ফ্যাক্ট চেক: ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন হামলার দৃশ্য দাবিতে ছড়াল রাশিয়ার পুরনো ভিডিও

আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্প। অবশেষে ইরান-ইজরায়েল সংঘর্ষে জড়িয়েই পড়ল আমেরিকা। স্থানীয় সময় শনিবার গভীর রাতে ইরানের ফোরদো, নাতানজ ও ইসফাহানে অবস্থিত তিনটি পারমাণবিক কেন্দ্রে হামলা চালিয়েছে মার্কিন বিমানবাহিনী। ইরানে হামলার পর হোয়াইট হাউসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বললেন, “এবার শান্তির সময়।” অন্যদিকে ইরানের তরফে ‘আমেরিকাকে আরও ভয়ংকর জবাব দেওয়া হবে’ বলে দাবি করা হয়েছে। 

আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হয়েছে, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন হামলা সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে কোনও একটি জায়গায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, সেটি ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন বিমান হামলার দৃশ্য। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “গতকাল রাতে, আমেরিকার বিমান হা*ম*লার পর, ইরানের গুরুত্বপূর্ণ পরমানবিক স্থাপনা ফোর্ডোর দৃশ্য।…”(সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি ইরানের ফোরদো পারমাণবিক কেন্দ্রের নয়। বরং সেটি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়ার টোরোপেটস শহরে অবস্থিত একটি অস্ত্র ও গোলাবারুদের গুদাম ইউক্রেনের ড্রোন হামলার দৃশ্য।
 

সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে

ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম মেট্রোতে এই একই ভিডিও-সহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিডিওটি ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার টোরোপেটস শহরে অবস্থিত একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ কেন্দ্রে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার দৃশ্য।

এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত একাধিক কিওয়ার্ড সার্চ করলে  ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্ক টাইমস-সহ একাধিক অন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে এই একই ভিডিওর একটি স্ক্রিনশট-সহ এই সংক্রান্ত একাধিক প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই সব প্রতিবেদনেও এই একই তথ্য উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে যে ভিডিওটি রাশিয়ার টোরোপেটস শহরের একটি অস্ত্র ডিপোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার দৃশ্য।

এইসব প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, টোরোপেটস শহরটি রাশিয়ার রাজধানী মস্কো থেকে  ৩৮০ কিমি উত্তর-পশ্চিমে এবং ইউক্রেন সীমান্ত থেকে প্রায় ৫০০ কিমি দূরে অবস্থিত। মূলত, ইউক্রেনের গোয়েন্দা ও বিশেষ অভিযান বাহিনীর নেতৃত্বে এই হামলাটি চালানো হয়। ইউক্রেনের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা দাবি করেন, রুশ অস্ত্র ডিপোটিতে ইস্কান্দার এবং তোচকা-ইউ ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি গ্লাইড বোমা ও আর্টিলারি শেল রাখা ছিল।
 

এর থেকে প্রমাণ হয় যে, ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রে মার্কিন হামলার দৃশ্য দাবি করে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে রাশিয়ার অস্ত্র ডিপোতে ইউক্রেনের ড্রোন হামলার পুরনো ভিডিও।