
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে যেখানে একটি সড়কের উপর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে কাতারে-কাতারে মানুষকে মশাল হাতে মিছিল করতে দেখা যাচ্ছে। মিছিলে অংশগ্রহণকারীদের হাতে সাদা রঙের একটি পতাকাও রয়েছে। মিছিল থেকে স্লোগানও তোলা হচ্ছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হয়েছে যে, অসমে নাকি এই মিছিলের মাধ্যমে নাকি রোহিঙ্গা ভাগাও নামক কোনও কর্মসূচি শুরু করা হয়েছে। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “আসামে রোহিঙ্গা ভাগাও কর্মসূচি।”
কেউ আবার একই ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, “আসামে অনুপ্রবেশকারী ভাগাও কর্মসূচি।”
আজ তক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটির সঙ্গে রোহিঙ্গা বা অনুপ্রবেশ বিরোধী কর্মসূচির কোনও সম্পর্ক নেই। এটি অসমের তিনসুকিয়ার ঘটনা যেখানে পৃথক দাবিতে এই মিছিল বের করা হয়েছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও নাজিমুদ্দিন সিদ্দিকী নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারীর প্রোফাইলে পাওয়া যায়। তিনি ভিডিওটি গত ৩ সেপ্টেম্বর পোস্ট করেছিলেন।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে তিনি লেখেন, “এই মিছিলটি গতকালকের (২ সেপ্টেম্বর), অসমের তিনসুকিয়া জেলার তালাপে বের করা হয়েছিল। এই মিছিলে যারা হাঁটছেন, তাঁরা মোরান সম্প্রদায়ের। অসমে তফসিলি উপজাতির (এসটি) মর্যাদা পাওয়ার দাবিতে তাঁরা আন্দোলন করছেন। উল্লেখ্য, মোরানরা অসমের প্রান্তিক ও বঞ্চিত সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি।”
এই বিষয়গুলিতে সূত্র ধরে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে নর্থ ইস্ট নাও-এ ২ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, তফসিলি উপজাতির (এসটি) মর্যাদা এবং স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে ধারাবাহিক আন্দোলনের সূচনা করেছে অল মোরান স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। মঙ্গলবার, ২ সেপ্টেম্বর, কড়া নিরাপত্তায় পরিবেষ্টিত হয়ে তিনসুকিয়ার তালাপে তারা একটি মশাল মিছিলেন আয়োজন করে।
৩ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে লেখা হয়, এই মিছিলের মাধ্যমে বিশেষভাবে মোরান স্বায়ত্তশাসিত কাউন্সিলের (এমএসি) বর্তমান আইনানুগ অবস্থান থেকে ভারতীয় সংবিধানের অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন ষষ্ঠ তফসিল কাঠামোয় উন্নীত করার দাবি তোলা হয়। এই পরিবর্তন হলে এই কাউন্সিল আরও বেশি স্বায়ত্তশাসন, বড় আইন প্রণয়ন ক্ষমতা ও সাংবিধানিক সুরক্ষা পাবে।
খবর অনুযায়ী, মোরান সম্প্রদায়ের এই দাবি ২০১৪ সালে বিজেপির নির্বাবনী প্রচারের সঙ্গে সম্পর্কিত, যেখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অসমের ছয়টি জনগোষ্ঠী—মোরান, তাই আহোম, মোটক, কোচ রাজবংশী, সুটিয়া এবং চা জনগোষ্ঠীকে—এই স্বীকৃতি প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।
৫ সেপ্টেম্বর ইটিভি অসমে প্রকাশিত একটি খবরে লেখা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর একই দাবিতে অসমের কাকপাথরেও একই ধরনের মিছিল বের করা হয়েছিল। যেখান থেকে বিজেপি বিরোধী স্লোগান তোলা হয় এবং মিথ্যে প্রতিশ্রুতির অভিযোগ তোলা হয়। মোজো নিউজের ফেসবুক পেজেও ৪ সেপ্টেম্বরের মশাল মিছিলের অপর একটি ভিডিও দেখতে পাওয়া যাবে।
সব মিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে যে অসমে মোরান সম্প্রদায়ের তফসিলি উপজাতির (এসটি) মর্যাদা পাওয়ার দাবিতে হওয়া আন্দোলোনের দৃশ্যকে ‘রোহিঙ্গা ভাগাও’ কর্মসূচি বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা বিভ্রান্তিকর।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে অসমে আয়োজিত ‘রোহিঙ্গা ভাগাও’ কর্মসূচি।
ভিডিওটি ২০২৫ সালের ২ সেপ্টেম্বরের। অসমের তিনসুকিয়া জেলার তালাপে মোরান সম্প্রদায়ের মানুষ তফসিলি উপজাতির (এসটি) মর্যাদা পাওয়ার দাবিতে মিছিল করেন।