বিগত কয়েক বছরে ভারতীয় রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। যার সৌজন্যে অবশ্যই বন্দে ভারত রয়েছে। ভারতে নির্মিত এই সেমি হাইস্পিড ট্রেন রেলওয়ের রূপরেখা বদলে ফেলছে ক্রমাগত। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই বন্দে ভারত ট্রেন নিয়েই একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে।
কয়েকটি ফেসবুজ পেজ এবং ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি প্রস্তাবিত টাইম টেবিলের ছবি ব্যবহার করে দাবি করা হচ্ছে, এ বার আসানসোল থেকে পুরীর রুটে চালু হতে চলেছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। এবং তা আসানসোল থেকে আদ্রা হয়ে বাঁকুড়া, মেদিনীপুর-খড়গপুরের উপর দিয়ে পুরী যাবে।
এই বিজ্ঞপ্তি দেখে অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় সেটি শেয়ার করে নিজেদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন, সঙ্গে লিখছেন, "বাঁকুড়া দিয়ে যাবে নতুন বন্দে ভারত। আসানসোল পুরী বন্দে ভারত। সম্ভাব্য সময়সূচি।"
এই মর্মে একটি ওয়েব পোর্টালে একটি খবরও প্রকাশ করে একই দাবি করা হয়েছে। যার আর্কাইভ সংস্করণ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে রেলের এই বিজ্ঞপ্তিটি ভুয়ো। এখনও পর্যন্ত আসানসোল-পুরী রুটে বন্দে ভারত চালানোর কোনও সিদ্ধান্ত রেলের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
যদি রেলের পক্ষ থেকে সত্যিই আসানসোল-পুরী রুটে কোনও বন্দে ভারত ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকত, তবে সেই সম্পর্কিত খবরও প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পাবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা এমন কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রতিষ্ঠানের খবর পাইনি যেখানে এই দাবি করা হয়।
পক্ষান্তরে, কিওয়ার্ড সার্চের দরুণ আমাদের নজরে নিউজ১৮ বাংলার একটি প্রতিবেদন নজরে পড়ে যা গত ৬ ডিসেম্বর প্রকাশ পেয়েছিল। সেখানে দাবি করা হয়, পূর্ব রেলের আসানসোল ডিভিশন স্পষ্ট জানিয়েছে যে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি এবং বিজ্ঞপ্তিটি পুরোপুরি ভুয়ো।
এরপর আমরা দেখতে পাই যে পূর্ব রেল হেডকোয়ার্টারের সরকারি ফেসবুক পেজ থেকে ৬ ডিসেম্বর একটি পোস্ট করে জানানো হয়েছে যে এহেন বিজ্ঞপ্তি ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন।
এই বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা যোগাযোগ করেছিলাম পূর্ব এবং দক্ষিণ পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র এবং আদিত্য কুমার চৌধুরীর সঙ্গে। তাঁরার জানিয়ে দেন যে এই ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত রেলের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি এবং এই ধরনের কোনও প্রস্তাবনাও আসেনি।
ভাইরাল বিজ্ঞপ্তিটি যে ভুয়ো, তা পূর্ব রেলের ওয়েবসাইট থেকে একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি ডাউনলোড করে তার সঙ্গে তুলনা করলেই প্রমাণ হয়ে যায়। প্রথমত, বিজ্ঞপ্তির যে সিরিয়াল নম্বর রয়েছে, সেখানে বছর উল্লেখ করা থাকে। কিন্তু ভাইরাল চিঠিতে তা ছিল না।
এ ছাড়াও একাধিক অসঙ্গতি রয়েছে। যেমন, ইংরাজিতে লেখা ইস্টার্ন রেলওয়ের নীচে আসল চিঠিতে কলকাতা লেখা রয়েছে, নকলটিতে নেই। এ বাদে সবথেকে বড় যে অসঙ্গতি তা হল- যে কোনও চিঠি বা বিজ্ঞপ্তির নীচে সেটি জারি করা ব্যক্তি বা আধিকারিকের স্বাক্ষর থাকে। এক্ষেত্রে নকল বিজ্ঞপ্তিতে কোনও স্বাক্ষর নেই।
ফলে বুঝতে বাকি থাকে না যে একটি মিথ্যে খবর ছড়িয়ে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
আসানসোল-পুরী রুটে নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হতে চলেছে।
এই রুটে বন্দে ভারত চালানোর কোনও সিদ্ধান্ত রেলের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়নি।