ফ্যাক্ট চেক: মা কালীর মূর্তি ভাঙার ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের

সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মুসলিমদের তরফে বাংলাদেশের একটি কালী মন্দিরে প্রবেশ করে কালী মাতার মূর্তি ভাঙা হয়েছে।

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: মা কালীর মূর্তি ভাঙার ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়, পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের

রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে গত ২৫ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয় বাংলাদেশের সনাতনী জাগরণ জোটের মুখ চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। তাঁর গ্রেফতারের পর থেকে পুনরায় দেশটিতে হিন্দুদের ওপর হামলার খবর সামনে এসেছে। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হয়েছে।

ভিডিওটিতে একটি মন্দিরের ভিতরে বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে দুজনকে কালী মায়ের মূর্তির মাথা উপড়ে ফেলতে দেখা যাচ্ছে। পাশাপাশি সেখানে মা কালীর মূর্তির পাশে থাকা অন্য একটি মূর্তির মাথাও ধর থেকে আলাদা অবস্থায় রয়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, কালী মন্দিরটি বাংলাদেশে অবস্থিত এবং সেখানকার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষরা মন্দিরে ঢুকে কালী মায়ের মূর্তি ভেঙেছে। 

উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “দেখুন গতকাল বাংলাদেশে কিভাবে মুসলমানরা কালী মন্দিরে হা*ম"লা চালিয়ে মা কালীর মূর্তি সহ অন্যান্য দেবদেবীর মূর্তি ধ্বংস করে... এভাবে একের পর এক হিন্দু মন্দির ও প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলছে মুসলমান জি*হা*দিরা… উল্টোদিকে আমরা ভারতীয় হিন্দুরা বসে বসে মজা দেখছি আর ঘুমাচ্ছি কারণ ওগুলো তো বাংলাদেশের হচ্ছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত।)

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়  এবং এর সঙ্গে কোনও সাম্প্রদায়িক হামলার সম্পর্ক নেই। বরং ভিডিওটিতে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুরে আয়োজিত কালী পুজোর প্রতিমা প্রাক-বিসর্জনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

কীভাবে জানা গেল সত্য?

ভাইরাল ভিডিও ও দাবির সত্যতা জানতে সেটির কি-ফ্রেম সার্চ করলে চলতি বছরের ২৯ নভেম্বর একটি ফেসবুক প্রোফাইলে এই একই ভিডিওর একটি বর্ধিত সংস্করণ পাওয়া য়ায়। ভিজিওটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয় “সুলতানপুর কালী মাতা নিরঞ্জন।” আমরা চলতি বছরের ৩০ নভেম্বর একটি ইনস্টাগ্রাম প্রোফাইলেই ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত আরও একটি ভিডিও খুঁজে পাই। সেখানে ভিডিওটিকে সুলতানপুরে ১২ বছর অন্তর আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী কালী প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। 

Advertisement

এরপর উক্ত সূত্র ধরে পরবর্তী সার্চ করলে ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর ‘সুলতানপুর কিরনময়ী পাঠাগার’ নামক একটি ফেসবুক পেজে ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে সাদৃশ্যযুক্ত একটি ভিডিও-সহ একটি পোস্ট পাওয়া যায়। পেজটিতে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সেটি অবস্থিত একটি লাইব্রেরির অফিশিয়াল ফেসবুক হ্যান্ডেল। পোস্টের তথ্য অনুযায়ী, সেটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুর গ্রামে আয়োজিত কালী মাতার পুজোর প্রতিমা বিসর্জন করার আগের ভিডিও। পুজোটির আয়োজন করে সুলতানপুর কিরণময়ী পাঠাগার এবং সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দাদের যৌথ উদ্যোগে পুজোটির আয়োজন করা হয়। সেখানে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ঐতিহ্য মতে প্রতি ১২ বছর অন্তর একবার মা কালীর প্রতিমা বিসর্জন করা হয়।

সুলতানপুর কিরণময়ী পাঠাগারের ফেসবুক পেজে প্রাপ্ত ভিডিওগুলো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করলে এটা দেখা যায় যে ভাইরাল ভিডিওতে যে স্থানে মা কালীর মূর্তি ভাঙা হচ্ছে সেখানেই মা কালীকে পুজো করতে দেখা যাচ্ছে। নিচে উভয় ভিডিওর ফ্রেমের তুলনা দেখা যাবে।

ফ্যাক্ট চেক ১ম

এরপর এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে আমরা সুলতানপুর কিরণময়ী পাঠাগারের সদস্য দেবাশীষের যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের জানান, “ভাইরাল ভিডিওটিতে সুলতানপুর কালী মন্দিরের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। আমরা কালী মায়ের ১৩ ফুট উঁচু মূর্তির পুজো করি। এ বছরের পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছিস ২০২৪ সালের ২৬ নভেম্বর। ওই দিন মা কালীর বিসর্জন উপলক্ষ্যে ভক্তরা মন্দিরে উপস্থিত হয়ে ঐতিহ্য মেনে প্রথমে প্রতিমার বিভিন্ন অংশ ভাঙেন এবং পরে নিজেদের মত করে তা বিসর্জন করেন। মা কালীর প্রতিমাটি খুব উঁচু এবং ভারী হওয়ায় এবং মন্দিরের দরজাও অনেক ছোট হওয়ায় এই ভাবে বিসর্জন করা হয়। প্রতিমা ভাঙার একটি অন্যতম কারণ হল প্রতি বছর এই পুজো অনুষ্ঠিত হলেও এর প্রতিমা বিসর্জন করা হয় প্রতি ১২ বছরে একবার।”

এরপর এ বিষয়ে জানতে আমরা খণ্ডঘোষ থানার পুলিশের এসআই রাকেশ রোশনের সঙ্গেও কথা বলি। তিনি আমাদের জানান, “প্রতিমা ভেঙে তার বিসর্জন করা সুলতানপুর গ্রামে আয়োজিত এই কালী পুজোর বিশেষ ঐতিহ্য। প্রথমে মন্দিরের পুরোহিত কালী মায়ের প্রতিমার একটি অংশ ভেঙে তার বিসর্জন করেন। এর পরে ভক্তরা প্রতিমার বিভিন্ন অংশ নিয়ে যায় প্রথমে শোভাযাত্রা বের করেন এবং শেষে তা বিসর্জন দেন।"

আমরা এই মন্দিরটি গুগল ম্যাপেও খুঁজে পেয়েছি। ফেসবুক প্রাপ্ত সুলতানপুর কালী মন্দিরের ভিডিওর সঙ্গে গুগল ম্যাপে পাওয়া ছবিগুলির তুলনা করলে এটা নিশ্চিত হওয়া যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়। বরং পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার সুলতানপুর গ্রামের।

ফ্যাক্ট চেক ২য়

এর থেকে প্রমাণ হয় যে পশ্চিমবঙ্গের একটি গ্রামে কালী পুজোর বিসর্জনের ভিডিও বাংলাদেশর মন্দির ভাঙার দৃশ্য দাবি করে শেয়ার করা হচ্ছে। 

ফ্যাক্ট চেক

Facebook Users

দাবি

বাংলাদেশের মুসলিমরা একটি কালী মন্দিরে প্রবেশ করে প্রতিমা ভাঙচুর করছে।

ফলাফল

ভিডিওটির সঙ্গে বাংলাদেশের কোনও সম্পর্ক নেই। এখানে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুরে আয়োজিত কালী পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
Facebook Users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদেরসংখ্যা73 7000 7000উপর পাঠান.
আপনি আমাদেরfactcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
POST A COMMENT
Advertisement