
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও বেশ ভাইরাল হচ্ছে যেখানে কিছু লোককে একটি এলাকায় ভাঙচুর করতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওতে আরও দেখা যাচ্ছে, উন্মত্ত জনতা একটি প্যান্ডেলে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে। এবং যেখানে এই ভাঙচুর চলছে, সেখানে বড় বড় হাঁড়ি, ডেকচি এবং খাবারের প্লেট ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেখা রয়েছে, যেন সেখানে একটি বড় ভোজের আয়োজন করা হচ্ছিল।
ভিডিওটি পোস্ট করে দাবি করা হচ্ছে যে, রোজার মাস বলে মুসলিম জনতা একটি বিয়ের বাড়িতে হামলা চালিয়েছিল। ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "আরও বলো এক বিন্তে দুটি কুসুম। রোজার মাস বলে হিন্দু বিয়ে বাড়িতে হামলা করেছে তৌহিদি জনতা।"
কেউ কেউ আবার ভিডিওটি পোস্ট করে শুধুমাত্র লিখেছেন যে, "আরো বলো মোরা এক বিন্তে দুটি কুসুম।"
এ ক্ষেত্রে কাজি নজরুল ইসলামের লেখা "মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান" কবিতাটি ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে মুসলিমরা হিন্দুদের সম্পত্তির উপর হামলা চালাচ্ছে।
আজতক ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে এই ভিডিওটির সঙ্গে হিন্দু বিয়ে বাড়িতে বা হিন্দুদের সম্পত্তিতে হামলা চালানোর কোনও সম্পর্ক নেই। এটি বাংলাদেশের ঘটনা যেখানে একটি মাজারে অনুষ্ঠিত ওরস উৎসবে হামলা চালানো হয়েছিল।
যেভাবে জানা গেল সত্যি
ভাইরাল ভিডিওটির স্ক্রিনশটগুলি রিভার্স ইমেজ সার্চের মাধ্যমে অনুসন্ধান করা হলে আমরা 'হেরাবন পাক দরবার শরীফ' নামে একটি ফেসবুক পেজে এই ভিডিওটি খুঁজে পাই। এই দরবার শরীফটি বাংলাদেশের গাজীপুরে অবস্থিত মুসলমানদের একটি ধর্মীয় স্থান।
ভিডিওটি পোস্ট করে যা লেখা হয় তার অর্থ দাঁড়ায়, এখানে যে ঘটনা দেখা যাচ্ছে তা দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটা উপজেলায় ঘটেছে। স্থানীয় বিরাহিমপুর গ্রামে অবস্থিত রহিম শাহ ভান্ডারীর মাজার শরীফ কিছু মুসলমানরা ভাঙচুর করে এবং পরে বেশ কয়েকটি স্থানে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এই সূত্রগুলির সাহায্যে কিছু কিওয়ার্ড সার্চ করে ২৮ ফেব্রুয়ারি এবং ১ মার্চ প্রকাশিত বেশ কয়েকটি বাংলাদেশি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 'প্রথম আলো' এবং 'ঢাকা পোস্ট'-এর প্রতিবেদন অনুসারে, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় তিন দিনের মুসলিম উৎসব ওরসের প্রস্তুতি চলাকালীন একটি মাজারে হামলা ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটে। এই স্থানটি 'রহিম শাহ বাবা ভান্ডারী মাজার' নামে খ্যাত। এই উৎসবটি ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত চলার কথা ছিল এবং এর জন্য কয়েকটি প্যান্ডেল এবং একটি বড় মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল, যেগুলি ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
ভাঙচুর চালানো দুর্বৃত্তদের দাবি, প্রতি বছর ওরস উৎসবের নামে এই মাজারে গানবাজনা, মাদক সেবন এবং অশ্লীল কার্যকলাপ চলছে। এর বিরুদ্ধে আগেও প্রতিবাদ জানানো হয়েছিল। কিন্তু ওরসের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে দেখে আবার আক্রমণ শুরু হয়।
এরপর 'কালবেলা' নামের সংবাদ মাধ্যমের ইউটিউব চ্যানেলে এই বিষয়টি সম্পর্কে একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে পাই। এই ভিডিও-র ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের মাথায় একটি টিনের চালের ঘর এবং একটি সিমেন্টের পিলার দেখা যাচ্ছে যার উপরে একটি জলের ট্যাঙ্কি রয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওটি লক্ষ্য করলে এর প্রথম ফ্রেমেই ঠিক এই একই বাড়ি এবং এই সিমেন্টের পিলার দেখতে পাওয়া যার উপরে হুবহু একই রকমের একটি জলের ট্যাঙ্কি রয়েছে। উভয় ফ্রেম তুলনা করলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি এই একই ঘটনার।
এই সকল বিষয় থেকে একটা জিনিস প্রমাণ হয়ে যায় যে ভাইরাল ভিডিওটি সঙ্গে হিন্দুদের উপর বা হিন্দুদের সম্পত্তিতে হামলা চালানোর কোনও সম্পর্ক নেই।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে রমজান মাসে হিন্দু বিয়ে বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করছে মুসলিমরা।
এই ভিডিওটি বাংলাদেশের দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটা উপজেলার, যেখানে ২৮শে ফেব্রুয়ারি কিছু দুর্বৃত্ত একটি মাজারের উৎসবে হামলা চালানো হয়। এর সঙ্গে হিন্দুদের সম্পত্তিতে হামলা চালানোর কোনও সম্পর্ক নেই।