ফ্যাক্ট চেক: পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুটের হার নেমে এসেছে শূন্যে! রইল এই তথ্যের সত্যতা

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই গ্রাফিক কার্ডের তথ্যটি অর্ধসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি কেন্দ্রীয় রিপোর্টে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে বঙ্গে স্কুলছুটের হার শূন্য হলেও মাধ্যমিক স্তরে তা বেশ উদ্বেগজনক। 

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুটের হার নেমে এসেছে শূন্যে! রইল এই তথ্যের সত্যতা

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি পোস্ট বেশ ভাইরাল রয়েছে। যেখানে দাবি করা হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুট অর্থাৎ স্কুল ড্রপআউটের হার নাকি শূন্যে নেমে এসেছে। যার মানে দাঁড়ায়, বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুট ছাত্র-ছাত্রীদের সংখ্যা নেই বললেই চলে। 

এমনই দাবি করে একটি গ্রাফিক কার্ড সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করা হয়েছে। যেখানে লেখা হয়েছে, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে বাংলা আবার দেশের সামনে মডেল। কন্যাশ্রী ও সবুজ সাথীর মতো স্বপ্নের প্রকল্পে স্কুলছুট শূন্যে নামিয়ে আনল পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষার অগ্রগতিতে দেশের গড়কেও পিছনে ফেলল বাংলা।"

অনেকেই ফেসবুকে এই গ্রাফিক কার্ডটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখছেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তে বাংলা আবার দেশের সামনে মডেল। কন্যাশ্রী ও সবুজ সাথীর মতো স্বপ্নের প্রকল্পে স্কুল ছুট শূন্য নামিয়ে আনলো পশ্চিমবঙ্গ।"

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই গ্রাফিক কার্ডের তথ্যটি অর্ধসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি কেন্দ্রীয় রিপোর্টে প্রাথমিক এবং উচ্চ প্রাথমিক স্তরে বঙ্গে স্কুলছুটের হার শূন্য হলেও মাধ্যমিক স্তরে তা বেশ উদ্বেগজনক। 

কীভাবে জানা গেল সত্য়

এই বিষয়ে কিওয়ার্ড সার্চ করে আমরা সবার প্রথম এই সংক্রান্ত নিউজ রিপোর্ট খুঁজে পাই। ১০ ও ১১ জানুয়ারি প্রকাশিত আনন্দবাজার ডিজিটালসংবাদ প্রতিদিনের নিউজ রিপোর্ট থেকে জানা যায়, এ কথা সত্য যে প্রথম থেকে অষ্টম, অর্থাৎ প্রাইমারি ও উচ্চ প্রাইমারিতে স্কুলছুটের হার শূন্য উঠে এসেছে কেন্দ্রের রিপোর্টে। 

তার মানে কি বাংলায় স্কুলছুট নেই? নাকি রাজ্যে স্কুলছুটের হার সত্যিই শূন্য? না, এমনটা নয়। উভয় রিপোর্টেই শেষের দিকে যোগ করা হয় যে মাধ্যমিক স্তরে, অর্থাৎ নবম ও দশম শ্রেণিতে স্কুলছুটের সংখ্যা বেশ উদ্বেগজনক আকার ধারণ করেছে। শতকরা হিসেবে যা ১৭.৮৫ শতাংশ। 

উভয় প্রতিবেদনে লেখা হয়, "পশ্চিমবঙ্গেও স্কুলছুট রয়েছে, তবে তা মাধ্যমিক স্তরে। কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে নবম-দশম শ্রেণির স্কুলছুটের সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগের কারণ রয়েছে। এই স্তরে গত বছরে ১৭.৮৫ শতাংশ পড়ুয়া স্কুলছুট হয়েছে। মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি বিহারে (২৫.৬৩)। এর পরেই আছে যথাক্রমে অসম (২৫.০৭), কর্নাটক (২২.০৯), মেঘালয় (২২), গুজরাত (২১.০২), লাদাখ (১৯.৮৪), অরুণাচল প্রদেশ (১৯.২৯), সিকিম (১৯.০৫), মধ্যপ্রদেশ (১৭.৬৯), ছত্তীসগঢ় (১৬.২৯), মণিপুর (১৫.৩০) এবং ঝাড়খণ্ড (১৫.১৬)।"

Advertisement

অর্থাৎ, এখান থেকেই ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে বাংলায় স্কুলছুটের সংখ্যা মোটেও শূন্য নয়। বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে এরপর আমরা কেন্দ্রের সেই রিপোর্ট খতিয়ে দেখি। 

UDISE Plus 2023-24 শীর্ষক এই রিপোর্টের ২৫ নম্বর পাতায় সেকেন্ডারি অর্থাৎ মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের রাজ্যভিত্তিক খতিয়ান প্রকাশ করা হয়েছিল। সেখানে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গে নবম-দশম শ্রেণির ক্ষেত্রে স্কুলছুটের হার সত্যিই ১৭.৮৫ শতাংশ। 

অন্য়দিকে, ভাইরাল পোস্টে কন্যাশ্রী ও সবুজ সাথীর মতো প্রকল্পের নাম দেওয়া ছিল। কন্যাশ্রী মূলত অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে থাকা পরিবারকে আর্থিক সহায়তার মাধ্যমে মেয়েদের জীবন ও অবস্থার উন্নয়নে পশ্চিমবঙ্গের সরকার কর্তৃক গৃহীত একটি উদ্যোগ। অন্যদিকে, সবুজ সাথীর মাধ্যমে পড়ুয়াদের সাইকেল দেয় রাজ্য সরকার। তাই মাধ্যমিক স্কুলছুটের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়েদের হার কেমন সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখা হয়। 

উক্ত রিপোর্টের ১১৯ নম্বর পাতায় স্কুলছুটের লিঙ্গভিত্তিক হার প্রকাশ করা হয়। সেখানে উল্লেখ পায়, রাজ্যে মাধ্যমিক স্তরে মোট স্কুলছুটের মধ্যে ২১.৫ শতাংশ পড়ুয়া ছেলে এবং ১৪.২ শতাশ পড়ুয়া মেয়ে। অন্যদিকে, গোটা দেশে কোনও পূর্ণাঙ্গ রাজ্যে স্কুলছুটের সর্বনিম্ন গড় বর্তমানে হিমাচল প্রদেশে। এই বিষয়ে তিন জানুয়ারি প্রকাশিত দ্য ট্রিবিউনের একটি রিপোর্ট দেখা যাবে। 

এর থেকেই কার্যত স্পষ্ট বোঝা যায় যে পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুট শূন্য হওয়ার দাবিতে প্রচারিত গ্রাফিক কার্ডটি অর্ধসত্য এবং বিভ্রান্তিকর। 
 

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

পশ্চিমবঙ্গে স্কুলছুটের হার শূন্য শতাংশে নেমে এসেছে।

ফলাফল

কেন্দ্রের সাম্প্রতিক রিপোর্ট অনুযায়ী প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত স্কুলছুটের হার শূন্য হলেও মাধ্যমিক স্তরে স্কুলছুটের হার ১৭.৮৫ শতাংশ। যা উদ্বেগজনক।  

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement