
বিহারে ভোটের ডঙ্কা বেজে গিয়েছে। বছরের শেষে হতে চলা বিধানসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে এখন থেকে ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ নামক কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করছেন রাহুল গান্ধী-সহ আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। এই আবহে একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হচ্ছে। যেখানে হলুদ কোট পরা এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে বেশ কয়েকজনকে ক্ষোভ উগরে দিতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, ভোটমুখী বিহারে এভাবেই জনতা এক বিজেপি নেতাকে কোনও স্থল থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, ওই হলুদ কোট পরা ব্যক্তিকে দোষারোপ ও গালমন্দ করে জনতা উক্ত স্থল থেকে পালাতে বাধ্য করছে।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, “বিহারে বিজেপি নেতার অবস্থা।”
আজতক ফ্যাক্ট চেক করে দেখেছে যে ভাইরাল হওয়া ভিডিও-র দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বা বিহারেরও নয়।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটিতে “বিহারে বিজেপি নেতার অবস্থা” কথাটি বাংলায় লেখা থাকলেও তা বাদে হিন্দিতে কয়েকটি কথা ভিডিও-র নিচের অংশে লেখা ছিল। হিন্দিতে লেখা সেই কথাগুলোর বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, “খেলোয়াড়দের মাঝে এল মোদী ভক্ত। জনতাকে তাকে তাড়িয়ে দিল।”
এই হিন্দি কিওয়ার্ডগুলো সার্চ করা হলে ওই একই ভিডিও-র বর্ধিত অংশ HNP NEWS OFFICIAL নামের একটি ইউটিউব চ্য়ানেলে পাওয়া যায়। তবে ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়কার নয়। বরং ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আপলোড করা হয়েছিল।
ভিডিও-র পরবর্তী অংশে তাঁকে বলতে শোনা যায় যে উক্ত ঘটনাস্থলে এক মহিলাকে তিনি বলছে শুনেছিলেন যে 'নরেন্দ্র মোদী সংবিধান বেচে খেয়ে নিয়েছেন’, যে কথা শুনে তিনি আপত্তি জানান এবং বলেন এমন কথা বলা কাম্য নয়। ভিডিও-র ২ মিনিট ২২ সেকেন্ডের মাথায় এত সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন তিনি যন্তর-মন্তরে কুস্তিগীরদের সমর্থন জানাতে এসেছিলেন কিনা। সেই সঙ্গে ভিডিও-র একাধিক জায়গায় পুলিশি ব্যারিকেডও দেখা যায় যার উপর ‘দিল্লি পুলিশ’ লেখা ছিল। ফলে অনুমান করা যায় যে ঘটনাটি বিহারের নয় বরং দিল্লির।
এই ভিডিও-র ৪ মিনিটের মাথায় সাংবাদিকরা ওই ব্যক্তিকে তাঁর নাম জানতে চান এবং তিনি বিজেপিতে কোনও পদে রয়েছেন কিনা সেই প্রশ্ন করেন। জবাবে হলুদ কোট গায়ে থাকা ব্যক্তি বলেন যে তাঁর নাম কমলেশ সিং এবং তিনি বিজেপির কোনও পদাধিকারী নন। তিনি সামান্য নাগরিক হিসেবেই এই কথাগুলো বলেছেন।
এই বিষয়ে আরও সার্চ করা হলে The Janta Live, National Pillar, The Nation Voice নামের একাধিক ইউটিউব-ভিত্তিক সংবাদ চ্যানেলে ৩০ জুলাই ওই হলুদ কোট পরিহিত ব্যক্তি-সহ ঘটনার বিশদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। সকল প্রতিবেদনেই উল্লেখ পায় যে ঘটনাটি দিল্লির যন্তর-মন্তরের, যেখানে বিজেপি সাংসদ ও সর্বভারতীয় রেস্টলিং ফেডারেশনের প্রাক্তন সভাপতি ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে ধর্নায় বসেছিলেন অলিম্পিকে মেডেল-জয়ী কুস্তিগীররা। সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট এখানে পড়া যাবে।
সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে একটি অসম্পর্কিত ঘটনার ভিডিওকে বিহারে বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভুয়ো প্রচার করা হচ্ছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কীভাবে বিহারে জনগণ একজন বিজেপি নেতাকে তাড়িয়ে দিয়েছে।
ভিডিওটি ২০২৩ সালের ৩০ এপ্রিলের। দিল্লির যন্তর-মন্তরে কুস্তিগীরদের ধর্নামঞ্চে মোদী-বিরোধী স্লোগানে প্রতিবাদ জানানোয় এক ব্যক্তিকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করে জনতা।