
বন্দুক দেখিয়ে হুমকি দিয়ে এক ব্যক্তিকে জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার একটি ভিডিও ইদানীং সোশ্য়াল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে একে বিহারের বেগুসরাইয়ের ঘটনা বলে দাবি করা হচ্ছে। কোনও সমাজবিরোধীর মেয়ে বা বোনের সঙ্গে বিয়ে দিতে এই শিক্ষককে জোরপূর্বক তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও লেখা হয়।
ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি প্রাথমিকভাবে একটি স্কুলের মনে হয় যেখানে ইউনিফর্ম পরা অনেক শিশু উপস্থিত রয়েছে। যাকে জোর করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, তিনি ওই স্কুলেরই শিক্ষক বলে দাবি করা হয়েছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্য়াপশনে লেখা হয়েছে, "বিহারের ডাবল ইঞ্জিনের ধাক্কায় একজন স্কুল শিক্ষকে ছাত্রছাত্রী আর মাস্টারমশাইদের সামনে থেকে বন্দুক দেখিয়ে তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে সিঁদুর পরানোর জন্য। মানে কোন ক্রিমিনালের মেয়ে বা বোনের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন্য। কি চাই নাকি ডাবল ইঞ্জিনের সরকার?"
একই ভিডিও পোস্ট করে অনেকে লিখেছেন, "বিহারে কী অবস্থা মাইরি!! বেগুসরাইয়ের এক স্কুল থেকে এক শিক্ষককে বন্দুকের নলের ডগায় তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে... তাও কিনা বিয়ে দেওয়ার জন্য!"
১৯৮০-এর দশকে বিহারে জোরপূর্বক বিবাহের প্রথা শুরু হয়েছিল । এই ধরণের বিবাহ জোর করে এবং ভয় দেখিয়ে করা হয়। বেশিরভাগ শিক্ষিত এবং ভালো চাকরিজীবী ছেলেরা এর শিকার হয়।
আজ তক ফ্যাক্ট চেক দেখেছে যে এই ভিডিওটি কোনও বাস্তব ঘটনার নয়। এটি একটি শুটিংয়ের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট সংগ্রহ করে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে 'Rajanrddfilms' নামে একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ওই ঘটনার ভিডিও পাওয়া যায়। ২০২৫ সালের ২২ মার্চ ভিডিওটি পোস্ট করে লেখা হয়েছিল, এই ভিডিওটি 'পাকদৌয়া বিয়হা' নামের একটি ছবির শুটিং।
এই ভিডিওতে কয়েকজনকে হাতে ক্যামেরা ধরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও ভিডিওটিতে স্কুলের নাম পড়া যাচ্ছে, যা বেগুসরাইয়ের দুলারপুর গ্রামে অবস্থিত।
এই সূত্রগুলিকে কাজে লাগিয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে 'নিউজ ১৮ বিহার ঝাড়খন্ড'- এর একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায় যা গত ২২ মার্চ প্রকাশ করা হয়েছিল। ক্যাপশনে লেখা হয়, বিনা অনুমতিতে স্কুলে 'পাকদৌয়া বিয়হা' ছবির শুটিং। এই ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে স্কুলের প্রিন্সিপাল নবীন কুমার বলেন যে রবিবার স্কুল বন্ধ থাকাকালীন ছবিটির শুটিং হয়েছিল এবং এর জন্য কোনও অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কিনা এই বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।
এই ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর স্কুল কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। বেশ কিছু খবরে বলা হয়, জেলা শিক্ষা অধিকর্তা রাজদেব রাম পুরো বিষয়টির তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তদন্তের পরে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন।
ফলে সব মিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে একটি সিনেমার শুটিংয়ের দৃশ্যকে আসল ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা স্পষ্টতই বিভ্রান্তিকর।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে বিহারের বেগুসরাইয়ের একটি স্কুলে কীভাবে একজন শিক্ষককে জোর করে বিয়ের জন্য তুলে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
ভাইরাল ভিডিওটি কোনও আসল ঘটনার নয় বরং একটি ছবির শুটিংয়ের দৃশ্য।