ফ্যাক্ট চেক: উন্নাওয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে যুবতীর হাতে নিগৃহীত যুবক মুসলিম নয়, বরং হিন্দু

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িকতার রং নেই। ভিডিওর যুবক এবং যুবতী কেউই মুসলিম নয় বরং হিন্দু। পাশাপাশি ভিডিওর যুবকের নাম আলিম শেখ নয় বরং আকাশ বর্মা। 

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: উন্নাওয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে যুবতীর হাতে নিগৃহীত যুবক মুসলিম নয়, বরং হিন্দু

সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে প্রকাশ্য রাস্তায় এক যুবকের গেঞ্জির কলার ধরে একের পর এক চড় এবং জুতো দিয়ে মারতে দেখা যাচ্ছে এক যুবতীকে। পাশাপাশি যুবককে উদ্দেশ্য করে অশ্লীল ভাষায় একাধিক গালাগালি দিতে শোনা যাচ্ছে ওই যুবতীকে। অন্যদিকে গোটা ঘটনাটি দেখতে তাদের ঘিরে ধরেছেন বেশকিছু মানুষ। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, উন্নাওয়ে আলিম শেখ নামক এক মুসলিম যুবক এক হিন্দু যুবতীকে হয়রানি করায় ওই যুবতী তাকে প্রকাশ্য রাস্তায় বেধড়ক মারধর করেছে।

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন,“উন্নাওর আলিম শেক গত 10 দিন ধরে একটি মেয়ের নম্বর চেয়ে বিরক্ত করছিলো l সে জানতো না মেয়েরা কখনো কখনো দেবী দূর্গা, মা কালী অথবা চন্ডীর রূপ ধারণ করে।" অন্যদিকে এই একই ভিডিও শেয়ার করে অন্য একজন লিখেছেন, “উন্নাওর আলিম শেক গত 10 দিন ধরে একটি মেয়ের নম্বর চাইছিল।” দ্বিতীয় ভিডিওর কমেন্ট সেকশনে একজন লিখেছেন, “আসে পাশে হিন্দু হিজড়া গুলো কি করছে?? হিন্দু মহিলার সাথে এইরকম করছে এরা দাঁড়িয়ে দেখছে??” (সব বানান অপরিবর্তিত)  

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িকতার রং নেই। ভিডিওর যুবক এবং যুবতী কেউই মুসলিম নয় বরং হিন্দু। পাশাপাশি ভিডিওর যুবকের নাম আলিম শেখ নয় বরং আকাশ বর্মা। 

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ২০ জুলাই একটি এক্স হ্যান্ডেলে ই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “গঙ্গাঘাট কোতোয়ালি এলাকার পনি রোডের নীলম সুইট হাউস সংলগ্ন এলাকায় শ্লীলতাহানির অভিযোগে উন্নাওয়ের শুক্লাগঞ্জের এক যুবতী প্রকাশ্যে জুতো দিয়ে এক যুবককে মারধর করেছে। অভিযুক্ত যুবকের নাম আকাশ। সে ব্যাটারি চালিত রিকশায় জল সরবরাহ করে।” 

Advertisement

এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিওর স্ক্রিনশট-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায। সেই সব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার গঙ্গাঘাট থানার ব্রহ্মনগরের বাসিন্দা আকাশ নামক বছর ২০-র এক যুবক বিগত কয়েকদিন ধরে স্থানীয় এক কলেজ ছাত্রীকে উত্যক্ত করছিল। চলতি বছরের ১৯ জুলাই ওই যুবতী যখন অন্যান্য দিনের মতো কলেজ থেকে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন অভিযুক্ত আকাশ গঙ্গাঘাট থানার শুক্লাগঞ্জ বাজারের পনি রোডের নীলম সুইট সংলগ্ন এলাকায় ফের একবার তার পথ আটকে তাকে উত্যক্ত করে বলে অভিযোগ। তখন জবাবে ওই যুবতী আকাশের গেঞ্জির কলার ধরে একের পর এক চড় এবং জুতো দিয়ে মারতে থাকে। 

কিন্তু আমাদের অনুসন্ধানে এমন কোনও প্রতিবেদন বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি যেখানে এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক রং থাকার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এমনকি কোথাও অভিযুক্ত যুবকের নাম আলিম শেখ বলেও উল্লেখ করা হয়নি। বরং সব প্রতিবেদনেই যুবকের নাম আকাশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। যা থেকে সন্দেহ তৈরি হয় যে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে নও সাম্প্রদায়িকতার রং না থাকলেও থাকতে পারে।

এরপর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে আমরা গঙ্গাঘাট থানার এসএইচও প্রমোদ মিশ্রের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, "এই ঘটনার সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক রং নেই। ভাইরাল ভিডিওর যুবক এবং যুবতী উভয়ই হিন্দু। এবং অভিযুক্ত যুবকের নাম আলিম শেখ নয় বরং আকাশ বর্মা।" পাশাপশি বিষয়টি সম্পর্কে জানতে আজ তকের উন্নাও জেলা সাংবাদিক সুরজ সিংহের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনিও আমাদের এই একই তথ্য প্রদান করেন।

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শ্লীলতাহানির অভিযোগে যুবককে মারধের ভিডিও ভুয়ো ও মিথ্যে সাম্প্রদায়িক রং দিয়ে ছড়ানো হচ্ছে।

ফ্যাক্ট চেক

Facebook users

দাবি

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, উন্নাওয়ে আলিম শেখ নামক এক মুসলিম যুবক এক হিন্দু যুবতীকে হয়রানি করায় ওই যুবতী তাকে প্রকাশ্য রাস্তায় বেধড়ক মারধর করেছে।

ফলাফল

ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িকতার রং নেই। ভিডিওর যুবক এবং যুবতী কেউই মুসলিম নয় বরং হিন্দু। পাশাপাশি ভিডিওর যুবকের নাম আলিম শেখ নয় বরং আকাশ বর্মা।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement