
সম্প্রতি মহারাষ্ট্রের নাগপুরে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিঘ্নিত হয়েছে। ছড়িয়েছে হিংসা। এই আবহে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে যেখানে পুলিশ দ্বারা দুই যুবককে পেটাতে দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটিতে থাকা দুই যুবকের মাথায় ফেজটুপি রয়েছে, যা দেখে অনুমান করা যায় যে তারা মুসলিম সম্প্রদায়ের। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে যে, নাগপুরে যে দিন হিংসা হয়, অর্থাৎ গত সোমবারের ঘটনা এটি। যখন এই মুসলিম শিক্ষার্থীরা নমাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে আসছিল তখন তাদের এভাবে মারা হয়।
ভিডিওটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "সোমবার নাগপুরে মসজিদ থেকে বেরিয়ে আসা শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশ একটি দ্রুতগতি সম্পন্ন করেছে। সোমবার নাগপুরে নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হয়ে আসা শিক্ষার্থীদের মারধর করেছে পুলিশ। সোমবার নাগপুরে নামাজ পড়ে মসজিদের বাইরে থাকা ছাত্রদের পুলিশের হাতে মারপিট।"
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভিডিওর দাবিটি বিভ্রান্তিকর। এই ভিডিওটি মধ্য প্রদেশের এবং প্রায় ৩ বছর পুরনো এবং নাগপুর হিংসার সঙ্গে এর কোনও সম্পর্ক নেই।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ওই একই ভিডিও-র একটি বর্ধিত সংস্করণ দেখা যায় মাকতুব মিডিয়া নামের একটি সংবাদ মাধ্যমের এক্স হ্যান্ডেলে। ভিডিওটি পোস্ট করা হয়েছিল ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল। যা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায় যে ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়কার নয়।
ভিডিওটি পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, এই ভিডিওটি মধ্য প্রদেশের খারগোন জেলার শঙ্কর নগর এলাকার। সেই সঙ্গে অভিযোগ জানানো হয় যে রাম নবমী উদযাপন থেকে ছড়ানো হিংসার পর পুলিশ মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের প্রতি নির্যাতন চালাচ্ছে।
একই ভিডিও এমপি তকের ইউটিউব চ্যানেলেও আপলোড করা হয়েছিল ২০২২ সালের ১৫ এপ্রিল। নির্যাতিত যুবকের সঙ্গে যখন আজতকের প্রতিনিধি কথা বলেন সে জানায় যে সে বাড়ির শিশুদের জন্য দুধ নিয়ে বাড়ির পিছনেই একটি দোকানে গিয়েছিল। কিন্তু পুলিশ তাঁকে দেখেই মারধর শুরু করে এই বলে যে সে-ই দাঙ্গা করেছিল।
খারগোনে কী হয়েছিল?
২০২২ সালের রাম নবমীর জুলুস যখন খারগোনের একটি মুসলিম অধ্যুষিত এলাকা দিয়ে যাচ্ছিল তখন হিন্দুদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে মুসলিমরা নাকি তাদের মিছিলে পাথর ছুড়েছে। এই থেকে দু তরফে মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে, যা ক্রমশ সংঘর্ষের আকার নেয়। হিংসা ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার জেরে এক পুলিশ আধিকারি-সহ উভয় সম্প্রদায়ের বেশ কিছু মানুষ আহত হন। দীর্ঘদিন এলাকাজুড়ে কার্ফু জারি করা থাকে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে অনেকটাই সময় লেগে যায়।
এর থেকে বোঝাই যাচ্ছে যে ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে খারগোনে ঘটা ঘটনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে বর্তমানে তা নাগপুরের ঘটনার সঙ্গে জুড়ে প্রচার করা হচ্ছে, যা উস্কানিমূলক এবং বিভ্রান্তিকর।
এই ভিডিওটি গত সোমবারের। মহারাষ্ট্রের নাগপুরে যখন মুসলিম শিক্ষার্থীরা নমাজ পড়ে মসজিদ থেকে ফিরছিল পুলিশ তাদের ধরে অত্যাচার করে।
ভিডিওটি ২০২২ সালের এপ্রিল মাসের। মধ্য প্রদেশের খারগোন জেলায় রাম নবমীর পর হিংসা ছড়িয়ে পড়ার পরবর্তী সময়ের ঘটনা।