
সম্প্রতি অসম-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্যের সরকার অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করেছে। আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে ঘরের ভিতরে তৈরি বাঁশের সিলিং থেকে এক ব্যক্তিকে নামাতে দেখা যাচ্ছে এক পুলিশ কর্মীকে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, অসম পুলিশ ঘরের বাঁশের সিলিংয়ে লুকিয়ে থাকা এক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করেছে। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন,“আসাম পুলিশ ঘরের ভিতর বাঁশের তৈরি সিলিং এর মধ্যে লুকিয়ে থাকা বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করছে।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী নয় বরং পুলিশ নিশ্চিত করেছে সে অসমের মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত ১৬ এপ্রিল তাকে-সহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
ভাইরাল দাবি ও ভিডিওটির সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২সালের ১৭ এপ্রিল উত্তর-পূর্ব ভারতের উল্লেখযোগ্য সংবাদমাধ্যম নর্থ-ইস্ট লাইভের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওর শিরোনাম থেকে জানা যায়, সে একজন সাইবার অপরাধী। যাকে একটি ঘরের ভিতরে তৈরি বাঁশের সিলিং থেকে আটক করেছে পুলিশ।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ইন্ডিয়া টুডে নর্থ-ইস্টের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই তথ্য-সহ এই একই ভিডিও পাওয়া যায়। সেই ভিডিও প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গত ১৬ এপ্রিল মুম্বই পুলিশের সাইবার সেলের একটি টিম মরিগাঁও জেলা পুলিশের সহযোগিতায় অসমের মরিগাঁও জেলার লাহোরিঘাট এলাকায় একটি অভিযান চালায়। সেই অভিযানে সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। অনুসন্ধান চালালে অন্য একাধিক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই ৫ অভিযুক্ত এইচএসবিসি ব্যাঙ্কের ক্রেডিট কার্ড থেকে মোট ১ কোটি ২৭ লক্ষ টাকা জালিয়াতি করে। ধৃত অভিযুক্তরা হলো আমরাগুড়ির বাসিন্দা মহেবুর আসলাম রেহমান (২৮), লালি পাথারের বাসিন্দা আজারুল ইসলাম (২৭), হাতিয়ারা বোরির বাসিন্দা ইলিয়াস ইসলাম (২৫), তাতিপোরার বাসিন্দা আউব বকর সিদ্দিক রমজান আলী (৩৭), এবং মরিগাঁওয়ের করিমারির বাসিন্দা মইনুদ্দিন আহমেদ (২৬)।
তবে অনুসন্ধানে এমন কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি, যেখানে ধৃতদের অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হওয়ার কারণে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অর্থাৎ ধৃতরা অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী কিনা তা জানতে মরিগাঁও জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সমীরণ বৈশ্যের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাদের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, “ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তি-সহ ধৃত ৫ অভিযুক্তই মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। তাদের কেউই অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী নয়। এবং তাদেরকে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী হওয়ার জন্য নয় বরং সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছিল।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে অসমে অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীদের গ্রেফতারের দৃশ্য দাবি করে ছড়ানো হচ্ছে সাইবার অপরাধীদের ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, অসম পুলিশ ঘরের বাঁশের সিলিংয়ে লুকিয়ে থাকা এক অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসীকে আটক করেছে।
ভাইরাল ভিডিওর ব্যক্তিটি অবৈধ বাংলাদেশি অভিবাসী নয় বরং পুলিশ নিশ্চিত করেছে সে অসমের মরিগাঁও জেলার বাসিন্দা। সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে গত ১৬ এপ্রিল তাকে-সহ মোট ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।