scorecardresearch
 

ফ্যাক্ট চেক: জটিল রোগে আক্রান্ত এক চিতাবাঘের ভিডিয়ো বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে ছড়ানো হল সোশ্যাল মিডিয়ায়

যে প্রাণী সাধারণত হিংস্র, ও মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই পরিচিত, সেই প্রাণীকে দেখা যাচ্ছে মানুষের ভিড়ে মিশে চুপিসাড়ে হেঁটে যেতে। 

Advertisement
ফ্যাক্ট চেক: জটিল রোগে আক্রান্ত এক চিতাবাঘের ভিডিয়ো বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে ছড়ানো হল সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যাক্ট চেক: জটিল রোগে আক্রান্ত এক চিতাবাঘের ভিডিয়ো বিভ্রান্তিকর দাবির সঙ্গে ছড়ানো হল সোশ্যাল মিডিয়ায়

একদল মানুষকে পাশে নিয়ে তন্দ্রাচ্ছন্নভাবে হেঁটে যাওয়া একটি চিতাবাঘের ভিডিয়ো ইদানীং সোশ্য়াল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হচ্ছে। ভিডিয়োটিতে একটি চিতাবাঘকে পুরোপুরি স্বভাববিরুদ্ধ আচরণ করতে দেখা যাচ্ছে। যে প্রাণী সাধারণত হিংস্র, ও মানুষদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখার জন্যই পরিচিত, সেই প্রাণীকে দেখা যাচ্ছে মানুষের ভিড়ে মিশে চুপিসাড়ে হেঁটে যেতে। 

ভিডিয়োটি দেখলে মনে হবে, যেন ওই চিতাবাঘটি নিজের পরিচয় ভুলে গিয়েছে। এবং নিরীহ কোনও চতুষ্পদ প্রাণীর মতো নির্বিকারে হেঁটে চলেছে। কেউ বাঘটির পিঠে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কেউ আবার পারলে চিতাটির পিঠেই উঠে বসেন। কোনও ভয়-ডর নেই। অনেকেই ভিডিয়োটি শেয়ার করে দাবি করছেন যে, চিতাবাঘটি নাকি ভুলবশত দেশি মদ খেয়ে ফেলেছিল, তারপরই এই দশা। 

ভিডিয়োটি শেয়ার করে তাতে লেখা হয়েছে, "দেশী মদের ভাট্টিতে ঢুকে পড়ে, সেখানে ভুল করে দেশী মদ খেয়ে ফেলার পরে চিতা বাঘটার অবস্থা দেখ গ্রামবাসীরাই তাকে ধরে ধরে তার বনে দিয়ে আসছে।"

ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ভাইরাল ভিডিয়োটিতে চিতা বাঘটির এমন অবস্থা মদ খেয়ে হয়নি। বরং সে একটি বিরল রোগে আক্রান্ত। 

কীভাবে জানা গেল সত্যি? 

ভাইরাল ভিডিয়োটি থেকে স্ক্রিনশট নিয়ে তার রিভার্স ইমেজ সার্চ করার পর আমরা সবার প্রথম একটি NDTV-র টুইট খুঁজে পাই যেখানে একই ভিডিয়ো দেখা যাচ্ছিল। সেখানে বলা হয়, এই ঘটনাটি মধ্য প্রদেশের ইকলেরা গ্রামের ঘটনা। যেখানে একদল গ্রামবাসী একটি অসুস্থ চিতাবাঘকে নিয়ে মস্করায় মেতে ওঠেন। 

এই ঘটনাটি নিয়ে এবিপি নিউজ এবং দ্য নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের মতো সংবাদ মাধ্যমেও খবর ছাপা হয়। সেখানে লেখা হয়, ঘটনাটি ঘটেছে মধ্য প্রদেশের দেওয়াস জেলার ইকলেরা গ্রামে। প্রথমে স্থানীয় গ্রামবাসীরা কালিসিন্ধ নদীর তীরে জঙ্গলে একটি চিতাবাঘকে ঘোরাফেরা করতে দেখেন। এই বিষয়ে বন দফতরকে খবর দেওয়ার পর গ্রামের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে সেখানে যায়। কিন্তু, চিতাবাঘটি অসুস্থ থাকায় মানুষের ওপর আক্রমণ করেনি। একটি হিংস্র প্রাণীর এহেন শান্ত আচরণ দেখে লোকেরা তাকে বিরক্ত করতে শুরু করে। তবে খবর পেয়ে বন দফতর চিতাবাঘটিকে উদ্ধার করে সেখান থেকে নিয়ে যায়। 

খবর অনুযায়ী, গত ২৯ অগস্ট এই চিতাবাঘটিকে চিকিৎসার জন্য যখন ইন্দোরের একটি চিড়িয়াখানায় আনা হয়, তখন তার মধ্যে মৃগীরোগের উপসর্গের পাশাপাশি খিঁচুনি দেখা যাচ্ছিল এবং তার শরীরের তাপমাত্রাও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ছিল। চিতাবাঘটি দীর্ঘদিন যাবৎ অভুক্ত ছিল ও তার শরীরে জলের পরিমাণ ছিল বেশ কম। 

পরবর্তী সময়ে ইন্দোরের কমলা নেহেরু জুলজিক্যাল মিউজিয়ামে চিকিৎসা চলাকালীন দেখা যায়, এই চিতাবাঘের স্নায়ুজনিত ব্যাধি রয়েছে। সহজ কথায়, সে স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেছে। সে ভুলে গিয়েছে যে সে একটি চিতাবাঘ, যে কারণে তার আচরণে পরিবর্তন হয়েছে। এবং এই জন্য গ্রামের মানুষের ওপর হামলা করা তো দূরের কথা, সে তাদের দেখে গর্জন পর্যন্ত করেনি। 

বিষয়টি নিয়ে আজতক মধ্য প্রদেশের সাংবাদিক ধর্মেন্দ্র চিতাবাঘটির চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা ডা. উত্তম যাদবের সঙ্গেও কথা বলেন। প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে, ডক্টর যাদব বলেন যে, চিতাবাঘটি ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাস বা জলাতঙ্কের সংক্রমণের কারণে মস্তিষ্কের বিরল রোগে আক্রান্ত। দিনদুয়েক চিকিৎসার পর পরিস্থিতির সামান্য উন্নতি হলেও চিতাবাঘটি এখনও পুরোপুরি সুস্থ নয়। যে কারণে তাকে বর্তমানে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া জবলপুরের ফরেনসিক দল চিতাবাঘের রক্তের নমুনা নিয়েছে, তার রিপোর্ট পাওয়ার পরই বোঝা যাবে সে কী রোগে ভুগছে।  

ফ্যাক্ট চেক

facebook users

দাবি

অজান্তে দেশি মদ খেয়ে ফেলে চিতাবাঘটির এই অবস্থা হয়েছে। সে নিজেই নিজেকে চিনতে পারছে না।

ফলাফল

এই চিতাবাঘটি ক্যানাইন ডিস্টেম্পার ভাইরাস নামে একটি জটিল স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত। এর সঙ্গে মদ খাওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

ঝুট বোলে কাউয়া কাটে

যত বেশি কাক তত বেশি মিথ্যে

  • কাক: অর্ধসত্য
  • একাধিক কাক: বেশির ভাগ মিথ্যে
  • অনেক কাক: সম্পূর্ণ মিথ্যে
facebook users
আপনার কী মনে হচ্ছে কোনও ম্যাসেজ ভুয়ো ?
সত্যিটা জানতে আমাদের সংখ্যা 73 7000 7000 উপর পাঠান.
আপনি আমাদের factcheck@intoday.com এ ই-মেইল করুন
Advertisement