ফ্যাক্ট চেক: মাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্র 'ভাইজান'কে নিয়ে রচনা? ছড়াল ভুয়ো স্ক্রিনশট

একটি প্রশ্নপত্রের স্ক্রিনশট শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে দাবি করা হচ্ছে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় নাকি এই বছর "ভাইজান" ওরফে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: মাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্র 'ভাইজান'কে নিয়ে রচনা? ছড়াল ভুয়ো স্ক্রিনশটমাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্র 'ভাইজান'কে নিয়ে রচনা? ছড়াল ভুয়ো স্ক্রিনশট

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়েছে ২০২৩ সালের মাধ্যমিক। করোনার কারণে ২০২১ সালে বিরতি। এরপর ২০২২-এ লিখিত পরীক্ষা হয়। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এরই মাঝে সোশ্যাল মিডিয়ায় মাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্রের একটি স্ক্রিনশট ঘুরছে। যা শেয়ার করে অনেকে দাবি করছেন যে, পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে নাকি একটি প্রবন্ধ এ বারের পরীক্ষায় লিখতে দেওয়া হয়েছে।

ওই প্রশ্নপত্রের স্ক্রিনশট শেয়ার করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে দাবি করা হচ্ছে, মাধ্যমিক পরীক্ষায় নাকি এই বছর "ভাইজান" ওরফে ইন্ডিয়ান সেক্যুলার ফ্রন্টের (আইএসএফ) প্রতিষ্ঠাতা আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে একটি প্রশ্ন করা হয়েছিল।

এই প্রশ্নপত্রটির ১১ নম্বর প্রশ্নে কমবেশি ৪০০ শব্দের মধ্যে কোনও একটি বিষয় নিয়ে প্রবন্ধ লিখতে বলা হয়েছে। সেখানে একটি বিষয় হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, "আব্বাস সিদ্দিকি ভাইজানের জীবনীমূলক রচনা।"  

স্ক্রিনশটটি শেয়ার করে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী (Facebook) লিখেছেন "ভাইজান জিন্দাবাদ।" স্ক্রিনশটের ভেতরে লেখা রয়েছে, "আহারে কলিজা ঠান্ডা হয়ে গেল, এইবার #মাধ্যমিক_পরীক্ষায় আমাদের জান ভাইজান আব্বাস সিদ্দিকী ভাইজানের রচনা পড়েছে। আফসোস এই বছরে আমরাও যদি মাধ্যমিক দিতে পেতাম।" (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত)

একই দাবিতে ইউটউবেও একটি ভিডিয়ো শেয়ার করা হয়েছে।

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক টিম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, প্রশ্নপত্রের যে স্ক্রিনশটটি ভাইরাল হয়েছে, তা আসলে  এডিটিং-র সাহায্যে তৈরি। আসল অন্য একটি প্রশ্ন সরিয়ে সেখানে এডিটিং-র সাহায্যে আব্বাস সিদ্দিকি সম্পর্কে একটি কাল্পনিক প্রশ্ন যোগ করা হয়েছে।

কীভাবে খোঁজা হল সত্যতা?

Advertisement

যদি পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে সত্যিই মাধ্যমিকে প্রশ্ন করা হত- তবে এই নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে অবশ্যই খবর প্রকাশ পেত। কিন্তু তেমন কোনও প্রতিবেদন আমাদের নজরে পড়েনি। এরপর আমরা ২০২৩ সালের প্রশ্নপত্র খতিয়ে দেখি।

কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে আমরা সর্বপ্রথম ২০২৩ সালের মাধ্যমিকের বাংলা প্রশ্নপত্রটি খুঁজে পাই। সেই প্রশ্নপত্রের শেষ পাতায়, অর্থাৎ ৮ নম্বর পাতার ১১ নম্বর প্রশ্নে প্রবন্ধ সম্বন্ধিত প্রশ্নমালা দেখতে পাই। সেখানে ১০ নম্বর পূর্ণমানের প্রশ্নে প্রবন্ধ লেখার জন্য চারটি বিকল্প দেওয়া হয়েছে।

প্রথম, বর্তমান যুগ ও কুসংস্কার। দ্বিতীয়, বন ও বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ। তৃতীয় বাংলার ঋতু বৈচিত্র। চতুর্থ, একটি পথের আত্মকথা। ভাইরাল পোস্টের চতুর্থ প্রশ্নে আব্বাস সিদ্দিকি সংক্রান্ত প্রশ্ন দেখা গিয়েছিল যা এখানে নেই। এমনকি, বাকি যে তিনটি বিষয়ে প্রবন্ধ লেখার বিকল্প দেওয়া হয়েছিল, তারও মিল ২০২৩-এর প্রশ্নপত্রের সঙ্গে পাওয়া যায়নি।  

এরপর আমরা এর আগের বছর, অর্থাৎ ২০২২ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষার বাংলা প্রশ্নপত্রের শেষপাতার প্রশ্নগুলি খতিয়ে দেখি। সেখানে ওই ১১ নম্বর প্রশ্নে প্রবন্ধ লেখার জন্য চারটি বিকল্প দেওয়া হয়েছিল। যা ছিল যথাক্রমে বর্তমান জীবনে বিজ্ঞান, পরিবেশ ও মানুষ, তোমার দেখা একটি মেলা ও একটি নদীর আত্মকথা।

নীচের একটি কোলাজে ভাইরাল পোস্টের স্ক্রিনশটের সঙ্গে ২০২২ ও ২৩ সালের প্রশ্নপত্রের একটি তুলনা দেখা যাবে।

২০২২ সালের প্রশ্নে শুধুমাত্র আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে রচনা লেখার প্রশ্নটি বাদ দিলে, বাকি বিষয়গুলি সব মিলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে আব্বাসকে নিয়ে যে তথাকথিত প্রশ্ন করা হয়েছে তার রং ও অক্ষরের ফন্ট সবই আলাদা। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভাইরাল হওয়া স্ক্রিনশটটি আসলে ভুয়ো।

এ সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে আমরা দমদম শেঠবাগান হাইস্কুলের বাংলা শিক্ষক সুদীপ্ত মণ্ডলের সঙ্গেও যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান যে কোনও বছরই মাধ্যমিকে বাংলা বা অন্য কোনও প্রশ্নপত্রে আব্বাস সিদ্দিকিকে নিয়ে কোনও প্রশ্ন করা হয়নি।  

 

ফ্যাক্ট চেক

Facebook users

দাবি

এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পীরজাদা আব্বাস সিদ্দিকির জীবনী নিয়ে প্রবন্ধ লেখার প্রশ্ন করা হয়েছে।

ফলাফল

ভাইরাল স্ক্রিনশটটি ভুয়ো। ২০২২ সালের প্রশ্নপত্রের উপর অন্য প্রশ্ন সরিয়ে এডিট করে এটি বসানো হয়েছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement