
সম্প্রতি ইন্ডিগোর একটি বিমানে এক ফেজটুপি পরিহিত মুসলিম ব্য়ক্তিকে আচমকাই সপাটে অপর এক ব্য়ক্তির চড় মারার ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি পোস্ট করে অনেকেই দাবি করছেন যে এখানে এক হিন্দু ব্যক্তি দ্বারা ওই মুসলিম ব্যক্তিকে চড় মারা হয়েছে।
এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে আক্রান্ত ব্যক্তি ভীত ও সন্ত্রস্ত অবস্থায় রয়েছেন যখন অপর ব্যক্তি আচমকাই একটি চড় মেরে দিচ্ছেন। সেই মুহূর্তে বিমানসেবিকা আক্রান্ত ব্যক্তিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এবং আশেপাশে থাকা অন্যান্য যাত্রী ও যিনি ভি়ডিওটি করছিলেন, সবাই মিলে তীব্র আপত্তি জানাচ্ছেন এবং বলছেন যে তাঁর গায়ে হাত তোলা উচিত হয়নি।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "IndiGo ফ্লাইটে হঠাৎ একজন মুসলিম ছেলে অসুস্থ হয়ে যাওয়াই উনার গায়ে হাত উঠালেন একজন হিন্দু ধর্মের মানুষ।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে দাবিটি সঠিক নয়। এই ঘটনায় চড় মারায় অভিযুক্ত ব্যক্তিও মুসলিম সম্প্রদায়েরই ছিলেন। পুলিশ সেই তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
এই ঘটনা সম্পর্কে কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে খোঁজ হলে ১ অগস্ট প্রকাশিত এনডিটিভি-র একটি রিপোর্ট পাওয়া যায়। সেই রিপোর্ট থেকে জানা যায়, যে ব্যক্তিকে চড় মারা হয়েছিল তিনি অসমের বাসিন্দা এবং তাঁর পরিবার প্রাথমিকভাবে দাবি করে, এই ঘটনার পর থেকে তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না।
রিপোর্টে আরও লেখা হয়, আক্রান্ত যাত্রীর নাম হুসেন আহমেদ মজুমদার। ৩২ বছর বয়সী হুসেন মুম্বই থেকে কলকাতা গয়ে অসমের শিলচরে যাওয়ার ইন্ডিগো বিমান 6E-2387-তে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু যাত্রাকালে আচমকাই তাঁর প্যানিক অ্যাটাক হয়। তখন বিমানের ক্রু সদস্যরা ওই ব্যক্তিকে বিমান থেকে বের করে আনার প্রক্রিয়া শুরু করলে মাঝের আসনে থাকা এক ব্যক্তি হুসেনকে চড় মেরে দেন। যে ব্যক্তি হুসেনকে চড় মারেন তাঁকে হাফিজুল রহমান হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং বিমানটি কলকাতায় নামলে তাঁকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
এর থেকে একটা বিষয় মোটামুটি পরিষ্কার হয়ে যায় যে এই ঘটনায় আক্রান্ত ও আক্রমণকারী ব্যক্তি, দু'জনেই মুসলিম সম্প্রদায়ের ছিলেন। ২ অগস্ট দুপুরে দ্য আসাম ট্রিবিউনের একটি রিপোর্টে লেখা হয়, হুসেন আহমেদ মজুমদারকে প্রাথমিকভাবে নিখোঁজ মনে হলেও পরে জানা যায় তিনি কলকাতা বিমানবন্দরে সিআইএসএফ হেফাজতেই ছিলেন। হুসেন আহমেদ প্রথমবার বিমানে যাত্রা করছিলেন এবং সম্ভবত সেই কারণেই তাঁর প্যানিক অ্যাটাক হয়। এই প্রক্রিয়ায় তিনি নিজের মোবাইলও হারিয়ে ফেলেন।
বিষয়টি নিয়ে ১ অগস্ট সন্ধ্যায় ইন্ডিগো এয়ারলাইনের পক্ষ থেকে এক্স হ্যান্ডেলে একটি পোস্ট করে জানানো হয়, তারা এই ধরনের কাজের তীব্র নিন্দা করে এবং চড়কাণ্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে কলকাতা বিমানবন্দরে নামার পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
We are aware of an incident involving a physical altercation on board one of our flights. Such unruly behaviour is completely unacceptable and we strongly condemn any actions that compromise the safety and dignity of our passengers and crew.
— IndiGo (@IndiGo6E) August 1, 2025
Our crew acted in accordance with…
আরও খোঁজা হলে দেখা যায় বিধাননগর সিটি পুলিশের ফেসবুক পেজ থেকেও এই বিষয়ে একটি পোস্ট করা হয়েছে। কলকাতা বিমানবন্দর বিধাননগর সিটি পুলিশের অধীনে পড়ে। বিধাননগর পুলিশ জানায়, ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে অভিযোগ পেয়ে সেই ভিত্তিতে তারা পদক্ষেপ করেছে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ব্যক্তির হাফিজুল রহমান, এবং আক্রান্ত ব্যক্তির নাম হুসেন আহমেদ মজুমদার বলেও নিশ্চিত করা হয়।
সবমিলিয়ে বলাই যায় যে ইন্ডিগোর বিমানের এই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক দাবিতে শেয়ার করা হলেও এতে কোনও সাম্প্রদায়িক রং নেই।
ইন্ডিগোর বিমানে এক মুসলিম ব্যক্তি অসুস্থ হয়ে যাওয়াও একজন হিন্দু ব্যক্তি তাঁকে চড় মারেন।
চড় মারায় অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম হাফিজুল রহমান, তিনিও মুসলিম ধর্মাবলম্বী।