

কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ যতগুলি লাভদায়ক সংস্থা রয়েছে, তাদের মধ্যে অন্যতম হল- Oil and Natural Gas Corporation. যা সাধারণভাবে পরিচিত ONGC হিসেবে। সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এই সংস্থা সম্পর্কে একটি দাবি ব্যাপকভাবে ভাইরাল হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা হচ্ছে যে, ৬৩ বছরে নাকি প্রথমবার ৯৩ হাজার কোটি টাকার লোকসান করেছে ONGC!
পক্ষান্তরে, মুকেশ আম্বানি অধীনস্থ সংস্থা রিলায়েন্স নাকি একই সময়ে ১ লক্ষ ৩৫ হাজার কোটি টাকার মুনাফা কামিয়েছে। এমনটাই দাবি করা হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
বেশ কিছু সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী একটি পোস্ট শেয়ার করে ফেসবুকে লিখেছেন, "৬৩ বছরে এই প্রথম ONGC ৯৩০০০ কোটি লোকসান আর রিলায়েন্স এর লাভ ১,৩৫,০০০ কোটি! রাষ্ট্রীয় সংস্থা-রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি ব্যক্তিগত মুনাফাখোরের পকেটে পোরার বন্দোবস্ত।" (পোস্টের বানান অপরিবর্তিত)

একই দাবি-সহ পোস্ট দেখা যাবে এখানে ও এখানে। এই পোস্টের আর্কাইভ দেখা যাবে এখানে।
আজ তক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই দাবিটি পুরোপুরি মিথ্যে। কেন্দ্রীয় সংস্থা ONGC বিগত কয়েক অর্থবর্ষ ধরেই মুনাফায় রয়েছে। অন্যদিকে, রিলায়েন্সের লাভের অঙ্কটিও সঠিক নয়।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
যদি বিগত অর্থবর্ষে ONGC ৯৩০০০ কোটির লোকসান করে থাকে, তবে তা নিয়ে বড় খবর হবে। নানা সংবাদ মাধ্যমে এই সংক্রান্ত রিপোর্ট বেরোবে। কিন্তু কিওয়ার্ডের সার্চে মাধ্যমে তেমন কোনও রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।
এরপর আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করি যে ONGC বর্তমানে মুনাফা করছে নাকি লোকসান। তখন বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের একটি রিপোর্ট আমরা খুঁজে পাই। ২০২৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারির সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৪ অর্থবর্ষের (এপ্রিল ২০২৩-মার্চ ২০২৪) তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ONGC মোট ১০,৩৬৫ কোটি টাকার মুনাফা কামিয়েছিল।
ONGC নিজের লাভ-লোকসানের হিসেব প্রত্যেক ত্রৈমাসিকে নিয়ম করে নিজেদের ওয়েবসাইটেই প্রকাশ করে থাকে। কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এরপর আমরা ONGC ওয়েবসাইট থেকে তাদের গত অর্থবর্ষ ও তার আগের লাভ-ক্ষতি খুঁজে বের করার চেষ্টা করি।
সবার প্রথম ২০২৪ অর্থবর্ষের প্রথম ত্রৈমাসিকের ( ২০২৩-র এপ্রিল-জুন) হিসেবে নজর দিলে দেখা যাবে, এই তিন মাসে ট্যাক্স ও সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে মোট ১৪ হাজার ১৩৪ কোটির মুনাফা করেছিল ONGC। এর পর দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর এই তিন মাসে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ONGC-র মুনাফা ছিল ১৩ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা।

তৃতীয় ত্রৈমাসিকে, অর্থাৎ, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে মুনাফার পরিমাণ কিছুটা কম হলেও লোকসান মোটেই হয়নি। এই তিন মাসে সমস্ত খরচ বাদ দিয়ে ১০ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা লাভ করেছিল ONGC। চতুর্থ ত্রৈমাসিকের হিসেব এখনও প্রকাশ পায়নি।
এই তথ্যের মধ্যে ২০২২-২০২৩ অর্থবর্ষের লাভের পরিমাণও উল্লেখ করা ছিল। সেখানেও অবশ্য লোকসানের কোনও উল্লেখ পাওয়া যায়নি। লাভের পরিমাণ কিছুটা কম হলেও তখনও মুনাফা কামাচ্ছিল ONGC।
এবার চলে আসা যাক রিলায়েন্সের প্রসঙ্গে। সংস্থাটি একাধিক খাতে ব্যবসা করলেও বছরে মোট লাভের পরিমাণ এই সংস্থারও ওয়েবসাইটে উল্লেখ করা থাকে। রিলায়েন্স অবশ্য তাদের ২০২৪ অর্থবর্ষের মুনাফার মোট অঙ্ক প্রকাশ করে দিয়েছে। রিয়ায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ট্যাক্স দেওয়ার পর বিগত অর্থবর্ষে রিলায়েন্সের মোট লাভের পরিমাণ ছিল ৭৯,০২০ কোটি। অর্থাৎ, ভাইরাল পোস্টে যে দাবি করা হয়েছে তার থেকে অনেকটাই কম।

৯৩ হাজার কোটি লোকসানের এই গুজবের উৎস
এই বিষয়ে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা ২০১৫ সালের ৩০ অগস্টে প্রকাশিত ইকনমিক টাইমসের একটি রিপোর্ট দেখতে পাই। সেই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় যে, সেই সময়ে বিগত এক সপ্তাহে শেয়ার মার্কেটের সবচেয়ে মূল্যবান ১০টি সেনসেক্স কম্পানির মধ্যে ৯টি কম্পানির সম্পদের পরিমাণ একধাক্কায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা কমে গিয়েছিল। যেই কম্পানিগুলির মধ্যে ONGC ও রিলায়েন্সও শামিল ছিল। আমরা নিশ্চিত না হলেও অনুমান করতে পারি যে এই ঘটনাই ছিল এই গুজবের সূত্রপাতের কারণ।

৬৩ বছরে এই প্রথম ONGC ৯৩০০০ কোটি লোকসান করেছে, আর রিলায়েন্স মুনাফা কামিয়েছে ১,৩৫,০০০ কোটি।
বিগত দুই অর্থবর্ষ ধরে ONGC লোকসান করেনি বরং লাভেই রয়েছে। অন্যদিকে, গত অর্থবর্ষে রিলায়েন্সের মুনাফার পরিমাণ ৭৯ হাজার ২০ কোটি।