

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে। যেখানে ভ্যানের উপরে তৈরি রাস্তা পার্শ্ববর্তী একটি হোটেলে জেসিবি নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান চালাতে দেখা যাচ্ছে বেশকিছু পুলিশ কর্মীকে। পাশাপাশি, সেখানে উপস্থিত বেশকিছু ব্যক্তি ও মহিলা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছেন। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পুলিশ উত্তরপ্রদেশের এমস রোডে সাধারণ গরীব মানুষদের উপরে হামলা চালিয়ে তাদের খাবারের দোকান উচ্ছেদ করছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “উত্তরপ্রদেশের এমস রোডের ঘটনা,, যেখানে কিছু গরীব হিন্দু খাবার বিক্রী করে সংসার চালায় কিন্তু সেটাও চাইনা যোগী সরকার ,, আসলে দেশে হিন্দু বিপদে নাই সাধারণ গরীব মানুষ বিপদে।” (সব বানান অপরিবর্তিত)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের নয় এবং এর সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তারাখণ্ডের ঋষিকেশে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে চালানো উচ্ছেদ অভিযানের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল ভিডিও এবং দাবির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম সংগ্রহ করে সেগুলি গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ৪ অক্টোবর দ্য রেড ইঙ্ক মিডিয়ার অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। সেই পোস্টে উল্লেখ করা হয়েছে, “ঋষিকেশের এইমস গেটের সামনে শুরু বিবাদ। অবৈধ দখল অপসারণ করতে যাওয়া দলের সদস্যদের লক্ষ্য করে গরম রাজমা-ভাত ছুড়ে মারা হয়েছে।”

উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ২০২৫ সালের ১ অক্টোবর ভাইরাল ভিডিও-র স্ক্রিনশট-সহ জাগরণে এই সংক্রান্ত একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তারাখণ্ডের ঋষিকেশের শিবাজি নগর মোড়ে এইমসের সামনে ব্যারেজ রোড সংলগ্ন অবৈধ দখলমুক্ত করতে জেসিবি নিয়ে পৌঁছায় পৌর-কর্পোরেশন এবং ঋষিকেশ থানার পুলিশের একটি যৌথ দল। যদিও প্রশাসনের তরফে আগে থেকেই অবৈধ দখলকারীদের জায়গা খালি করে দেওয়ার জন্য সতর্কীকরণ দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও তাদের মধ্যে অনেকেই দখল অপসারণ করতে অস্বীকৃতি জানায়।
এরপর গত ৩০ সেপ্টেম্বর পৌর-কর্পোরেশনের সদস্য এবং পুলিশ কর্মীরা এইমসের সামনে তথা ব্যারেজ রোডের পার্শ্ববর্তী এলাকাটি দখলমুক্ত করতে আসলে অবৈধভাবে নির্মিত হোটেল ও খাবারের দোকানের মালিক ও কর্মীরা তাদের দেখে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। বিক্ষোভের এক পর্যয়ে তারা পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে জরিয়ে পড়ে। এমনকি বিক্ষোভকারীদের মধ্যে বেশ কয়েকজন মহিলা ও যুবক পুলিশ কর্মীদের গায়ে গরম রাজমা, ডাল ও তরকারি ছুড়ে মারে বলে অভিযোগ। তখন পুলিশ বাধ্য হয়ে হামলাকারীদের উপরে বল প্রয়োগের মাধ্যমে ঘটনাস্থলটি দখলমুক্ত করে এবং চার মহিলা ও এক যুবককে আটক করে। পাশাপাশি, পুলিশ দখলকারীদের পুনরায় দখল না করার নির্দেশ দেয়। তারা যদি তা না মানেন তবে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।

এর থেকে স্পষ্ট হয়ে যায় যে সাধারণ মানুষের দোকানে যোগী সরকারের পুলিশের হামলা দাবিতে ছড়াল উত্তারাখণ্ডের ভিডিও।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, যোগী আদিত্যনাথ সরকারের পুলিশ উত্তরপ্রদেশের এমস রোডে সাধারণ গরীব মানুষদের উপরে হামলা চালিয়ে তাদের খাবারের দোকান উচ্ছেদ করছে।
ভাইরাল ভিডিওটি উত্তরপ্রদেশের নয় এবং এর সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ সরকারের কোনও সম্পর্ক নেই। বরং এটি চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর উত্তারাখণ্ডের ঋষিকেশে অবৈধ দখলের বিরুদ্ধে প্রশাসনের তরফে চালানো উচ্ছেদ অভিযানের দৃশ্য।