
এ বার পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুতের দাম নিয়ে একটি পোস্টকার্ড বেশ ভাইরাল হল সোশ্যাল মিডিয়ায়। বেশ কয়েকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী একটি পোস্টকার্ড সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করছেন, যেখানে উত্তর প্রদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যুতের দামের তুলনা করা হয়েছে।
ভাইরাল পোস্টকার্ডে দাবি করা হচ্ছে, উত্তর প্রদেশের গ্রামীণ এলাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ২ টাকা থেকে কমিয়ে ১ টাকা, এবং শহরাঞ্চলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের মূল্য ৬ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। ঠিক তখনই পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ এলাকায় প্রতি ইউনিট-পিছু ৮.৩১ টাকা নেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে শহরাঞ্চলে এক ইউনিট বিদ্যুতের দাম পড়ছে ৮.৪৪ টাকা।
ভাইরাল পোস্টকার্ডের আর্কাইভ এখানে ও এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া-টুডের অ্যান্টি ফেক নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল পোস্টকার্ডের দাবিটি বিভ্রান্তিকর। প্রথমত, উত্তর প্রদেশের নতুন বিদ্যুতের মূল্য সকলের জন্য এবং সব ক্ষেত্রে কার্যকর নয়। দ্বিতীয়ত, পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের দাম নিয়ে যেমনটা পোস্টকার্ডে দাবি করা হয়েছে, তার সঙ্গে বাস্তবের অনেকটাই ফারাক রয়েছে। এ রাজ্যে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বিল মূলত নির্ধারিত হয় কত পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হচ্ছে, তার উপর।
আফয়া তদন্ত
ভাইরাল পোস্টের সত্যতা যাচাই করতে সবার প্রথম আমরা উত্তর প্রদেশের বিদ্যুতের বিল অর্ধেক হয়ে যাওয়ার দাবিটি খতিয়ে দেখি। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে গত ৭ জানুয়ারি প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন আমরা দেখতে পাই। যার শিরোনামে লেখা ছিল, কৃষকদের বিদ্যুতের খরচ ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে, যাতে কমপক্ষে ১৩ লক্ষ চাষি উপকৃত হবেন। প্রতিবেদনটির ভিতরে লেখা হয়, নির্বাচনের প্রাক্কালে কৃষিকাজে ব্যবহার হওয়া বিদ্যুতের খরচ অর্ধেক করে দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথ সরকার। অর্থাৎ, এই সুবিধা যে সকলে পাবেন না, তা স্পষ্টই বোঝা যাচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে আমরা আরও নিশ্চিত হই উত্তর প্রদেশের বিদ্যুৎমন্ত্রী শ্রীকান্ত শর্মার ৭ জানুয়ারির টুইটে। পরপর তিনটি টুইটের মাধ্যমে তিনি মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথকে অভিনন্দন জানিয়ে লেখেন, "কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করার লক্ষ্যে ব্যক্তিগত নলকূপ কানেকশনের বিদ্যুতের মূল্য ৫০ শতাংশ কম করা হয়েছে।"
PM श्री @narendramodi जी के संकल्प किसानों की आय दोगुनी करने की दिशा में निजी नलकूप कनेक्शनों की विद्युत दरों में 50% की कमी कर बड़ी राहत देने के लिए CM श्री @myogiadityanath जी का हार्दिक अभिनंदन। (1/3) #सोच_ईमानदार_काम_दमदार #फिर_एक_बार_भाजपा_सरकार @BJP4India @BJP4UP
— Shrikant Sharma (@ptshrikant) January 7, 2022
পরবর্তী টুইটে তিনি আরও জানান, ব্যক্তিগত নলকূপের ক্ষেত্রে নতুন বিলে গ্রামীণ মিটার্ড কানেকশনে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম ২ টাকা থেকে কমে ১ টাকা করা হয়েছে। পাশাপাশি শহরাঞ্চলে এই একই ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি মূল্য ৬ টাকা থেকে কমিয়ে ৩ টাকা করা হয়েছে। সুতরাং, একটা বিষয় ইতিমধ্যেই স্পষ্ট যে বিদ্যুতের ন্যূনতম এই দাম সবার জন্য, এবং সকল ক্ষেত্রে কার্যকর নয়।
निजी नलकूप के नये बिलों में ग्रामीण मीटर्ड कनेक्शन में बिजली दर 2 रुपये/ यूनिट से घटकर 1 रुपये/ यूनिट व फिक्स चार्ज 70 रुपये प्रति हॉर्स पावर से घटकर 35 रुपये/हॉर्स पावर होगा। अनमीटर्ड कनेक्शन में फिक्स चार्ज 170 रुपये/ हॉर्स पावर की जगह 85 रुपये/हॉर्स पावर होगा।(2/3) @BJP4India
— Shrikant Sharma (@ptshrikant) January 7, 2022
शहरी मीटर्ड कनेक्शन में बिजली दर 6 रुपये/ यूनिट से घटकर 3 रुपये/यूनिट व फिक्स चार्ज 130 रुपये/ हॉर्स पावर से घटकर 65 रुपये/हॉर्स पावर होगा। एनर्जी एफिशिएंट पंप में दर 1.65 रुपये/ यूनिट से घटकर 83 पैसे/यूनिट व फिक्स चार्ज 70 रुपये/हॉर्स पावर की जगह 35 रुपये/हॉर्स पावर होगी। (3/3)
— Shrikant Sharma (@ptshrikant) January 7, 2022
পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুতের মাসুল কেমন?
পশ্চিমবঙ্গে বিদ্যুত সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে মূলত দুটি সংস্থা। প্রথমটি রাজ্য সরকার পরিচালিত ডাব্লুবিএসইডিসিএল। যা মোটামুটি গোটা রাজ্যেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। দ্বিতীয়টি হল আরপি-সঞ্জীব গোয়েঙ্কা গ্রুপের মালিকাধীন সিইএসসি। যা প্রধানত কলকাতা এবং তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়। বাংলার বিদ্যুতের খরচের হালহকিকত জানতে এই দুই সংস্থারই বিল নির্ধারণ করার পরিকাঠামো আমরা খতিয়ে দেখি।
ডাব্লুবিএসইডিসিএল
সবার প্রথম আসে সরকারি সংস্থা ডাব্লুবিএসইডিসিএল। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই সংস্থার বিলের পরিকাঠামো আমরা খুঁজে পাই। যেখানে উল্লেখ করা ছিল, বঙ্গে গ্রামাঞ্চলে গৃহস্থালীতে প্রথম ১০২ ইউনিট ব্যবহারের ক্ষেত্রে ইউনিট প্রতি খরচ পড়ে ৫ টাকা ২৬ পয়সা। এরপর বিদ্যুতের ব্যবহার যত বাড়ে, ধাপে ধাপে ইউনিট প্রতি খরচও বৃদ্ধি পেতে থাকে। যদি কোনও উপভোক্তা মাসে ৯০০ ইউনিটেরও বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ফেলেন, তখন ইউনিট প্রতি খরচ ৮ টাকা ৯৯ পয়সা পড়ে।
একইভাবে শহরাঞ্চলের ক্ষেত্রে প্রথম ১০২ ইউনিটের জন্য ইউনিট প্রতি খরচ লাগে ৫ টাকা ৩০ পয়সা। ব্যবহার অনুযায়ী ধাপে-ধাপে তা বাড়তে শুরু করে। এবং সর্বোচ্চ ৯০০ ইউনিটের বেশি কেউ বিদ্যুৎ ব্যবহার করলে ইউনিট প্রতি খরচ ৮ টাকা ৯৯ পয়সা করে ধার্য করা হয়। ভাইরাল হওয়া দাবি অনুযায়ী, গ্রামাঞ্চলে ইউনিট প্রতি ৮.৩১ টাকার বিষয়টি কোথাও উল্লেখ নেই।
সিইএসসি
কলকাতা ও তার আশেপাশে বিদ্যুতের খরচ বাকি রাজ্যের তুলনায় অনেকটাই বেশি সেই নিয়ে কোনও সংশয় নেই। তবে সিইএসসি-র নিজস্ব ওয়েবসাইটের মাসুলের তালিকাতেও ইউনিট প্রতি তেমন কোনও সংখ্যার উল্লেখ নেই যা ভাইরাল পোস্টকার্ডে করা হয়েছে। যেহেতু সিইএসসি গ্রামাঞ্চলে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে না, তাই তাদের তালিকায় শুধু শহরাঞ্চলের গৃহস্থালীর বিদ্যুতের খরচই তুলে ধরা হয়েছিল।
সিইএসসি-র রেটচার্ট অনুযায়ী, শহরাঞ্চলে প্রথম ২৫ ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ইউনিট প্রতি ৪ টাকা ৮৯ পয়সা খরচ পড়ে। এরপরের ৩৫ ইউনিটের জন্য লাগে ৫ টাকা ৪০। এভাবে ধাপে-ধাপে বাড়তে বাড়তে তা পৌঁছয় ইউনিট প্রতি ৮ টাকা ৯২ পয়সায়। যে গৃহস্থালীতে প্রতি মাসে ৩০০ ইউনিটের বেশি বিদ্যুৎ লাগে, সেই ক্ষেত্রে এই সর্বোচ্চ মূল্য ধার্য করা হয়।
সুতরাং, পরিশেষে এ কথা বলাই যায় যে পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলে বিদ্যুতের দাম নিয়ে যে দাবি করা হয়েছে, তা বিভ্রান্তিকর।
পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ অঞ্চলে ইউনিট-প্রতি বিদ্যুতের দাম ৮.৩১ টাকা। শহরাঞ্চলে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে দিতে লাগে ৮.৪৪ টাকা।
রাজ্য সরকারের বিদ্যুৎ দফতরের ধার্য অনুযায়ী, গ্রামীণ ও শহর এলাকায় প্রথম ১০২ ইউনিটের জন্য প্রতি ইউনিট পিছু খরচ পড়ে যথাক্রমে ৫.২৬ ও ৫.৩০ টাকা। কলকাতার ও পার্শ্ববর্তী এলাকার ক্ষেত্রে সিইএসসি ৪.৮৯ টাকা করে প্রথম ২৫ ইউনিট ধার্য করে। উভয় ক্ষেত্রেই উপভোক্তার বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ধাপে-ধাপে ইউনিট প্রতি দামও বৃদ্ধি পায়।