বিগত প্রায় আট মাস ধরে চলছে হামাস-ইজরায়েলের যুদ্ধ। আর এই যুদ্ধে হামাসের বিরুদ্ধে যেমন ইজরায়েলের নাগরিকদের বন্দি বানানোর অভিযোগ উঠেছে। ঠিক তেমনই ইজরায়েলের বিরুদ্ধেও নিজেদের নাগরিকদের বন্দি করে রাখার অভিযোগ তুলেছে ফিলিস্তিন।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই একটি বন্দিদশার ভিডিয়ো ভাইরাল হয়েছে। যেখানে কিছু শীর্ণকায় মানুষকে একটি ঘরের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। আর ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে, সেটি ইজরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অনাহারে বন্দি করে রাখা দৃশ্য।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিয়োটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ইজরাইলি জারু-জদের কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনি মুসলমানরা অনাহারে রয়েছে।” অপর এক ফেসবুক ব্যবহারকারী এই একই ভিডিয়ো পোস্ট করে লিখেছেন, “এরা ফিলিস্তিনি বন্দী, ইসরায়েল তাদের অনাহারে মারছে।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) এমনই একটি পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিয়োটি ইজরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অনাহারে বন্দি থাকার দৃশ্যের নয়। বরং সেটি পাকিস্তানের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভিডিয়ো।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
ভাইরাল ভিডিয়োর দাবির সত্যতা জানতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা ২০২৪ সালের ২৬ এপ্রিল Adnan Khan নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই একই ভিডিয়ো দেখতে পাই। তবে ভিডিয়োটির ক্যাপশনে আমরা এমন কোনও তথ্য পাইনি যা থেকে এই ভিডিয়ো সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানা যায়।
তবে এরপর আমরা ভিডিয়োটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করি। তখন আমরা অ্যাকাউন্টটির বিস্তারিত অংশে Da Haq Awaz নামক একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের নাম দেখতে পাই। একইসঙ্গে পুনর্বাসন কেন্দ্রটির ঠিকানা হিসেবে সেখানে পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ওই ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে এই ধরনের আরও একাধিক ভিডিয়ো দেখতে পাই। যা থেকে অনুমান করা যায়, ভাইরাল ভিডিয়োটি পাকিস্তানের কোনও পুনর্বাসন কেন্দ্রে থাকা আশ্রয়প্রার্থীদের হতে পারে।
একইসঙ্গে আমরা ওই ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ‘Da Haq Awaz’ নামক পুনর্বাসন কেন্দ্রের একটি ওয়েবসাইট দেখতে পাই। তখন আমরা সেই ওয়েবসাইটটি ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে সেটি থেকে আমরা জানতে পারি উক্ত ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টটি মূলত ওই পুনর্বাসন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক আদনান খানের। সেখানে আমরা আরও জানতে, পারি উক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রটি ২০১৪ সালের মার্চ মাসে পাকিস্তানের পেশোয়ার শহরে চালু হয়। এরপর বিভিন্ন সময়ে দেশটির আরও ৬টি শহরে এর শাখা খোলা হয়।
এর থেকে স্পষ্ট হয় যে, ইজরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অনাহারে বন্দি থাকার দৃশ্য দাবি করে যে ভিডিয়োটি ভাইরাল করা হচ্ছে সেটি আসলে পাকিস্তানের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভিডিয়ো। নিজের ইন্সটাগ্রাম অ্যাকাউন্টে ভিডিয়োটি প্রথম পোস্ট করেন পাকিস্তানের Da Haq Awaz নামক একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে, সেই ভিডিয়োটি সাদা-কালো বানিয়ে মিথ্যে দাবিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার করা হচ্ছে।
তবে এখানে উল্লেখ্য, বিভিন্ন সময় ইজরাইলের কারাগারে বন্দি থাকা ফিলিস্তিনি নাগরিকদের মৃত্যুর ঘটনা সামনে এসেছে। আর তখন সংবাদমাধ্যমেও এই সংক্রান্ত খবরও প্রকাশিত হয়েছে। তবে সেই ঘটনার সঙ্গে ভাইরাল ভিডিয়োর কোনও সম্পর্ক নেই।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ইজরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অনাহারে বন্দি থাকার দৃশ্য।
ভাইরাল ভিডিয়োটি ইজরায়েলের কারাগারে ফিলিস্তিনি মুসলিমদের অনাহারে বন্দি থাকার দৃশ্যের নয়। বরং সেটি পাকিস্তানের একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভিডিয়ো।