
সম্প্রতি মালদার ইংলিশবাজার এলাকা দুটি পৃথক গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল। এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে সোশ্যাল মিডিয়ায় ইদানীং একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হতে শুরু করেছে। একটি বাড়ির ছাদ বা উপরের তলের জানালা থেকে রেকর্ড করা এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, জনা বিশ-তিরিশ যুবককে একটি গলিতে ঢুকে ভাংচুর করতে ও পাথর ছুড়তে।
ভিডিওটি পোস্ট করে একে মালদার ঘটনা বলে দাবি করা হয়েছে। ভিডিও-র সঙ্গে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "এইবার মালদা শান্তি প্রতিষ্ঠা চলছে। প্রশাসনের কার্যক্রম পঙ্গু হলে অচিরে মালদাও মুর্শিদাবাদের মত অবস্থা হবে..!"
একই দাবিতে অনেকেই ভিডিওটি পোস্ট করেছেন।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভিডিওটি সম্প্রতি মালদায় হওয়া অশান্তির নয়। বরং একটি পৃথক স্থানের ও বিগত এপ্রিল মাসের ঘটনা।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে খোঁজা হলে ওই একই ভিডিও গত এপ্রিল মাসের কয়েকটি সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টে পাওয়া যায়। ভিডিওটি শেয়ার করে একে হুগলী জেলার চাঁপদানির ঘটনা বলে উল্লেখ করা হয়। যা থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে সাম্প্রতিক মালদার কোনও ঘটনার সঙ্গে এই ভিডিওটির কোনও সম্পর্ক থাকা সম্ভব নয়।
প্রাক্তন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষও নিজের এক্স হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-র একটি দীর্ঘায়িত সংস্করণ ২০২৫ সালের ১১ এপ্রিল পোস্ট করেছিলেন। সঙ্গে তিনি লেখেন, "সম্প্রীতির নাটক নাকি প্রতিরোধের? আজ হুগলি জেলার চাঁপদানিতে উন্মত্ত মুসলিম জনতা হিন্দুদের উপর আক্রমণ চালায়। পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন অংশে নৃশংসতা ঘটতে শুরু করেছে। মমতা প্রশাসন নীরব।"
1.1 Drama of harmony or resistance?
— Dilip Ghosh (Modi Ka Parivar) (@DilipGhoshBJP) April 11, 2025
Today at Champdani (Hooghly), a frenzied Muslim mob launched an attack on Hindus. Atrocities have begun to surface across various parts of West Bengal. Mamata administration remains silent. pic.twitter.com/2v7ZflwM48
এই সম্পর্কে বিশদ জানতে কিওয়ার্ড সার্চ করা হলে গত ১১ এপ্রিল প্রকাশিত এবিপি আনন্দের একটি ভিডিও রিপোর্টও পাওয়া যায়। সেই রিপোর্ট অনুযায়ী, একটি স্থানীয় ইস্যুকে কেন্দ্র করে হুগলীর চাঁপদানি এলাকায় ধুন্ধুমার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরপর স্থানীয়রা এলাকায় পথ অবরোধ করেন। পথ অবরোধ তুলতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধ্বস্তাধ্বস্তির পরিস্থিতি তৈরি হয়। জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শেষ পর্যন্ত পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। বিষয়টি নিয়ে এই সময়ও একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল।
অন্যদিকে, কিওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে এই মুহূর্তে নামের একটি পোর্টালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, মালদার ইংলিশবাজার এলাকার লক্ষ্মীপুর বাজার পাড়া বিগত কয়েকদিন যাবৎ গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত। এলাকায় পুলিশের গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। আক্রান্ত হতে হয়েছে এক পুলিশকর্মী-সহ তিনজন পুলিশ ভলান্টিয়ারকে। ভাঙচুর করা হয়েছে বাড়িঘর ও দোকানপাট।
এই বিষয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী নিজের এক্স হ্যান্ডেলে একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করেন যে মহরমের তাজিয়ার মিছিল থেকে হামলা চালানো হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মালদার এক শীর্ষ পুলিশকর্তাও এই অশান্তির কথা আজতক বাংলার কাছে নিশ্চিত করেন।
ফলে সবমিলিয়ে পরিষ্কার হয়ে যায় যে মালদার ঘটনা দাবিতে ভাইরাল হওয়া ভিডিওটি আসলে গত এপ্রিল মাসে ঘটা হুগলীর চাঁপদানির ঘটনা।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মালদায় কীভাবে সম্প্রতি কিছু ব্যক্তি অশান্তি করছে।
ভাইরাল ভিডিওটি গত এপ্রিল মাসের এবং হুগলীর চাঁপদানির ঘটনা। তবে মালদায় সম্প্রতি একই ধরনের অশান্তি হয়েছে।