
ইন্টারনেট এমন একটা মুক্তক্ষেত্র যেখানে প্রতিদিনই কিছু না কিছু ভাইরাল হয়ে থাকে। এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় অদ্ভূত দেখতে একটি উটের ছবি ভাইরাল হয়েছে। ছবিটি অদ্ভূত কারণ, অন্যান্য উটের মতো এই উটের ৪টি পা নেই। বরং মাত্র দুটি পা রয়েছে।
একাধিক সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ছবিটি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, "সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবই সম্ভব। ছবিটি তারই প্রমাণ।"
ভাইরাল এই দাবির আর্কাইভ এখানে ও এখানে দেখতে পাওয়া যাবে।
ইন্ডিয়া টুডের অ্যান্টি ফেক-নিউজ ওয়ার রুম (আফয়া) তদন্ত করে পেয়েছে যে এই ছবিটি আসলে ভুয়ো। ফটোশপের মাধ্যমে সম্পাদন করে এই ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করা হয়েছে।
আফয়া তদন্ত
বাস্তবেই এরকম কোনও দু-পা বিশিষ্ট উট রয়েছে কিনা, তা জানতে সবার প্রথম আমরা কি-ওয়ার্ড সার্চ করি। কারণ, এই ধরনের বিরল প্রাণীর অস্তিত্ব থাকলে তা নিয়ে কোনও না কোনও খবর প্রকাশ পাবেই। কিন্তু এই সংক্রান্ত কোনও খবর কোথাও প্রকাশ পায়নি। তাতেই আমাদের সন্দেহ গভীর হয়।
ছবিটির উৎস জানতে তখন আমরা গুগলের রিভার্স ইমেজ সার্চের আশ্রয় নেই। তখন আমাদের সামনে স্নুপের একটি প্রতিবেদন উঠে আসে। ২০১৮ সালে প্রকাশ পাওয়া এই প্রতিবেদনেও এই ছবিটি ব্যবহার করে দাবি করা হয় এটি আসল নয়। বরং ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করা হয়েছে। যদিও সেখানে ছবিটির উৎস সম্পর্কে কোনও তথ্য উল্লেখ করা ছিল না।
তখন পুরনায় আমরা ছবিটি বিং-এর মাধ্যমে রিভার্স সার্চ করি। এতেই নজরে আসে একটি ব্লগ পোস্ট। ২০১২ সালের মার্চ মাসে ড. রাজিক ককর নামে এক প্রাণী বিজ্ঞানী নিজের ওই ব্লগ পোস্টে উটের আসল ছবিটি প্রকাশ করেছিলেন। সেই ছবিতে কিন্তু উটের ৪টি পা-ই স্পষ্ট নজরে আসছিল। এবং ছবির বাকি অংশটুকুও হুবহু মিলে যাচ্ছিল। যার দ্বারা কার্যত প্রমাণ হয়ে যায় ভাইরাল ছবিটি সোশ্যাল মিডিয়া সম্পাদন করে ছাড়া হয়েছে।
ব্লগটি প্রকাশ পায় ২০১২ সালের ২৩ মার্চ। ওই ব্লগেই আমরা জানতে পারি, এই প্রাণী বিজ্ঞানে পিএইচডি করা এই গবেষক বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত। এক সাক্ষাৎকারে ড. রাজিক ককর জানান, ছবিগুলি তিনি নিজে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে মিটি থার রাজ্যে ২০০৮ সালে তুলেছিলেন। পরে কেউ ইচ্ছাকৃত ছবিটিকে এডিট করে একটি উটের দুটি পা মুছে দেয়।
সুতরাং, এ কথা স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে দু-পা বিশিষ্ট উটের ছবি আসলে ফটোশপের কারসাজি এবং সত্যি নয়।
একটি দু-পা বিশিষ্ট উটের ছবি শেয়ার করে বলা হয়েছে, সৃষ্টিকর্তা চাইলে সবই সম্ভব।
ছবিটি ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করা হয়েছে। আসল ছবিটি উটের যথারীতি ৪টি পা-ই রয়েছে। ছবিটি ২০০৮ সালে পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশে এক প্রাণী বিজ্ঞানী তুলেছিলেন।