
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় দুটি ছবি-সহ একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে একটি অল্প বয়সী ছেলের গোটা শরীর জুড়ে আঘাতের চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। ছবি দুটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মহারাষ্ট্রের একটি মন্দিরে জল পান করার জন্য প্রবেশ করায় উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণরা এই দলিত ছেলেটিকে নির্মমভাবে মারধর করেছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবি দুটি শেয়ার করে লিখেছেন, "শিশুরা মন্দিরের ফুল, শুধু শুনতে ভালো লাগে। অথচ তৃষ্ণার্ত শিশু যখন মন্দিরে জল খেতে যায় তখন তাকে ধর্ম বা বর্ণ দিয়ে লাঠি প্রসাদ দেওয়া হয়। মানুষ হিসাবে এমন নিকৃষ্ট, বর্জ্য, দানবীয় ও মানবতা নিতে লজ্জা পাবে না...? (মহারাষ্ট্রের ঘটনা)”
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ছবি দুটি মহারাষ্ট্র তো নয়ই, এমনকি ভারতেরও নয়। বরং সেগুলিতে ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর ইয়েমেনের আল-মাহউইত গভর্নরেটের আল রাজম জেলায় এক ব্যক্তির তরফে তার ছেলেকে মারার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল দাবি ও ছবি দুটির সত্যতা জানতে সেগুলি নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে আমরা ইয়েমেন ভিত্তিক একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই একই ছবি-সহ আরবি ভাষায় অনেকগুলি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। ২০২০ সালের ৪ অক্টোবর Yemen Now News-এর অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ইয়েমেনের আল-মাহউইত গভর্নরেটের আল রাজম জেলায় সন্তানকে মানুষ করার নামে ১২ বছর বয়সী শামাখ রশিদ আল-কাহিলিকে নির্মমভাবে মারধর করে তার বাবা। ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রশাসন ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিয়েছে।
২০২০ সালের ৫ অক্টোবর ইয়েমেন ভিত্তিক অপর এক সংবাদমাধ্যম Alnabba Alyemeni-তেও এই একই ছবি এবং তথ্য-সহ অন্য একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর নিজেরে ১৪ বছর বয়সী সন্তান শামাখ রশিদ আল-কাহিলিকে মানুষ করার অজুহাতে দড়ি দিয়ে বেঁধে চাবুকের সাহায্যে ব্যাপকভাবে মারধর করে তার বাবা রশিদ মুহাম্মদ আল-কুহাইলি। এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই আল-মাহউইত গভর্নরেটের আল রাজম জেলার পুলিশ ৪০ বছর বয়সী অভিযুক্ত রশিদ মুহাম্মদ আল-কুহাইলিকে গ্রেফতার করে।
এরপর আমরা আমাদের পরবর্তী সার্চে ২০২০ সালের ৫ অক্টোবর ইয়েমেনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষায়ক মন্ত্রকের সরকারি ওয়েবসাইটে রশিদ মুহাম্মদ আল-কুহাইলির গ্রেফতার হওয়া সংক্রান্ত বিষয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তিটি খুঁজে পাই। সেখানে লেখা হয়েছে, "আল-মাহউইত গভর্নরেটের আল-স্টোনিং ডিরেক্টরেটের পুলিশ ৪০ বছর বয়সী রশিদ মুহাম্মদ আল-কাহিলিকে তার ১৪ বছর বয়সী ছেলেকে নির্যাতন করার অপরাধে গ্রেফতার করেছে।"
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ইয়েমেনের পুরনো ঘটনার ছবির সঙ্গে মহারাষ্ট্রের সম্পর্ক জুড়ে দিয়ে মিথ্যে জাতিগত বৈষম্যের রং লাগিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
ছবি দুটিতে দেখা যাচ্ছে, মহারাষ্ট্রের একটি মন্দিরে জল পান করার জন্য প্রবেশ করায় উচ্চবর্ণের ব্রাহ্মণরা এই দলিত ছেলেটিকে নির্মমভাবে মারধর করেছে।
ভাইরাল ছবি দুটি মহারাষ্ট্র তো নয়ই, এমনকি ভারতেরও নয়। বরং সেগুলিতে ২০২০ সালের ৩ অক্টোবর ইয়েমেনের আল-মাহউইত গভর্নরেটের আল রাজম জেলায় এক ব্যক্তির তরফে তার ছেলেকে মারার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।