
গত বছর থেকেই মেইতেই ও কুকি এই দুই জনগোষ্ঠীর বিবাদের জেরে অশান্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য মণিপুর। তবে ফের একবার নতুন করে রাজ্যটি তপ্ত হয়ে উঠেছে সম্প্রতি কংপোকপি ও পশ্চিম ইম্ফলের দু’টি জায়গায় ড্রোন হামলাকে কেন্দ্র করে। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর দু’টি হামলাই হয়েছিল মেইতেই জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত এলাকায়। রাজ্য সরকার দাবি করেছে, কুকি জঙ্গিরাই ওই হামলা চালিয়েছে।
আর এই সার্বিক পরিস্থিতির মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে মণিপুর সংক্রান্ত একটি ভিডিও। যেখানে দেখা যাচ্ছে, কিছু মানুষ একটি হেলিকপ্টারকে লক্ষ্য করে মিসাইল ছুঁড়ে। আর মিসাইলের আঘাতে কপ্টারটি নিচে পড়ে যাচ্ছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, মণিপুরের বিক্ষুদ্ধ জনতা ভারতের তথা ভারতীয় সেনার হেলিকপ্টার মিসাইলের আঘাতে মাটিতে নামিয়েছে।
উদাহরণস্বরূপ, এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভাইরাল ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “সেভেন সিস্টার্সের অন্তর্ভুক্ত মণিপুরের স্বাধীনতাকামীরা ভারতীয় হেলিকপ্টার ভূপাতিত করেছে।” (ক্যাপশনের সব বানান অপরিবর্তিত।) একই দাবি-সহ আরও পোস্ট দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
ইন্ডিয়া টুডে ফ্যাক্ট চেক অনুসন্ধান করে দেখেছে যে, ভাইরাল ভিডিওটি মণিপুর তথা ভারতের কোনও স্থানের নয়। বরং সেটি মায়ানমারে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA)-র তরফে মায়ানমার সেনার হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার দৃশ্য।
কীভাবে জানা গেল সত্য?
প্রথমত ভাইরাল দাবি ও ভিডিওর সত্যতা জানতে আমরা সেটি থেকে একাধিক স্ক্রিনশট নিয়ে সেগুলির রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তখন আমরা গোটা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটে চলা যুদ্ধ সংক্রান্ত খবর প্রচার করা প্ল্যাটফর্ম ক্ল্যাশ রিপোর্টের এক্স হ্যান্ডেলে গত ৬ সেপ্টেম্বর হুবহু এই একই ভিডিও দেখতে পাই। ভিডিওটি শেয়ার করে সেখানে লেখা হয়েছে, ফুটেজটিতে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA)-র তরফে ম্যানপ্যাডসের সাহায্যে মায়ানমার সেনার জান্তার হেলিকপ্টারে গুলি করার দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ভিডিওটি পুরনো ঘটনার হতেও পারে, তবে সেটি আজ (৬ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত হয়েছে।
Heli down: Footage shows Kachin Independence Army (KIA) shooting down Myanmar's military junta helicopter with MANPADS
— Clash Report (@clashreport) September 6, 2024
Likely an earlier event, but footage was released today. pic.twitter.com/lwwB2szBpD
এরপর পরবর্তী সার্চে আমরা গত ৬ সেপ্টেম্বর মায়ানমারের সংবাদমাধ্যম “মায়ানমার নাও”-এর ফেসবুক পেজে এই একই ভিডিও-সহ একটি প্রতিবেদন দেখতে পাই। সেখানে বার্মিজ ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে, কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA)-র দ্বারা একটি মিলিটারি কাউন্সিল হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ভিডিও আজ (৬ সেপ্টেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হচ্ছে। KIA-র একটি ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানানো হয়েছে যে ভিডিওটি চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি মায়ানমারের নাফাও অঞ্চলে তোলা হয়। সেই সময় মায়ানমার সেনার তরফে হেলিকপ্টার স্থানীয় সামরিক ঘাঁটিতে খাদ্য বা রসদ সরবরাহ করা হচ্ছিল। তখন KIA-র সদস্যরা কাঁধে মাউন্ট করা অ্যান্টি এয়ারক্রাফ্ট মিসাইল দিয়ে সেটিকে ভূপাতিত করে।
এরপর আমরা উক্ত সূত্র ধরে পুনরায় সার্চ করলে গত ৭ সেপ্টেম্বর ভাইরাল ভিডিও-র ফ্রেমের সঙ্গে হুবহু মিল থাকা একাধিক স্ক্রিনশট-সহ বার্মিজ ভাষার সংবাদমাধ্যম পিপলস স্প্রিং-এ একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাই। সেখানে মায়নমার সেনা বাহিনী ও KIA-কে সূত্র হিসাবে উল্লেখ করে লেখা হয়েছে, “চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি মায়ানমারের লাইজা সংলগ্ন নাফাও এলাকায় কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (KIA) মায়ানমার সেনার একটি সামরিক কাউন্সিল সাপোর্ট হেলিকপ্টার ভূপাতিত করে। এই হামলায় একজন মেজর ও ২ জন ক্যাপ্টেনসহ প্রায় ৮ জন নিহত হন। সেনাবাহিনীর Mi-17 হেলিকপ্টার ভূপাতিত হওয়ার সেই ভিডিওটি পুনরায় গত ৬ সেপ্টেম্বর ভাইরাল হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর KIA-র তথ্য ও সম্প্রচার বিভাগের দায়িত্বে থাকা কর্ণেল ন বু’কে ভিডিওটিকে পুরোনো ঘটনার দৃশ্য বলে জানান।”
এর থেকে প্রমাণ হয় যে মায়ানমারে KIA-র তরফে হেলিকপ্টার ভূপাতিত করার ভিডিওকে মণিপুরের দৃশ্য দাবি করে ভাইরাল করা হচ্ছে।
মণিপুরের বিক্ষুদ্ধ জনতা ভারতের তথা ভারতীয় সেনার হেলিকপ্টার মিসাইলের আঘাতে মাটিতে নামিয়েছে।
ভাইরাল ভিডিওটি মণিপুর তথা ভারতের কোনও স্থানের নয় বরং সেটি মায়ানমারের।