বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়নের মতো খেলেও ফাইনালে ম্যাচে তীরে এসে তরী ডুবেছে ভারতীয় ক্রিকেট টিমের। ষষ্ঠবারের মতো কাপ তুলেছে অস্ট্রেলিয়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নামে নামাঙ্কিত বিশ্বের বৃহত্তম ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ১ লক্ষ ৩০ হাজার দর্শককে নীরবতায় ঠেলে দিয়েছে প্যাট কামিন্সের দল।
এই ম্যাচের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় প্যাট কামিন্সের করা একটি তথাকথিত উক্তি ও সেটার স্ক্রিনশট বেশ ভাইরাল হচ্ছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে তিনি পাকিস্তানের প্রাক্তন অধিনায়ক বাবর আজমের পাশে দাঁড়িয়ে আহমেদাবাদের দর্শকদের একহাত নিয়েছেন।
"Indian crowd is usually amazing but crowd at Ahmedabad is not, they booed Babar in the first match too. We wanted to silence this crowd in the last match. Thats why I said it and we did it"
— Anas Tipu (@teepusahab) November 19, 2023
- Pat Cummins pic.twitter.com/yVrHc9IsI2
কামিন্সকে উদ্ধৃত করে ইংরেজিতে লেখা হয়েছে, "Indian crowd is usually amazing but crowd at Ahmedabad is not, they booed Babar in the first match too. We wanted to silence this crowd in the last match. Thats why I said it and we did it."
"Indian crowd is usually amazing but crowd at Ahmedabad is not, they booed Babar in the first match too. We wanted to silence this crowd in the last match. Thats why I said it and we did it"
— Preeti Khatri 🇮🇳 (@preetikhatri22) November 20, 2023
- Pat Cummins
Reason enough to ban Ahmedabad for international sports.. pic.twitter.com/BnU5ucaoTz
বাংলায় এর তর্জমা করলে দাঁড়ায়, "সাধারণত ভারতীয় দর্শকেরা দুর্দান্ত হয় কিন্তু আহমেদাবাদের দর্শকরা একেবারেই তেমনটা নয়। প্রথম ম্যাচে ওরা বাবারকে গাল-মন্দ করেছিল। আমরা এই ম্যাচে সেই দর্শকদের চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। তাই আমি এমনটা বলেছিলাম এবং ঠিক তেমনই করেছি।"
এই পোস্টটি শেয়ার করে তার ক্যাপশনে বাংলায় লেখা হয়েছে, "গুজরাটের মানুষের কালচার নেই?"
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে পেয়েছে যে প্যাট কামিন্সকে উদ্ধৃত করা এই মন্তব্যটি পুরোপুরি মনগড়া। বাস্তবে তিনি বাবর আজমের নামও উচ্চারণ করেননি।
কীভাবে জানা গেল সত্যি
বিশ্বকাপ ফাইনালের ছোট থেকে বড় সব ধরনের ঘটনা নিয়েই সংবাদ মাধ্যমে নানা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়েছে। কামিন্স যদি এমন কিছু বলে থাকতেন তবে সেটা নিয়ে কোথাও না কোথাও খবর অবশ্যই প্রকাশ হতো। কিন্তু কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা এমন কোনও তথ্য খুঁজে পাইনি। যা থেকে মোটামুটি আন্দাজ করা যেতে পারে যে উক্তিটি ভুয়ো।
এরপর আমরা খুঁজে দেখার চেষ্টা করি আহমেদাবাদের দর্শকদের নিয়ে কখন কী মন্তব্য করেছিলেন কামিন্স। তখন আমরা ফাইনাল ম্যাচের আগের দিন, অর্থাৎ ১৮ নভেম্বর প্রকাশিত হিন্দুস্তান টাইমসের একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ম্যাচের পূর্ববর্তী সাংবাদিক বৈঠকে কামিন্স বলেন যে তিনি খেলার মাঠে আহমেদাবাদের লক্ষাধিক দর্শককে চুপ করিয়ে দিতে চান।
কামিন্সের কথা অনুযায়ী তিনি বলেছিলেন যে, "ফাইনালে দর্শকরা খুব স্বাভাবিকভাবেই এক পক্ষকে সমর্থন করবে। সেই সঙ্গে খেলার সময় বিরাট সংখ্যক দর্শকদের চুপ করিয়ে দেওয়ার মতো তৃপ্তিদায়ক আর কিছু নেই। আগামিকাল সেটাই আমাদের লক্ষ্য হতে চলেছে।" প্যাট কামিন্সের সেই প্রেস কনফারেন্সের ভিডিয়ো নীচে দেখা যাবে।
এরপর আমরা ফাইনাল ম্যাচের পর প্যাট কামিন্স দর্শকদের বিষয়ে কী বলেছিলেন তা খুঁজতে চেয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করি। তখন ইন্ডিয়া টিভির একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, কামিন্স বলেছেন যে ফাইনালে বিরাট কোহলি আউট হওয়ার পর দর্শকদের স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার অনুভূতি তাঁর জন্য বেশ সন্তোষজনক ছিল।
ফাইনাল ম্যাচের পর পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে কামিন্সকে যখন দর্শকদের বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়, কামিন্স বলেন, "দর্শকেরা দুর্দান্ত ছিলেন। সত্যি বলতে, বল করার সময় কয়েকবার যেভাবে দর্শকেরা চুপ হয়ে যাচ্ছিল বেশ ভালই লেগেছে আমাদের। কিছু সময় অবশ্য বেশ জোরেই তারা চিৎকার করেছে। ক্রিকেট নিয়ে ভারতের মতো প্যাশন সত্যিই কোথাও পাওয়া যায় না। প্রত্যেকে নীল শার্ট পরে ছিলেন, অসাধারণ দৃশ্য ছিল। ফলাফল যাই হোক না কেন, আমরা কখনই এই দিনটা ভুলব না।"
এরপর আমরা কামিন্সের ম্যাচ পরবর্তী সাংবাদিক সম্মেলনের ভিডিয়োটিও খুঁটিয়ে দেখি। সেখানে তিনি একবারও বাবর আজমের নাম করেননি, বা আহমেদাবাদের দর্শকদের নিয়ে কোনও কটূ কথা বলেননি।
ফলে বোঝাই যাচ্ছে যে একটি ভুয়ো, ও কাল্পনিক-মনগড়া মন্তব্য প্যাট কামিন্সের নামে প্রচার করা হচ্ছে।
বিশ্বকাপ জিতে প্যাট কামিন্স বলেছেন, "সাধারণত ভারতীয় দর্শকেরা দুর্দান্ত হয় কিন্তু আহমেদাবাদের দর্শকরা একেবারেই তেমনটা নয়। প্রথম ম্যাচে ওরা বাবারকে গাল-মন্দ করেছিল। আমরা এই ম্যাচে সেই দর্শকদের চুপ করিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। তাই আমি এমনটা বলেছিলাম এবং ঠিক তেমনই।"
বিশ্বকাপ জিতে প্যাট কামিন্স বাবর আজমকে নিয়ে কোনও কথাই বলেননি। আহমেদাবাদের দর্শকদের নিয়েও কোনও খারাপ মন্তব্য তিনি করেননি, উল্টে প্রশংসাই করেছেন।