

স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক সঙ্কটে পড়লে সোশ্যাল মিডিয়ায় সাহায্যের হাত পেতে দিতে অনেক মানুষকেই দেখা যায়। অনেকে সময় মানুষের কাছে পৌঁছতে বড় মাধ্যমও হয়ে ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। সম্প্রতি এমনই একটি পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হচ্ছে যেখানে হাসপাতালে ভর্তি একটি অসুস্থ নাবালিকাকে দেখা যাচ্ছে।
ওই নাবালিকা শিশুর চারটি ছবি পোস্ট করে সঙ্গে লেখা হয়েছে যে মেয়েটির নাম জান্নাত আক্তার। সে কিশোরগঞ্জ জেলার দিনমজুর রনি মিয়া ও হেনা বেগমের সন্তান এবং গলার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ভর্তি। এরপর একটি ফোন নম্বর দিয়ে বিকাশ ওয়ালেটে আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করা হয়েছে ও বলা হচ্ছে যে চিকিৎসার জন্য ৬-৭ লাখ টাকা প্রয়োজন। একমাত্র তা হলেই হয়তো মেয়েটির প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এটি বাংলাদেশের কোনও ঘটনা নয়। বরং ছবিগুলি কলকাতার হাসপাতালে ভর্তি শ্রীজা মিত্রের যে সপরিবার গত বছর দুর্ঘটনার কবলে পড়েছিল।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ছবিগুলোয় "ImpactGuru"-র একটি লোগো দেখা যায়। ImpactGuru হলো একটি ফান্ডরেইসার বা তহবিল সংগ্রাহকারী ওয়েবসাইট যারা আর্থিকভাবে অস্বচ্ছল রোগীদের জন্য তহবিল সংগ্রহ করতে সাহায্য করে।
এরপর ভাইরাল ছবিগুলোকে রিভার্স ইমেজ সার্চের সাহায্যে খুঁজলে সেগুলো Impact Guru-র ভ্যারিফায়েড ফেসবুক পেজে পাওয়া যায়। গত ১৪ জানুয়ারি ফেসবুক পেজে ছবিগুলো পোস্ট করে ক্যাপশনে লেখা হয়, "আমার ৬ বছরের মেয়ে শ্রীজা, একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পরে আইসিইউতে তার জীবনের জন্য লড়ছে। ১৩টি অস্ত্রোপচার করা সত্ত্বেও তার অবস্থা এখনও গুরুতর, এবং সে আর কোনওদিন স্বাভাবিকভাবে মল ত্যাগ করতে পারবে না। সীমিত আয় এবং শেষ হয়ে যাওয়া সঞ্চয় নিয়ে আমরা চিকিৎসার খরচ টানতে হিমশিম খাচ্ছি। ওর জীবন বাঁচানোর জন্য আপনাদের সাহায্য প্রয়োজন। যে কোনও সাহায্য, বড় হোক বা ছোট, শ্রীজাকে বাঁচার সুযোগ করে দেওয়ার কাছাকাছি নিয়ে যাবে।"
শ্রীজার দুর্ঘটনা এবং চিকিৎসা নিয়ে বিস্তারিত তথ্য Impact Guru-র ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়। সেখানেই উল্লেখ পায়, বছর ৬-এর শ্রীজা বর্তমানে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে আইসিইউ বিভাগে ভর্তি। শ্রীজার বাবা সুভাষ মিত্র এই ক্যাম্পেন শুরু করেন। শ্রীজার মায়ের তরফ থেকে লেখা হয়, ২০২৪ সালের ২৮ অক্টোবর তাদের পরিবার একটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে যখন একটি ট্রাক এসে ধাক্কা মারে। দুর্ঘটনার শ্রীজার শরীরের নীচের অংশের হাড় সম্পূর্ণভাবে ভেঙে যায়। ইতিমধ্যেই তার ১৩টি অস্ত্রপচার হয়ে গিয়েছে এবং চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন সে আর কোনও দিন স্বাভাবিকভাবে মলত্যাগ করতে পারবে না।

শ্রীজার বাবা পেশায় একজন অটোরিক্সা চালক এবং মাসে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা রোজগার করেন। শ্রীজার মা সংসার সামলান এবং ওই দম্পতির এক ছেলে রয়েছে যে কলেজে পড়ে। তাদের জীবনের সকল সঞ্চয় ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গিয়েছে। এবং পরবর্তী চিকিৎসা অর্থের জন্যই তারা সাধারণ মানুষের কাছে সাহায্য চেয়ে তাদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
এই পেজেই শ্রীজার চিকিৎসার খরচ সংক্রান্ত অ্যাপোলো হাসপাতালের নথিও আপলোড করা হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তার আগামী দিনের চিকিৎসার জন্য ১০ লাখ টাকার বেশি খরচ হবে। এই লিংক থেকেই চাইলে শ্রীজার চিকিৎসার জন্য আর্থিক সাহায্য করা যাবে।

এর পাশাপাশি যখন ভাইরাল ফেসবুক পোস্টে দেওয়া বাংলাদেশের নম্বরের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়, তখন নম্বরটি থেকে আমাদের ব্লক করে দেওয়া হয়। ট্রু কলারে সার্চ করা হলে নম্বরটি ফ্রড বলে চিহ্নিত করা রয়েছে বলে দেখা যায়।

সবমিলিয়ে বোঝাই যাচ্ছে যে কলকাতার এক রোগীর ছবি ব্যবহার করে বাংলাদেশে প্রতারণার ছক করা হচ্ছে।

এই শিশুটি বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জে ভর্তি এবং ক্যান্সারে আক্রান্ত। চিকিৎসার জন্য ৬-৭ লাখ টাকা প্রয়োজন।
এই ঘটনা বাংলাদেশের নয়। বরং ছবিগুলি কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে ভর্তি শ্রীজা মিত্রের। ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে একটি পথ দুর্ঘটনার পর গুরুতর অবস্থায় সে সেখানে ভর্তি।