ক্ষমা চাইতে দেখা যাচ্ছে। অন্যদিকে, ওই ব্যক্তির উপর চড়াও হওয়া স্থানীয়রা কেউ লাঠি, কেউ বা গাছের ডাল দিয়ে তাকে মেরে চলেছেন। ভিডিওটি পোস্ট করে বেশ কিছু ফেসবুক পেজ থেকে লেখা হয়েছে, "কোথায় গণতন্ত্র কোথায় গণতন্ত্র কোথায় গণতন্ত্র পশ্চিমবাংলায় নদীয়া জেলায় বিজেপি সাপোর্ট করে বলে তাই তাকে তুলে এনে বিনা কারণে টিএমসির কিছু গুন্ডা তাকে বিনা কারণ তাকে বিনা মারছে নির্মম ভাবে।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি অসত্য। বিজেপিকে সমর্থনের কারণে নয় বরং মোবাইল চোর সন্দেহে স্থানীয়রা ওই ব্যক্তিকে মারধর করে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই ব্যক্তিকে মারধর করার একটি ছবি বর্তমান পত্রিকার একটি খবরে পাওয়া যায়। গত ৫ জুন প্রকাশিত সেই খবরে লেখা হয়, এই ঘটনাটি নদীয়ার কৃষ্ণনগরের পাঁচ মাথা মোড় এলাকার।
খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালে সৌরজিৎ বিশ্বাস নামের এক বাসিন্দার বাড়িতে নির্মাণের কাজ চলার সময় যখন নির্মাণ শ্রমিকরা চা খেতে বেরিয়েছিলেন, তখন ওই ব্যক্তি উক্ত বাড়িতে ঢুকে মোবাইল চুরির চেষ্টা করতে গিয়ে হাতে-নাতে ধরা পড়ে যান সৌরজিৎ বিশ্বাসের ছেলে হাতে। এরপর পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে ধরে-বেঁধে মারধর শুরু করে।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করা হলে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা, এমনকী রিপাবলিক বাংলারও একটি খবর পাওয়া যায়। সেই সকল রিপোর্টে বলা হয়, নির্মাণ শ্রমিকরা চা খেতে বের হলে ওই ব্যক্তি মোবাইল চুরির চেষ্টা করে। তখন বাড়ির মালিকের ছেলে দেখে ফেললে এরপর ধরে গণপিটুনি দেওয়া হয়। ঘটনার খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। এরপর অভিযুক্তকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পুলিশ ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম আজতকের নদীয়া জেলার প্রতিনিধির সঙ্গে। তিনি আমাদের জানান, ওই এলাকায় গত কয়েকদিন যাবৎ একাধিক মোবাইল চুরির ঘটনা ঘটেছে। যে কারণে স্থানীয়রা ক্ষোভে ফুঁসছিলেন। এই আবহে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ওই ব্যক্তি ধরা পড়ায় মানুষ রাগে ফেটে পড়ে, এবং গণপিটুনির ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি, এই ঘটনা নিয়ে আমরা ওই বাড়ির নির্মাণশ্রমিক এবং সৌরজিৎ বিশ্বাসের আত্মীয় তথা স্থানীয়দের বক্তব্যও পাই। যা নীচে দেখা যাবে।
সবমিলিয়ে কার্যত প্রমাণ হয়ে যায় যে মোবাইল চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়ার ভিডিওকে একটি ভুয়ো, রাজনৈতিক রং দিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবিতে শেয়ার করা হচ্ছে।
বিজেপিকে সমর্থন করার অপরাধে তৃণমূলের গুন্ডারা নদীয়ায় এই ব্যক্তিকে মারধর করেছে।
ঘটনাটি ৫ জুন কৃষ্ণনগরে ঘটে। একটি বাড়িতে নির্মাণকাজ চলাকালীন এই ব্যক্তি ঢুকে মোবাইল চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে গেলে তাকে ধরে-বেঁধে মারধর করা হয়।