ফ্যাক্ট চেক: সাম্প্রতিক দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পুরনো ভিডিও

বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরে ধর্ম অবমাননার অভিযোগকে কেন্দ্র করে হিন্দু যুবক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যা এবং পরবর্তীতে তার দেহ পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় দেশজুড়ে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই ঘটনায় ৭ জনকে গ্রেপ্তার করেছে মহম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের র‍্যাব। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে মুসলিম ধর্মের বহুসংখ্যক মানুষকে কোনও একটি বাজারে একত্রিত হয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে। 

ভিডিওর ব্যকগ্রাউন্ডে একজনকে বলতে শোনা যাচ্ছে, হজরত মহম্মদকে নিয়ে কটুক্তি করার প্রতিবাদে চাঁদপুরে বহুসংখ্যক মানুষ বর্মন নামক এক ইসকন সদস্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে। অন্যদিকে ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, দীপু চন্দ্র দাসের পর ফের একবার বাংলাদেশের চাঁদপুরে মিথ্যা ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগে অপর এক হিন্দু যুবককে হত্যার চেষ্টার জন্য তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে মুসলিম মৌলবাদীরা।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “আজ চাঁদপুরে মিথ্যা ধর্মীয় অবমাননা দিয়ে ইসকন সদস্যকে বাসা থেকে তুলে নিয়ে প্রকাশ্যে জ''বাই করতে চায় জ%'ঙ্গিরা।এদেশে সুন্দর একটি প্রথা চালু করেছে জ%'ঙ্গিরা ধর্মীয় অবমাননা।” (সব বানান অপরিবর্তিত) 

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি সম্প্রতিক নয়। বরং এটি দীপু চন্দ্র দাসকে হত্যার আগে অর্থাৎ ২০২৫ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশের চাঁদপুরে হজরত মহম্মদকে কুটুক্তি করার অভিযোগে জয় বর্মন নামক এক যুবকের শাস্তির দাবিতে স্থানীয় মুসলিমদের বিক্ষোভ প্রদর্শনের দৃশ্য। তবে জয় বর্মনকে মারধর কিংবা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়নি। বরং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তরফে অভিযুক্তকে আকট করা হলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়।

সত্য উন্মোচন

ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করা হয়। তখন চলতি বছরের ২১ ডিসেম্বর ৩ নভেম্বর চাঁদপুর কাগজ নামক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের ফেসবুক পেজে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পোস্টের ক্যাপশনে উল্লেখ করা হয়েছে, “চাঁদপুর পুরান বাজার এলাকায় নবী করীম সা: কে নিয়ে ক'টু'ক্তি করায় স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষো'ভে'র সৃষ্টি;  প'রি'স্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর লা'ঠি'চা'র্জ।” 

চাঁদপুর কাগজের পোস্ট থেকে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি সাম্প্রতিক ঘটনার নয় কিংবা সেটি দীপু দাসের হত্যার পরেরও নয়। তবে এরপর বিষয়টি সম্পর্কে জানতে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিও-র স্ক্রিনশট-সহ দৈনিক চাঁদপুর প্রবাহ নামক একটি বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০২৫ সালের ৩ নভেম্বর রাত ১১টা নাগাদ বাংলাদেশের চাঁদপুর শহরের পুরান বাজার এলাকায় হজরত মহম্মদকে কুটুক্তি করার অভিযোগে জয় বর্মন নামক এক যুবকের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে স্থানীয় মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা। এরপর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি মো. বাহার মিয়ার নেতৃত্বে পুলিশের একটি বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। 

তবে উত্তেজিত জনতা পুলিশের দিকে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। তখন পুলিশের তরফে সেনাবাহিনীকে ঘটনাস্থালে মোতায়েন করা হয়। এরপর পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর যৌথভাবে লাঠিচার্জ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এবং অভিযুক্ত যুবক জয় বর্মনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। স্থানীয়দের দাবি অনুযায়ী, এক সপ্তাহ আগে ইসকন অনুসারী অনিক নামক এক যুবক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হজরত মহম্মদকে নিয়ে কটূক্তিকর মন্তব্য করেন। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরবর্তীতে অনিকের বন্ধু জয় বর্মনও একই ধরনের মন্তব্য করলে উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। ঘটনার সময় জয় বর্মন পুরান বাজার এলাকার একটি মন্দিরে আশ্রয় গ্রহণ করে। তাকে আটক করতে স্থানীয়রা সেখানে উপস্থিত হলে পরিস্থিতি উত্তাপ্ত হয়ে পড়ে। তবে পুলিশ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে অভিযু্ক জয় বর্মনকে আটক করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ফলে সবমিলিয়ে বুঝতে বাকি থাকে না যে, সাম্প্রতিক দাবিতে ছড়ানো হচ্ছে বাংলাদেশে হিন্দু যুবকের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের পুরনো ভিডিও।