
দুর্নীতি এবং সোশ্যাল মিডিয়া ব্যানের বিরুদ্ধে ‘জেন-জি’দের বিক্ষোভের জেরে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন নেপালের প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি। ইতিমধ্যে দেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়েছেন নেপালের সুপ্রিম কোর্টের প্রক্তন প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কী। আন্দোলনকারী ছাত্র-যুবদের অনুরোধেই দেশের প্রথাম মহিলা প্রধান বিচারপতির পর এবার প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী হলেন তিনি।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ ভাইরাল হয়েছে একটি ভিডিও। যেখানে বেশকিছু যুবক-যুবতীকে একটি ভবনের গেটের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা যাচ্ছে এবং তাদেরকে ব্যারিকেড আটকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। পাশাপাশি, বিক্ষোভকারীদের মধ্যে কয়েকজনকে পুলিশের ব্যারিকেড টপকে ভবনটির গেটে চড়তেও দেখা যাচ্ছে।
ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, নেপালের মতোই এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে দেশের জনগণ। উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “#মুদির সরকারি বাড়িতে হামলা করেছে #ছাত্রজনতা কিন্তু আটকে রাখার পুলিশের কোন আগ্রহী দেখলাম না।” (সব বানান অপরিবর্তিত)
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনের সামনে জনগণের বিক্ষোভের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। বরং ভাইরাল ভিডিওটি গত ১৪ জুলাই পুনের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার ফলাফলে ত্রুটির অভিযোগ তুলে আয়োজিত ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের দৃশ্য।
সত্য উন্মোচন হলো যেভাবে
প্রথমত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে কোনও প্রকার বিক্ষোভ বা হামলা হলে সেই সংক্রান্ত খবর অবশ্যই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হবে। কিন্তু আমরা আমাদের অনুসন্ধানে এমন কোনও তথ্য বা প্রতিবেদন খুঁজে পাইনি যা থেকে এর সত্যতা প্রমাণ হয়। তাই ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে সেটি থেকে একাধিক কিফ্রেম নিয়ে গুগলে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ২০২৫ সালের ১৪ জুলাই Lokmat-এর অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে এই একই ভিডিও-সহ একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেই প্রতিবেদনে প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওটি পুনের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের দৃশ্য।
এরপর উক্ত তথ্যের উপরে ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত পরবর্তী অনুসন্ধান চালালে ভাইরাল ভিডিও এবং এর স্ক্রিনশট-সহ একাধিক সংবাদমাধ্যমে এই সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেইসব প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি বছরের ১৪ জুলাই পুনের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের পরীক্ষার ফলাফলে ত্রুটি, গ্রেস মার্কের অনিয়ম এবং স্বচ্ছতার অভাবের অভিযোগ তুলে বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের বাইরে অবস্থান বিক্ষোভ প্রদর্শন করে NSUI, যুব কংগ্রেস এবং বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের পড়ুয়ারা।
এই বিক্ষোভ চলাকালীন কিছু পড়ুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের উপরে চড়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে প্রবেশ করে এবং তারা উপাচার্যের সঙ্গে তাৎক্ষণিক সাক্ষাতের দাবি জানায়। মূলত বিক্ষোভকারী ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছেফলাফল প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করা, ভুল ফলাফল সংশোধন করা, ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের জন্য পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া-সহ একাধিক দাবি জানায়। পাশাপাশি দ্রুত তাদের দাবি না মানা হলে আগামী দিনে আন্দোলন আরও তীব্রতর হবে বলে কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ারি দেয় পড়ুয়ারা।
এর থেকে প্রমাণ হয় যে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনের সামনে সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ দাবি করে শেয়ার করা হচ্ছে ভিন্ন ঘটনার ভিডিও।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, নেপালের মতোই এবার ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করছে দেশের জনগণ।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাসভবনের সামনে জনগণের বিক্ষোভের দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যে এবং ভিত্তিহীন। বরং ভাইরাল ভিডিওটি পুনের সাবিত্রীবাই ফুলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের বিক্ষোভের দৃশ্য।