

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে রাস্তার পাশে একটি বাঁশের তৈরি ঘরের সামনে দু’জন প্রবীণ ব্যক্তি ও একজন বৃদ্ধাকে পুলিশ কর্মীদের সামনে হাত জোড় করে এবং রাস্তায় শুয়ে কাকুতি-মিনতি করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কেবলমাত্র মুসলিম হওয়ার অপরাধে উদয়পুরে একশো বছরের পুরনো পারিবারিক বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধ ও তার পরিবারকে উচ্ছেদ করেছে উদয়পুর পুরনিগমের আধিকারিকরা।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “ভারতের উদয়পুর পৌর কর্পোরেশন শত বছরের পারিবারিক বাড়ি বয়স্ক মুসলিম ব্যক্তির কাছ থেকে জোড় করে উচ্ছেদ করছে। তাদের অপরাধ, তারা মুসলমান।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি কোনও বাড়ি উচ্ছেদের নয়। বরং অবৈধভাবে রাস্তার উপরে ছাগল পালন করার জন্য এক মুসলিম বৃদ্ধের ৫টি ছাগল আটক করেন পুরনিগমের আধিকারিকরা। যদিও পরবর্তীতে জরিমানা করে সেই ছাগল মালিককে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
সত্য উন্মোচন
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে চলতি বছরের ৯ ডিসেম্বর একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, রাজস্থানের উদয়পুরের মুখার্জি চকে অবৈধ দখল বিরোধী অভিযানের সময় একজন প্রবীণ মুসলিম ব্যক্তির ছাগল আটক করেছে পুরনিগম। বৃদ্ধ লোকটি আধিকারিকদের কাছে ছাগল না নিয়ে যাওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু আধিকারিকরা সেই অনুরোধ না শুনেই ছাগলগুলি নিয়ে যায়।
Udaipur, Rajasthan
— Team Rising Falcon (@TheRFTeam) December 9, 2025
The Municipal Corporation seized the goats of an elderly Muslim man.
The authorities carried out an anti-encroachment drive at Mukherjee Chowk and took away goats from the marketplace.
The elderly man pleaded and begged in front of them, yet they ignored him… pic.twitter.com/lZ04wwIZwz
পাশাপাশি, একাধিক এক্স হ্যান্ডেলে এবং ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও এই একই ভিডিও শেয়ার করে এই একই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যদিকে, গত ৮ ডিসেম্বর একটি ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই দাবিতে একই ভিডিও-র একটি বর্ধিত সংস্করণ পাওয়া যায়। সেই ভিডিওতে পুরনিগমের কর্মীদের রাস্তার পাশের ওই বাঁশের তৈরি ঘর থেকে ছাগল বের করতে দেখা যায়। তবে সেই ভিডিওতে কোনও ঘর থেকে কাউকে উচ্ছেদ করতে দেখা যায়নি।

এরপর এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে চলতি বছরের ৮ ডিসেম্বর উদয়পুর টাইমসে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ৮ ডিসেম্বর উদয়পুরের মুখার্জি চকে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুরনিগম। সেই সময় জনসাধারণের রাস্তা পরিষ্কার ও যান চলাচল সহজ করার লক্ষ্যে স্থানীয় সবজি বাজার থেকে দখল অপসারণ এবং কয়েকটি ছাগল আটক করে পুরনিগম নিগমের আধিকারিকরা। তবে প্রতিবেদনের কোথাও কোনও মুসলিম ব্যক্তির ১০০ বছরের পৈতৃক বাড়ি উচ্ছেদ সংক্রান্ত কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

তবে এই অভিযান সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এরপর আজতক ফ্যাক্ট চেকের তরফে উদয়পুর পুরনিগমের সিআই মঙ্গি লাল ডাঙ্গির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি আজতক ফ্যাক্ট চেক টিমকে জানান, “দীর্ঘদিন ধরে উদয়পুরের মুখার্জি চক এলাকায় অবৈধভাবে রাস্তা দখল করে রেখেছিলেন বেশকিছু মানুষ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পুরনিগমের তরফে তদেরকে সেই সব দখল সরিয়ে ফেলতে আগেই নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এর পরেও দখল না সারনো হলে গত ৮ ডিসেম্বর মুখার্জি চকে অভিযান চালান পুরনিগমের আধিকারিকরা। সেই সময় রাস্তার উপরে থাকা একাধিক দোকান উচ্ছেদ করা হয়।”
তিনি আরও জানান, “উচ্ছেদ চলাকালীন দেখা যায় এক ব্যক্তি অবৈধভাবে রাস্তার উপরে একটি শেড বানিয়ে ছাগল পালন করছেন। যার কারণে রাস্তা নোংরা হচ্ছে। তখন আধিকারিকরা ওই ব্যক্তির ৫টি ছাগল আটক করে। যদিও পরবর্তীতে জরিমানা করে ওই ব্যক্তিকে তার সব ছাগল ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তবে কোনও ধর্মীয় পরিচয় দেখে এই অভিযান করা হয়নি। বরং যারা অবৈধভাবে রাস্তাতে স্টল দিয়েছিল কিংবা ছাগল বা অন্যান্য পশু পালন করছিল তাদের সকলের বিরুদ্ধেই এই অভিযান চালানো হয়েছিল। তাদের মধ্যে হিন্দু ও মুসলিম সব ধর্মের মানুষ ছিলেন।”
এর থেকে পরিষ্কার হয়ে যায় যে, উদয়পুরে শত বছরের পুরনো পৈতৃক বাড়ি থেকে মুসলিম বৃদ্ধকে উচ্ছেদ করার দাবি বিভ্রান্তিকর এবং অসত্য।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কেবলমাত্র মুসলিম হওয়ার অপরাধে উদয়পুরে একশো বছরের পুরনো পারিবারিক বাড়ি থেকে এক বৃদ্ধকে উচ্ছেদ করেছে পুরনিগমের আধিকারিকরা।
ভাইরাল ভিডিওটি কোনও বাড়ি উচ্ছেদের নয়। বরং গত ৮ ডিসেম্বর উদয়পুরের মুখার্জি চকে অবৈধভাবে রাস্তার উপরে ছাগল পালন করার জন্য এক মুসলিম বৃদ্ধের ৫টি ছাগল আটক করেন পুরনিগমের আধিকারিকরা। পরর্বর্তীতে জরিমানার দিলে ছাগলগুলি ফিরিয়ে দেওয়া হয়।